মুফতি আব্দুল্লাহ আমান
Advertisement
হজ ইসলামের অন্যতম মৌলিক স্তম্ভ। এটি এমন এক মহান ইবাদত, যার মাধ্যমে একজন মুসলমান আল্লাহ তাআলার প্রতি সর্বোচ্চ ভালোবাসা, আনুগত্য ও আত্মনিবেদন প্রকাশ করেন। হজ শুধু ভৌগোলিক সফর নয়, এটি একটি আত্মিক বিপ্লব, নৈতিক পরিশুদ্ধি ও মহান শিক্ষার বিদ্যালয়।
হজযাত্রার সূচনা হয় নিয়ত এবং ইহরাম পরিধানের মাধ্যমে। একজন হজযাত্রী যখন ‘লাব্বাইকা আল্লাহুম্মা লাব্বাইক’ বলে তার হজের আমল শুরু করেন, তখন থেকেই তিনি নিজের পার্থিব পরিচয়, আরাম-আয়েশ, সাজসজ্জা, পদমর্যাদা ইত্যাদি সবকিছু পেছনে ফেলে শুধু আল্লাহর ডাকে সাড়া দেওয়ার জন্য নিজেকে প্রস্তুত করেন। ইহরামের সাদা দুটি কাপড় আল্লাহর সামনে সব মানুষকে সমান করে দেয়—কেউ কারো চেয়ে বড় নয়, কেউ ছোট নয়, সবাই শুধু মহামহিম দয়াময় আল্লাহর দাস ও বান্দা।
হজের প্রতিটি কাজের পেছনে রয়েছে আল্লাহর নেক বান্দাদের স্মৃতি, আল্লাহর আনুগত্য ও ত্যাগের শিক্ষা। যেমন, সাফা ও মারওয়ার মাঝের দৌড় আমাদের মনে করিয়ে দেয় হজরত হাজেরার (আ.) কষ্ট ও ধৈর্যের কথা। তৃষ্ণার্ত সন্তান ইসমাইলের জন্য পানির খোঁজে তিনি ছুটে বেড়িয়েছিলেন ধু ধু মরুভূমিতে। তার ওই দৌড় আজ হজের একটি অপরিহার্য অংশে পরিণত হয়েছে।
Advertisement
জামারায় শয়তানকে পাথর নিক্ষেপ ও কোরবানির সাথে জড়িয়ে আছে নবি ইবরাহিমের (আ.) স্মৃতি, তার ত্যাগ, তার দৃঢ়তা, আল্লাহর প্রতি তার ভালোবাসা ও আনুগত্য। ইবরাহিম (আ.) যখন নিজের প্রাণপ্রিয় ছেলে ইসমাইলকে কোরবানি করতে নিয়ে যাচ্ছিলেন, তখন শয়তান কুমন্ত্রণা দেওয়ার চেষ্টা করে এবং তিনি শয়তানের দিকে পাথর ছুঁড়ে মারেন। নিজের সন্তানকে কোরবানির জন্য শুইয়ে ছুরিও চালান। কিন্তু আল্লাহ তাআলার নির্দেশে তার সন্তানের বদলে একটি পশু কোরবানি হয়। হজ পালনকারী হজরত ইবরাহিমের (আ.) ইমান ও আনুগত্যের এই স্মৃতি হৃদয়ে ধারণ করে শয়তানকে প্রতীকীভাবে পাথর নিক্ষেপ করেন। পশু কোরবানি করেন।
আরাফার ময়দানে উপস্থিত হওয়া, দিনের অধিকাংশ সময় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আল্লাহর কাছে কান্নাকাটি করা, দোয়া করা—এসব কিছু হজযাত্রীকে মনে করিয়ে দেয় পরকাল, হাশরের ময়দান এবং একমাত্র আল্লাহর কাছেই সারা জীবনের হিসাব দিতে হবে—এই গুরুত্বপূর্ণ সত্যটি।
বর্তমানে অনেকে হজ পালন করতে গিয়ে বেশি ব্যস্ত থাকেন ছবি তোলা, ভিডিও করা ইত্যাদি অনর্থক কাজে। হজের আধ্যাত্মিক গভীরতা অনুধাবন করেন না, ছুঁতে পারেন না যা দুঃখজনক।
যারা হজ পালন করতে গিয়েছেন, যাচ্ছেন বা যাবেন, সবার উচিত হজের আমলগুলোর ইতিহাস, স্মৃতি ও তাৎপর্য সম্পর্কে জানা এবং তা অন্তরে ধারণ করে হজের বিধানগুলো পালন করা। আল্লাহ তাআলা তওফিক দিন!
Advertisement
ওএফএফ/জেআইএম