দেশজুড়ে

১৪ দিন পর জনসম্মুখে মতিউরের স্ত্রী লায়লা

ছাগলকাণ্ডে সমালোচিত জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সদ্য সাবেক সদস্য মতিউর রহমানের স্ত্রী লায়লা কানিজ লাকীকে জনসম্মুখে দেখা গেছে। বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলা পরিষদ কার্যালয়ে যান তিনি।

দীর্ঘ ১৪ দিন পর তাকে জনসম্মুখে দেখা গেলো। এর আগে ১৩ জুন সবশেষ অফিস করেছিলেন তিনি।

বৃহস্পতিবার উপজেলা পরিষদ কার্যালয়ে এসএসসি পরীক্ষা এবং বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্টে সম্পর্কিত দুটি প্রস্তুতি সভায় অংশ নেন লায়লা কানিজ লাকী। ওই সময় সেখানে সাংবাদিকদের উপস্থিতি চাননি তিনি। তাই সাংবাদিকদের সভাকক্ষে যেতে দেওয়া হয়নি। সভায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ সরকারি বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তারা ছিলেন।

বৃহস্পতিবার রায়পুরা উপজেলা পরিষদ কার্যালয়ে দেখা গেছে লায়লা কানিজ লাকীকে

সভা শেষে দুপুর ১টার দিকে একটি কালো পাজেরো গাড়িতে করে উপজেলা পরিষদ থেকে বের হয়ে যান লায়লা কানিজ লাকী। তবে তখনো তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেননি। তবে ওই সময় লাকীকে বলতে শোনা যায়, ‘পাছে লোকে কত কিছুই বলে। তাতে আমার কোনো কিছু আসবে যাবে না।’

ছাগলকাণ্ডের পর থেকেই লায়লা কানিজ জনসম্মুখে আসেননি তিনি। বিভিন্ন মাধ্যমে যোগাযোগের চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি তাকে।

মতিউর রহমানের প্রথম স্ত্রী লায়লা কানিজ লাকী। তিনি নরসিংদী রায়পুরা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান।

আরও পড়ুন: 

মতিউর ও তার স্ত্রী-সন্তানদের ব্যাংক-বিও হিসাব স্থগিত গভর্নরের সঙ্গে মতিউরের ছবি, সমালোচনার ঝড় ফেসবুকে

সরকারি তিতুমীর কলেজের সহযোগী অধ্যাপকের চাকরি ছেড়ে ২০২২ সালে রাজনীতিতে এসেই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রায়পুরা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হন লায়লা কানিজ। আছেন জেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণবিষয়ক সম্পাদকের দায়িত্বে। ছাগলকাণ্ডর পর তার নামে থাকা অঢেল সম্পদের বিবরণ শুনে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন স্থানীয় ব্যক্তিরা।

এদিকে লাকীর নির্বাচনী হলফনামা থেকে জানা গেছে, বাৎসরিক আয় বাড়ি-অ্যাপার্টমেন্ট-দোকান ও অন্যান্য ভাড়া থেকে ৯ লাখ ৯০ হাজার, কৃষিখাত থেকে ১৮ লাখ, শেয়ার-সঞ্চয়পত্র-ব্যাংক আমানতের লভ্যাংশ থেকে ৩ লাখ ৮২ হাজার ৫০০, উপজেলা চেয়ারম্যানের সম্মানী বাবদ ১ লাখ ৬৩ হাজার ৮৭৫, ব্যাংক সুদ থেকে ১ লাখ ১৮ হাজার ৯৩৯ টাকা পান।

বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে তার জমা রয়েছে ৩ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। তার কৃষিজমির পরিমাণ ১৫৪ শতাংশ, তার অকৃষিজমির মধ্যে রয়েছে রাজউকে পাঁচ কাঠা, সাভারে সাড়ে ৮ কাঠা, গাজীপুরে ৫ কাঠা, গাজীপুরের পুবাইলে ৬ দশমিক ৬০ শতাংশ ও ২ দশমিক ৯০ শতাংশ, গাজীপুরের খিলগাঁওয়ে ৫ শতাংশ ও ৩৪ দশমিক ৫৫ শতাংশ, গাজীপুরের বাহাদুরপুরে ২৭ শতাংশ, গাজীপুরের মেঘদুবীতে ৬ দশমিক ৬০ শতাংশ, গাজীপুরের ধোপাপাড়ায় ১৭ শতাংশ, রায়পুরায় ৩৫ শতাংশ, ৩৫ শতাংশ ও ৩৩ শতাংশ, রায়পুরার মরজালে ১৩৩ শতাংশ, সোয়া ৫ শতাংশ, ৮ দশমিক ৭৫ শতাংশ, ২৬ দশমিক ২৫ শতাংশ ও ৪৫ শতাংশ, শিবপুরে ২৭ শতাংশ ও ১৬ দশমিক ১৮ শতাংশ, শিবপুরের যোশরে সাড়ে ৪৪ শতাংশ, নাটোরের সিংড়ায় ১ একর ৬৬ শতাংশ।

আরও পড়ুন: 

মতিউর, তার স্ত্রী ও ছেলের বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দ্বিতীয় স্ত্রীর পর দেশ ছাড়লেন মতিউর

এছাড়া নরসিংদীর মরজালে মতিউর রহমানের স্ত্রী লায়লা কানিজ লাকীর নামে ৪০ বিঘা জমির ওপর ‘ওয়ান্ডার পার্ক’ নামে একটি পার্ক রয়েছে। এখানেই শেষ নয়, মরজালে ৪ কানি জমির ওপর আলিশান বাড়ি রয়েছে লাকীর নামে।

ময়মনসিংহের ভালুকায় মতিউর রহমানের রয়েছে জুতার কারখানা। নাটোরের সিংরায় ২০ বিঘা জমি রয়েছে। এছাড়া গাড়ীপুরের পুবাইলে একাধিক রিসোটসহ জমি রয়েছে।

শুধুমাত্র রাজধানীর বসুন্ধরাতেই মতিউর, তার স্ত্রী সন্তান, আত্মীয়দের নামে এবং বেনামে ৪০টি প্লট আছে। গুলশান-২ এ শাহবুদ্দিন পার্কের উল্টোদিকে আনোয়ার ল্যান্ডমার্কের একটি ভবনে চারটি ফ্ল্যাট আছে। ফ্ল্যাটগুলোর মূল্য প্রতিটি ৫ কোটি টাকার নিচে নয়। গুলশানের শান্তা প্রোপার্টিজের একটি ভবনে আটটি ফ্ল্যাট।

সজ্ঞিত সাহা/জেডএইচ/

সঞ্জিত সাহা/জেডএইচ/জেআইএম