আওয়ামী আমলে নিয়োগ পাওয়া সিন্ডিকেট সদস্যরা এখনো জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে বহাল তবিয়তে রয়েছেন। মঙ্গলবার (৩ জুন) বিকেল ৩টায় অনুষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০১তম সিন্ডিকেট সভায় উপস্থিত হন আওয়ামীপন্থি শিক্ষক প্রতিনিধিরা।
Advertisement
এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের সব রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের প্ল্যাটফর্ম ‘জবি ঐক্য’ এর নেতারা তীব্র প্রতিবাদ জানান। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কাছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে তাৎক্ষণিক স্মারকলিপি দিয়েছেন। একই সঙ্গে জবি ঐক্য থেকে তাদের পদত্যাগ দাবি করেন ছাত্র নেতারা।
ছাত্র নেতাদের অভিযোগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম হলো সিন্ডিকেট। ফ্যাসিবাদের দোসরদের বাদ দিয়ে নতুন সিন্ডিকেট গঠন করার দাবি জানিয়ে আসছে দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষার্থীরা। কিন্তু এ বিষয়ে প্রশাসনের কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ লক্ষ্য করা যায়নি।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০০৫ অনুযায়ী, সিন্ডিকেট সদস্য থাকবেন ১৬ জন। উপাচার্য, কোষাধ্যক্ষ ও রেজিস্ট্রারসহ সরকার মনোনীত ন্যূনতম দুজন যুগ্ম সচিব, সরকার মনোনীত শিক্ষা ও গবেষণা সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান হতে দুজন, ইউজিসি থেকে একজন, আচার্য থেকে মনোনীত দুজন শিক্ষাবিদ, বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিন থেকে তিনজন ও অ্যাকাডেমিক কাউন্সিল থেকে তিন জন সিন্ডিকেট সদস্য হবেন।
Advertisement
জানা যায়, আজকের সিন্ডিকেট সভায় আমন্ত্রণ পেয়েছেন উপাচার্য, কোষাধ্যক্ষ, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন ড. সানজিদা ফারহানা, লাইফ অ্যান্ড আর্থ সায়েন্স অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মল্লিক আকরাম হোসেন ও আইন অনুষদের ডিন খ্রিস্টিন রিচার্ডসন, ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষক ড. মো. মোশাররফ হোসেন, একই বিভাগের অধ্যাপক ড. এ কে এম মনিরুজ্জামান, প্রাণ রসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. লাইসা আহমেদ লিসা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ার হোসেন ভূঁঞা, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. ইলিয়াস হোসেন, জবির ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষক ড. রইছ উদ্দিন, সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশনের চেয়ারপার্সন ড. মোহাম্মদ আব্দুল মজিদসহ সরকার মনোনীত দুইজন যুগ্ম সচিব।
এর মধ্যে অধ্যাপক ড. ইলিয়াস হোসেন ২০২১ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিন নির্বাচনে আওয়ামী লীগপন্থি শিক্ষকদের হলুদ প্যানেল থেকে নির্বাচিত হন। তার বিরুদ্ধে অ্যাকাডেমিক সভায় অশালীন ভাষা ব্যবহার করে সহকর্মী আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. মামুনকে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ রয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক এ. কে. এম. মনিরুজ্জামান ২০১৫ সালে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আওয়ামী লীগ সমর্থিত শিক্ষকদের সংগঠন নীলদলের সভাপতি নির্বাচিত হন। এছাড়া আওয়ামী লীগের সমর্থনে ২০১৭ সালে জবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি নির্বাচিত হন। আওয়ামীপন্থি শিক্ষক হওয়ায় ২০২৩ সালে স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের উপাচার্য হিসেবে যোগদান করেন।
জবির প্রাণ রসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের ড. লাইসা আহমদ লিসা একই সঙ্গে ফ্যাসিবাদী সংস্কৃতি কর্মীদের আঁকড়া খ্যাত ছায়ানটের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে আছেন। অপর ফ্যাসিবাদের দোসর ছায়ানটের প্রতিষ্ঠাতা সনজিদা খাতুন ছিলেন তার সম্পর্কে শাশুড়ি। শাশুড়ি সনজিদা খাতুন ও ছায়ানটের পদক ব্যবহার করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রভাব খাটাতেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
Advertisement
এ বিষয়ে জবি শাখা ছাত্র অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রায়হান হাসান রাব্বি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটে এখনো স্বৈরাচারের দোসর কীভাবে বসে?
আমাদের ত্যাগ কি এজন্য ছিল? এক বছর হতে না হতেই আমাদের শিক্ষকরাও তাদের সঙ্গে বসা শুরু করেছে। তাই একজন জুলাইযোদ্ধা হিসেবে আমি এটা হতে দিতে পারি না। দোসরদের স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করতে হবে।
জবি শাখা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক মাসুদ রানা বলেন, ৫ আগস্ট পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব সেক্টর থেকে স্বৈরাচারের দোসরমুক্ত করার জন্য প্রশাসনের প্রতি অনুরোধ জানানোর পরও আজকে ফ্যাসিস্টদের নিয়ে সিন্ডিকেট মিটিং বসানো হয়েছে। আমরা চাই, অতিদ্রুত স্বৈরাচারের দোসরদের সিন্ডিকেট থেকে বের করে জুলাই আন্দোলনের পক্ষের শক্তিকে নিয়ে সিন্ডিকেট পুনর্গঠন করতে হবে।
বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের নেতা নূর নবী বলেন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটে এখনো এমন কিছু ব্যক্তি রয়েছেন, যারা অতীতে স্বৈরাচারী সরকারের দমনমূলক নীতির সহযোগী ছিলেন। তারা ছাত্রদের ওপর নিপীড়ন চালিয়েছেন, বহিষ্কার করেছেন, পুলিশে ধরিয়েছেন। এমন ব্যক্তিদের বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ক্ষমতায় রাখা দুঃখজনক ও লজ্জাজনক। আমরা দাবি জানাই—স্বৈরাচারের সহযোগীদের বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে অপসারণ করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয় হোক মুক্ত চিন্তার নিরাপদ স্থান, কোনো শাসকের নয়।
জবি ছাত্রদলের আহ্বায়ক মেহেদী হাসান হিমেল বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানে ছাত্রদের রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটের মতো নীতিনির্ধারণী জায়গায় আওয়ামী লীগের দোসরা থাকতে পারে না। তাদের পদত্যাগ করতে হবে।
তৌফিক হোসেন/এমআরএম/এমএস