সরকারি চাকরিতে কোটাব্যবস্থা বাতিল করে ২০১৮ সালে সরকারের জারি করা পরিপত্র পুনর্বহালের দাবিতে দেশজুড়ে সড়ক অবরোধ, বিক্ষোভ মিছিল করছেন শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের এ আন্দোলনের প্রভাব পড়েছে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যে। কমে গেছে বেচাকেনা। ঢাকার অধিকাংশ মার্কেট ও শপিংমলে ক্রেতার আনাগোনা খুবই কম। অনেক প্রতিষ্ঠান ঠিকভাবে তাদের পণ্য সরবরাহ করতে পারছে না। বাড়ছে ক্ষতি।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, কয়েকদিনের আন্দোলনে ক্ষতি পরিমাণ বাড়ছেই। আন্দোলনের দ্রুত সমাধান কামনা করছি।
ঢাকার আজিজ সুপার মার্কেটের মেলা ব্র্যান্ডের স্বত্বাধিকারী শফিউল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, আন্দোলনে বেচাকেনা বলতে গেলে শূন্যের কোঠায় নেমেছে। এখানে অধিকাংশ সময় রাস্তা অবরোধ, ভয়েও মার্কেটে আসছেন না অনেকে। এ এলাকায় বেচাকেনার পরিবেশ এখন নেই।
আরও পড়ুন
শুধু শফিউল নয়, এ মার্কেটসহ পল্টন, গুলিস্তান, শাহবাগ, এলিফ্যান্ট রোড, নিউমার্কেট ও আশপাশের দোকানিদের চিত্র একই। এসব এলাকায় দেখা যায়, মার্কেটের অধিকাংশ দোকানে ক্রেতা নেই। বিক্রি কমে যাওয়ায় হতাশ ব্যবসায়ীরা। দিন দিন তাদের লোকসান বাড়ছে।
পল্টন এলাকায় স্টেশনারিপণ্য বিক্রি করেন খালেক হোসেন। তিনি বলেন, বিক্রি কমেছে। যে পরিস্থিতি তাতে ব্যবসায় লালবাতি জ্বলতে বাকি নেই।
সায়েন্সল্যাব মোড়ে পাঞ্জাবি দোকানের বিক্রেতা আব্দুস সালাম বলেন, দিনে ১০ হাজার টাকা বিক্রি হতো। গত কয়েকদিন দিনে দুই হাজার টাকাই বিক্রি হয়নি। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের কারণ ক্রেতা একেবারে নেই বললেই চলে।
নিউমার্কেটের ব্যবসায়ী কাইয়ুম বলেন, বিক্রি একেবারেই নেই। গত কয়েকদিন ধরে একই অবস্থা চলছে। দোকানের কর্মচারীর বেতন উঠছে না। শুধু ওই এলাকা নয়, সার্বিকভাবে ঢাকায় মানুষের আনাগোনা কমেছে। প্রয়োজন ছাড়া কেউ বাসার বাইরে বের হচ্ছেন না।
মালিবাগ মোড়ে কনফেকশনারি দোকানের মালিক ফিরোজ আহমেদ বলেন, আন্দোলনের প্রভাবে মালিবাগেও কমেছে বিক্রি। মানুষের আনাগোনা কম। আগে প্রতিদিন সাত থেকে নয় হাজার টাকা কেনাবেচা হতো, এখন তা তিন-চার হাজারে নেমেছে।
আরও পড়ুন
‘ক্রেতাশূন্য’ নিউমার্কেটে বিক্রেতাদের অলস সময় পার কোটাবিরোধী আন্দোলনে স্থবির ঢাকা, ভোগান্তি চরমে কোটা বাতিলের আন্দোলন করে জনদুর্ভোগ বাড়ানোর যৌক্তিকতা নেইঢাকার ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রাণকেন্দ্র পুরান ঢাকার মৌলভীবাজার, চকবাজার, নবাবপুর, ইংলিশ রোড, বাদামতলী, বাবুবাজার, ওয়াইজঘাট আর সোয়ারিঘাট। কাঁচামাল, ইলেকট্রনিক্স পণ্যসহ প্রায় সবধরনের পণ্যের একটি বড় অংশই সরবরাহ হয় এখানকার আড়তগুলো থেকে। যা সারাদেশের দোকান, কারখানায় কাঁচামালের জোগান দেয়।
বৃহস্পতিবার (১১ জুলাই) দুপুরে সরেজমিনে দেখা যায়, রাজধানীর অন্যান্য এলাকার মতো এখানের চিত্রও একই। নবাবপুর থেকে ইংলিশ রোডে নেই সেই আগের ভিড়। ক্রেতাশূন্য বাজারে অনেকটা অলস সময় পার করছেন বিক্রেতারা।
নবাবপুরের হার্ডওয়ার ব্যবসায়ী লাল মিয়া বলেন, ব্যবসায় ধস নেমেছে। ভয়ে ঢাকার বাইরে থেকে লোকজন আসছেন না। ফলে বড় কোনো অর্ডার নেই। টেলিফোনে কিছু অর্ডার আছে। ক্ষতির শঙ্কায় তা গাড়িতে পাঠানো যাচ্ছে না।
জানতে চাইলে মৌলভীবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি বশির উদ্দিন জাগো নিউজকে বলেন, আমাদের কেনাবেচা একদম কমে গেছে। সারাদেশের ভোগ্যপণ্য এখান থেকে সরবরাহ হয়। বাইরের জেলার ক্রেতা আসে। এখন সব প্রায় বন্ধ। কিছু অর্ডার থাকলেও ডেলিভারি দেওয়া যাচ্ছে না। বিক্রি প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ কমে গেছে। এখানে প্রতিদিন হাজার কোটি টাকার বেচাকেনা হয়। তাহলে ভাবুন কত ক্ষতি হচ্ছে?
কমেছে মুদি দোকানের বিক্রিও। আন্দোলনের কারণে শাহবাগ ও পল্টনসহ এর আশপাশের এলাকায় অসংখ্য দোকান বন্ধ রয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির মহাসচিব জহিরুল হক ভূঁইয়া বলেন, প্রায় হাজারখানেক দোকান খোলা যাচ্ছে না। অনেক দোকান ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। ফুটপাতে ছোট ব্যবসায়ীরা বসতে পারছেন না।
তিনি বলেন, বিশেষ করে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। মানুষ প্রয়োজন ছাড়া বাসার বাইরে বের হচ্ছেন না। সবমিলে এ আন্দোলনে ভুক্তভোগী ব্যবসায়ীরা। এটা ব্যবসায়ীদের কাম্য নয়।আরও পড়ুন
ঢাবিতে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপে হাতাহাতি কোটাবিরোধী আন্দোলনকে সরকারবিরোধী বানানোর চেষ্টায় বিএনপিব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই অনেক দিন আগে থেকেই বলে আসছে, একদিনের হরতাল-অবরোধে ব্যবসা-বাণিজ্যে হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়। এ ধরনের আন্দোলনেও ক্ষতির পরিমাণ প্রায় কাছাকাছি হবে।
এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সহ-সভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু জাগো নিউজকে বলেন, এ আন্দোলনে মানুষের সাধারণ জীবনযাপন ও চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। বায়াররা (বিদেশি ক্রেতা) আসছেন না। বেশি দিন এভাবে চলা ঠিক নয়। ব্যবসায়ীরা শান্তিপূর্ণ পরিবেশ চায়।
এনএইচ/এমএএইচ/জেআইএম