ফিচার

ঈদের আগের রাতে আতশবাজি: সতর্কতা ও সচেতনতা জরুরি

ঈদের আগের রাতে আতশবাজি: সতর্কতা ও সচেতনতা জরুরি

বিজয় দিবস, নববর্ষ, ঈদ, পূজা, বিয়েসহ বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে আতশবাজি ফোটানো হয়। যে কোনো আয়োজন যেন আতশবাজি ছাড়া অপূর্ণই মনে হয়। যা সৌন্দর্য ও আনন্দ প্রকাশের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহৃত হয়। তবে রাতভর আতশবাজির ঝলকানিতে আকাশ আলোকিত হলেও এর পেছনে লুকিয়ে রয়েছে ভয়ংকর ঝুঁকি ও ক্ষতি, যা অনেকেই গুরুত্ব দেন না। তবে এই বিষয়ে সবার সতর্কতা ও সচেতনতা বাড়ানোর প্রয়োজন নিজ নিজ জায়গা থেকে।

Advertisement

আতশবাজি ব্যবহারে কিছু সতর্কতা অবলম্বন করা অত্যন্ত জরুরি। যে কোনো বড় দুর্ঘটনা এড়াতে চলুন জেনে নেওয়া যাক আতশবাজি পোড়াতে হলে কী কী বিষয়ে সচেতন এবং সতর্ক থাকবেন-

শিশুদের থেকে আতশবাজি দূরে রাখা

শিশুরা আতশবাজিকে খেলনা মনে করে, কিন্তু এগুলো আসলে হলো বিস্ফোরক পদার্থ। সঠিক নির্দেশনা না জেনে তারা ব্যবহার করলে আগুন লেগে যেতে পারে। যার ফলে গুরুতর আঘাত পেতে পারে শিশুরা। তাই বড়দের তত্ত্বাবধানেই আতশবাজি ফাটানো উচিৎ।

খোলা জায়গায় আতশবাজি ফাটানো

আতশবাজির ধোঁয়া এবং আগুন খোলা জায়গায় দ্রুত ছড়িয়ে যেতে পারে, এতে পুড়ে যাওয়ার ঝুঁকি বলতে গেলে অনেক কম। বাড়ির ভেতর বা গাছপালার কাছাকাছি আতশবাজি ফাটালে অগ্নিকাণ্ড ঘটতে পারে। এছাড়া বিদ্যুতিক তার বা খুঁটির আশপাশেও আতশবাজি ফোটানো যাবে না।

Advertisement

পানি বা অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র প্রস্তুত

আতশবাজি ফাটানোর সময় হঠাৎ করেই দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। যদি আগুন লেগে যায়, তাহলে তা দ্রুত নেভানোর জন্য পানি অথবা অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র প্রস্তুত রাখা উচিত।

দাহ্য বস্তু থেকে দূরে আতশবাজি ফোটানো

পেট্রোল, ডিজেল, গ্যাস সিলিন্ডার বা কাঠের জিনিসপত্রের কাছাকাছি আতশবাজি ফাটানো মোটেও উচিৎ নয়। কারণ এর ফলে আগুন ছড়িয়ে পড়ে ভয়ানক পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। তাই আতশবাজির জায়গা নির্বাচন করা খুব গুরুত্বপূর্ণ।

আতশবাজি মাটিতে রেখে ফাটানো

অনেক সময় দেখা যায় হাতে ধরে আতশবাজি ফাটানো হয়। এটা অত্যন্ত বিপজ্জনক। কারণ হাতের আঙুলে গুরুতর আঘাত লাগতে পারে। সে জন্য মাটিতে নিরাপদভাবে রেখে ফাটানো উচিত।

পরিত্যক্ত আতশবাজি দ্বিতীয়বার না ফাটানো

এক প্যাকেটের সব আতশবাজি ভালো হবে এমনটা নয়। কিছু কিছু নষ্টও থাকতে পারে। কিছু আতশবাজি প্রথমে কাজ না করলেও পরে হঠাৎ বিস্ফোরিত হতে পারে। তাই যা একবার জ্বলেনি, তা দ্বিতীয়বার ফাটানো চেষ্টা করবেন না। বরং পানি দিয়ে সেই আতশবাজি নিভিয়ে ফেলুন।

Advertisement

আতশবাজির মোড়ক খুলবেন না

অনেকে কৌতূহলবশত আতশবাজির ভেতরটা দেখার জন্য মোড়ক খুলতে চায়। এতে বিস্ফোরক পদার্থ ছড়িয়ে পড়ে এবং তাৎক্ষণিক বিস্ফোরণ ঘটতে পারে। এটা অত্যন্ত বিপজ্জনক। তাই এই কাজ মোটেও করা ঠিক নয়।

