জাতীয়

পুরান ঢাকায় কোরবানির ‌‘দানের’ মাংসের দাম চড়া

পুরান ঢাকায় কোরবানির ‌‘দানের’ মাংসের দাম চড়া

পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে রাজধানীতে পশু কোরবানির পর থেকেই জমে উঠেছে বাসাবাড়ি থেকে পাওয়া ও কসাইদের সংগ্রহ করা মাংসের হাট। পাড়া-মহল্লা, বাজার, ফুটপাত- যে যেখানে সুযোগ পেয়েছেন বসে গেছেন মাংস নিয়ে। ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় কোরবানির ‌‘দানের’ মাংসে ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকা কেজি বিক্রি হলেও পুরান ঢাকায় বিক্রি হচ্ছে সাড়ে ৮০০ টাকা করে।

Advertisement

শনিবার (৭ জুন) বিকেল থেকে সন্ধ্যা ৮টা পর্যন্ত সরেজমিনে বাড্ডা, মধ্যবাড্ডা, রামপুরা ব্রিজ, মালিবাগ, মগবাজার, মহাখালী, কাকলি কারওয়ান বাজার রেলগেট, মালিবাগ মোড় এবং আজিমপুরসহ বেশ কিছু এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে, রাস্তায় থেমে থেমে জটলার মাঝে হঠাৎ বসা হাটের বেচাকেনাও ছিল জমজমাট।

ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রতি কেজি ভালো মাংসের দাম ৮০০-৭৫০ টাকা। আর একটু নিম্ন মানের মাংস ৬০০-৫৫০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে। তবে কসাইরা ওইসব মাংস কিনেই দাম হাঁকছেন ৯০০-৮৫০ টাকা। একটু নিম্ন মানেরটা হাঁকছেন ৭০০-৬৫০ টাকা।

মূলত দুপুর ২টা থেকে বিকেল ৩টায় মাংস বিক্রি জমতে শুরু করে। বেচাকেনা চলে সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত ৯টা পর্যন্ত। হাটগুলোতে ঘুরে দেখা যায়, এ হাটের ক্রেতারা মাংস কিনে কেউ ঠকছেন, কেউ আবার জিতছেন। চৌধুরীপাড়া থেকে ২৪ কেজি মাংস নিয়ে মালিবাগ রেলগেটে এসেছেন হাফিজ মিয়া। তিনি ৮০০ টাকা বিক্রি করেছেন ওই মাংস। টাকার দরকার তাই বিক্রি করেছেন।

Advertisement

মগবাজার রেলগেট থেকে দেড় হাজার টাকায় তিন কেজির ওপরে মাংস কিনে ফিরছিলেন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী মনজুর হোসেন। তিনি বলেন, কোরবানি দিতে পারেনি। আবার কোথাও মাংস চাইতে পারি না। তাই কিনেছি। যারা বিভিন্ন বাড়িতে মাংস বানায় কিংবা মাংস চেয়ে আনে তারা বিক্রি করছেন বলে জানান মনজুর।

বাড্ডায় মাংস বিক্রি করছিলেন কিশোরগঞ্জের মৌসুমি কসাই শহিদ। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, বিভিন্ন বাড়িতে কোরবানির পশু জবাই করেছে তাদের ৫-৬ জনের একটি দল। আসার সময় তারা যে মাংস পেয়েছেন, সেগুলোই বিক্রি করেছেন।

তারা বলেন, এসব মাংস বাড়ি নেওয়া যাবে না। আমরা ঢাকার বাইরের বিভিন্ন এলাকা থেকে কোরবানি উপলক্ষে ঢাকায় এসেছি। ঈদ শেষে আবার যার যার এলাকাতে চলে যাবো। কিন্তু মাংসগুলো বাড়ি পর্যন্ত নিতে গেলে নষ্ট হবে। সে জন্যই বিক্রি করে টাকা নিয়ে বাড়ি যাবো। এতে কিছু বাড়তি আয়ও হয়।

আজিমপুর কবরস্থানের পাশে বসে বিরাট মাংসের হাট। এ হাট থেকে ছয় হাজার টাকার মাংস কেনেন সোবহানবাগ থেকে আসা সবুজ। কী উপলক্ষে এত টাকার মাংস কেনা হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কোনো উপলক্ষ নেই। পরিবারের সবাইকে নিয়ে খাওয়ার জন্যই কিনেছি। সস্তায় পাওয়া গেল কি না জানতে চাইলে বলেন, সস্তা না কসাইখানার দোকানের মাংস থেকে একটু ভালো মানের মাংস।

Advertisement

লালবাগের চুড়িহাট্টায় সামনে বসা হাট থেকে কোরবানির মাংস কিনেছেন সাড়ে ৮০০ টাকা কেজি। দাম বেশি কি না জানতে চাইলে ওয়াহিদুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, বাড়ি বাড়ি গিয়ে যে সংগ্রহ করেছে তার কাছ থেকে মাংস নিতে পারলে দাম একটু কম পাওয়া যেত। কিন্তু আমরা তো তাদের দেখা পাইনি। বাজারে গেলে কসাই ভালো-মন্দ মিলিয়ে মাংস ওজন করে নিতে বাধ্য করে। কোরবানির মাংসে হাড় ও অন্যান্য উপাদান কম। তা তাছাড়া আজকে কোরবানির দিনে মাংসের দোকান বেশিরভাগই বন্ধ। তাই এখান থেকে কেনা।

মাংস কিনতে আসা আব্দুল আলিম ৮০০ টাকা কেজিতে পাঁচ থেকে ছয় কেজি মাংস কিনেছেন। দামে সস্তা ছিল কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, সেটা তো জানি না! কোরবানির সামর্থ্য নেই। কিন্তু পরিবার-পরিজন নিয়ে মাংস খাওয়ার শখ তো আছেই! তাই, কিনে নিয়ে যাওয়া।

তিনি বলেন, এখন তো বাজার থেকে মাংস কেনা যাবে না। কসাইয়ের দোকান বন্ধ। তাই সস্তায় হোক আর বেশি দামেই হোক, প্রয়োজন তাই কিনেছি!

মৌসুমি কসাই সাহের আলীসহ পাঁচজন ঢাকায় এসেছেন বগুড়া থেকে। তেজগাঁও কারওয়ান বাজার এক বাড়িতে কসাইয়ের কাজ করেছেন। কাজ শেষে আসার সময় বেশ কিছু মাংস পেয়েছেন তারা। তিনি জানান, কসাইয়ের কাজ করে ভাগে ১২ হাজার টাকা করে পেয়েছি। মাংস বিক্রি করেও কিছু টাকা পেলাম।

ফুটপাতে কয়েক ভাগ মাংস সাজিয়ে বসে আছেন মৌসুমি মাংস বিক্রেতা জামিল। কথা হলে তিনি বলেন, রাতে ভালো দাম পাওয়া যাবে। সে সময় ভদ্রলোকরা আসবেন। কোরবানি দেওয়ার সামর্থ্য নেই, কিন্তু মাংস খাবেন, এমন লোক কিছু আসবেন। তাদের কাছে মোটামুটি ভালো দামে মাংস বিক্রি করা যাবে।

এফএইচ/এমএএইচ/