দেশজুড়ে

৯ বছর শেকলে বন্দি সাবিহা

জীবন মানে যুদ্ধ। কিন্তু এ কেমন যুদ্ধ। দীর্ঘ নয় বছর শেকলে নিজেকে বেঁধে যুদ্ধ করে যাচ্ছেন মানসিক ভারসাম্যহীন সাবিহা। জীবন যেন তার কাছে এখন বোঝা হয়ে গেছে। কবে এ জীবনের শেষ হবে। নয় বছর ধরে শেকলে বাঁধা ঠাকুরগাওয়ের পীরগঞ্জ উপজেলার কুশিরগাওয়ের সাবিহা বেগম। দীর্ঘদিন ধরে স্বামীর নির্যাতনে মানসিক ভারসাম্যহীন। কিন্তু গরীব বাবার পক্ষে তার উন্নত চিকিৎসা করা সম্ভব না হওয়ায় সাবিহা এখন পুরোপুরি পাগল।শেকলে বাঁধা এই জীবনের শুরু প্রায় নয় বছর আগে। পাগলামি করে কখন কার, কোন ক্ষতি করে সাবিহা, সেই ভয়ে বেঁধে রাখা হয় তাকে। কিন্তু নিজ সন্তানকে এভাবে কষ্ট দিতে মন চায়না মায়ের।টানাটানির সংসারে দিনমজুর বাবা নবম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়ায় করায় সাবিহাকে। ১৫ বছর বয়সে এক আত্মীয়ের সঙ্গে বিয়ে দেন বাবা-মা। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে স্বামীর মানসিক ও শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়ে মানসিক রোগী হয়ে যান সাবিহা। এরপর তাকে বাবার বাড়িতে পাঠিয়ে দেয় স্বামী। আর সেখানে কোলজুড়ে আসে ছেলে মাখদুম। কিন্তু ততদিন সাবিহা পুরোপুরি মানসিক ভারসাম্যহীন।সাবিহার মা আলেয়া বেগম জানান, বিয়ের তিন মাস পরই পারিবারিক কলহের কারণে স্বামীর মানসিক ও শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়ে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন তার মেয়ে। এরপর তাকে বাবার বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়া হয়। বাবার বাড়িতে আসার পর কয়েক মাস পর সাবিহা এক ছেলে সন্তানের জন্ম দেন। এরপরও কোনো খবর রাখেননি স্বামী মিজানুর রহমান। গরিব মা বাবার পরিবারেই নতুন জীবন শুরু হয় মা-ছেলের। তার মা-বাবা দুইজনই দিনমজুরের কাজ করতেন। কিন্তু হঠাৎ করেই বাবা ইমাম উদ্দিন মারা গেলে অন্ধকার নামে মা-মেয়ের জীবনে। এখন ৬৯ বছর বয়সী বৃদ্ধ মা কখনো অন্যের ক্ষেতে আবার কখনো অন্যের বাড়িতে কাজ করে মেয়ে ও নাতির খরচ জোগান দিয়ে আসছেন। তার সঙ্গে চলছে মেয়ের চিকিৎসা। তবুও সুস্থতার লক্ষণ নেই।তিনি আরো বলেন, `বেঁধে না রাখলে মেয়ে অন্যের বাড়িতে গিয়ে ভাঙচুর করে। মানুষকে ইট ছুঁড়ে মারে। আমাকে অনেক সময় মারধর করে। এজন্যই বন্দি করে রাখা হয়েছে।`সাবিহার ছেলে মাখদুম রহমান এখন সপ্তম শ্রেণিতে পড়ছে পাশের ভোমরাদহ উচ্চ বিদ্যালয়ে। মাখদুম বলে, বাবা তার কোনো খোঁজ নেয় না। নানি খুব কষ্ট করে ওকে পড়ান। মাকে যদি ভালো ডাক্তার দেখানো যেত তাহলে মা সুস্থ হয়ে যেত। কিন্তু টাকার জন্যে সেটাও করা সম্ভব হচ্ছে না। এছাড়া মাখদুম সব সময় ভয়ে থাকে। টাকার অভাবে লেখাপড়া বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম বলেও জানায় সে।ভোমরাদহ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সিরাজুল ইসলাম জানান, এতোদিন আমরা মাখদুম ও তার মায়ের বিষয়ে অবগত ছিলাম না। খবরটি পাওয়ার পর মাখদুমের স্কুলে বিনা বেতনে পড়ার সুযোগ করে দেয়া হয়েছে। স্কুল থেকে সকল শিক্ষার্থী আর্থিক সহযোগিতা তার মায়ের চিকিৎসার জন্য দেয়া হবে।স্থানীয় চেয়ারম্যান মো. হিটলার জানান, ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ওই পরিবারকে মাঝে মধ্যে সহযোগিতা করা হবে। কেউ যদি তার চিকিৎসার ভার নেয় তাহলে সাবিহা অবশ্যই সুস্থ হয়ে উঠবে।এ ব্যাপারে ঠাকুরগাঁও সিভিল সার্জন নজরুল ইসলাম জানান, নিয়মিত পরিচর্যা, ভালো খাওয়াসহ উন্নত চিকিৎসা দেয়া গেলে সাবিহাকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনা সম্ভব।  রবিউল এহ্সান রিপন/এআরএ/এমএস