প্রতি বছর ঈদে আতশবাজি ফোটানোর কারণে ঘটে বিভিন্ন ধরনের দুর্ঘটনা। হঠাৎ বিস্ফোরণে হাত-পা উড়ে যাওয়া, চোখ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়াসহ মৃত্যুর মতো ভয়াবহ ঘটনাও ঘটে। বিশেষ করে শিশুরা নিরাপদ দূরত্ব না জেনে বাজি ফাটানোর কারণে দুর্ঘটনার বেশি শিকার হয়।

বাজির তীব্র শব্দ কানে ক্ষতি করতে পারে, বিশেষ করে শিশু ও বয়স্কদের জন্য এটি অত্যন্ত বিপজ্জনক। এছাড়া পশু-পাখিরা তীব্র শব্দে আতঙ্কিত হয়ে যায়।

আতশবাজি ব্যবহার বন্ধে সচেতনতা বৃদ্ধির উপায় আসুন জেনে নেই- শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আলোচনা ও কর্মশালা

আতশবাজির ক্ষতিকর দিকগুলোর সম্পর্কে ছোটবেলা থেকেই সচেতনতা তৈরি করতে হবে। এজন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিয়মিত আলোচনা সভা ও কর্মশালার আয়োজন করা উচিত। এতে শিক্ষার্থীরা আতশবাজির স্বাস্থ্যঝুঁকি, পরিবেশদূষণ এবং সামাজিক ক্ষতির বিষয়ে জানতে পারবে। যার ফলে সচেতন নাগরিক হিসেবে গড়ে উঠবে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচারণা

বর্তমান ডিজিটাল যুগে ফেসবুক, ইউটিউব, ইনস্টাগ্রাম ও টিকটকের মতো মাধ্যমে ভিডিও, পোস্টার, ইনফোগ্রাফিক ও ক্ষতিকর প্রভাবের চিত্র তুলে প্রচারণা চালানো। বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের মাঝে এই বার্তা ছড়িয়ে দিতে এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।

কমিউনিটি নেতা ও ধর্মীয় নেতাদের মাধ্যমে বার্তা ছড়ানো

ধর্মীয় ও সামাজিক নেতারা সমাজে বিশেষ প্রভাব রাখেন। তারা যদি আতশবাজি না ব্যবহারের আহ্বান জানান, তবে অনেকেই তা গুরুত্বের সঙ্গে নেবে। তাই জুমার খুতবা, ধর্মীয় বক্তৃতা বা সামাজিক সমাবেশে এ বিষয়ে কথা বললে মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন হতে পারে।

বাচ্চাদের জন্য বিকল্প আনন্দের ব্যবস্থা

শিশু ও কিশোরদের আতশবাজির প্রতি আকর্ষণ কমাতে তাদের জন্য নিরাপদ ও আকর্ষণীয় বিকল্প খেলার ব্যবস্থা করে দিতে হবে।

র‌্যালি, পোস্টার ও লিফলেট বিতরণ

আতশবাজির ব্যবহার বন্ধে ক্ষতিকর দিকগুলো তুলে ধরে রাস্তার ধারে, স্কুল-কলেজে এবং জনবহুল স্থানে পোস্টার টাঙানো ও লিফলেট বিতরণ করা। এর মাধ্যমে খুব সহজেই সাধারণ মানুষের মাঝে সচেতনামূলক বার্তা ছড়ানো সম্ভব হবে।

আইন প্রয়োগ ও সরকারি প্রচারণা

আতশবাজি উৎপাদন, বিক্রি ও ব্যবহারের ক্ষেত্রে কড়া নজরদারি প্রয়োজন। সরকার ও স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিয়মিত অভিযান, জরিমানা ও প্রচারণা চালানো জরুরি। আইন না মানলে শাস্তির বিধান থাকলে মানুষ আরও সচেতন হবে।

আনন্দ প্রকাশের জন্য আতশবাজি বা পটকা ফাটানোই একমাত্র মাধ্যম নয়। পরিবার ও বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটানো, গান-বাজনা, রঙিন লাইট দিয়ে ঘর সাজানো কিংবা গল্প করার মাধ্যমেও বিশেষ দিনটি উদযাপন করা যায়।

আরও পড়ুন

তামাক থেকে নিজে বাঁচুন, অন্যকে বাঁচান গাছের ভাষায় প্রকৃতির পাঠশালা

কেএসকে/এমএমস