মেহেরপুরের মুজিবনগর স্মৃতি কমপ্লেক্সে ভাঙচুর করেছে দুর্বৃত্তরা। সেখানে মহান মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে নির্মিত ৬ শতাধিক ভাস্কর্য ভেঙে ফেলা হয়। সোমবার (৫ আগস্ট) বিকেল ৫টার দিকে এ তাণ্ডব চালানো হয়।
সরেজমিনে দেখা যায়, কমপ্লেক্সের মূল ফটকে কোনো নিরাপত্তা কর্মী নেই। অন্যসময় সেখানে চারজন করে আনসার সদস্য মোতায়েন থাকে। দর্শনার্থীদের পরিচয় নিশ্চিত হয়ে সেখানের প্রবেশ করতে দেওয়া হয়। মূল ফটক থেকে দুটি সড়ক গেছে। সোজা সড়কটি শহীদ স্মৃতিসৌধে গেছে। বামদিকের সড়কটি গেছে স্মৃতি কমপ্লেক্সে। ওই সড়কে রয়েছে পর্যটন মোটেল, মসজিদ, পর্যটন আবাসিক স্থাপনা। সেগুলো পেরিয়ে স্মৃতি কমপ্লেক্স। কমপ্লেক্সের সামনে সারি সারি ভাস্কর্য যেগুলো মহান মুক্তিযুদ্ধের গুরুত্বপূর্ণ ভাস্কর্য হিসাবে বিবেচিত হয়ে আসছে। সেগুলো ভেঙে ফেলা হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্র জানায়, ওই দিন বিকেলে কয়েকশ যুবক হাতে রড, বাঁশের লাঠি, হাতুড়ি নিয়ে স্মৃতি কমপ্লেক্সে হামলা করে। প্রথম তারা বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যটির মাথা ভেঙে ফেলা হয়।
মুজিবনগর আম্রকাননের অস্থায়ী খেলনা সামগ্রী বিক্রেতা নাজমুল হোসেন জানান, যখন তারা কমপ্লেক্সে প্রবেশ করে তখন আম্রকাননের নিচে থাকা দোকানিরা পালিয়ে যান। পুলিশ ও আনসার সদস্যরা দ্রুত সরে পড়েন। এ সুযোগে তারা ধ্বংসযজ্ঞ চালায়। শহীদ স্মৃতিসৌধের মূল গেটটি ছিল স্টিলের সেটিও তারা ভেঙে ফেলে।
মুজিবনগর কমপ্লেক্সে দায়িত্বে থাকা আনসার সদস্য হুমায়ুন আহমেদ বলেন, প্রায় ৬০০ ছোট-বড় ভাস্কর্যের মধ্যে অধিকাংশ ভেঙে ফেলা হয়েছে। এ ভাস্কর্যগুলো প্রধান আকর্ষণ ছিল পর্যটকদের। প্রতিদিন কয়েক হাজার দর্শনার্থী এখানে আসতেন। পিকনিক স্পটে থেকে হেঁটে আসতেন দর্শনার্থীরা।
মুজিবনগর সরকারকে গার্ড অব অনার দেওয়া আনসার সদস্য সিরাজ উদ্দিন জানান, ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল আম্রকাননে শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশে স্বাধীন বাংলাদেশ সরকারের শপথ গ্রহণের মাধ্যমে গঠিত হয় মুজিবনগর সরকার। এ সরকারকে গার্ড অব অনার দেওয়া সদস্য হওয়ায় অনেক দর্শনার্থী প্রতিবছর মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সম্পর্কে জানতে আসতেন। দেশের মানুষ মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও ভাস্কর্য দেখার জন্য এখানে আসতেন। এখন আর আসবেন না। ১২ জন আনসার সদস্যদের মধ্যে ১০ জন মারা গেছেন। আমাদের এ দুজনকে এ দৃশ্য দেখতে হবে কখনও ভাবিনি।
কমপ্লেক্সে দায়িত্বরত টুরিস্ট পুলিশের সদস্য আবজাল শেখ বলেন, বিকেল ৫টার দিকে শতাধিক যুবক কমপ্লেক্সে শুধুমাত্র বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙচুর করে চলে যায়। পরে রাতের দিকে তারা আবার আসে। কয়েক দফায় তারা ভাঙচুর চালায় স্মৃতি কমপ্লেক্স। সবশেষে আনসার ক্যাম্পে এসে আক্রমণ করে অফিস ভাঙচুর করে এবং কন্ট্রোল রুম থেকে সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংরক্ষণের হার্ডডিক্সটি খুলে নিয়ে যায়।
মুজিবনগর স্মৃতি কমপ্লেক্সে স্থাপিত আনসার ক্যাম্পের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুবেদার রবিউল ইসলাম বলেন, যখন দুর্বৃত্তরা মুজিবনগর স্মৃতি কমপ্লেক্স হামলা শুরু করে তখন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মুঠোফোনে নির্দেশনা চাওয়া হয়েছিল। তিনি কোনো নির্দেশনা দিতে পারেননি। এ কারণে আনসার সদস্যরা নিজের ও অস্ত্রের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ব্যারাকে অবস্থান নেয়।
এ বিষয়ে পুলিশ সুপার এসএম নাজমুল হক জানান, ওই সময় পুলিশ সদস্যরা চরমভাবে নিরাপত্তাহীনতায় ছিলেন। এ সুযোগে দুর্বৃত্তরা ঐতিহাসিক মুজিবনগরে হামলা চালায়। পুলিশের কার্যক্রম মোটামুটি শুরু করা হয়েছে। পুলিশের সব সদস্য কাজে যোগ দিলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আসিফ ইকবাল/আরএইচ/জিকেএস