অর্থনীতি

যাত্রাবাড়ী আড়ত: ইলিশে আগুন, পাঙাশে লোকসান

যাত্রাবাড়ী আড়ত: ইলিশে আগুন, পাঙাশে লোকসান

গত ৭ জুন সারাদেশে উদযাপিত হয়েছে ঈদুল আজহা। প্রথম ও দ্বিতীয় দিনের মতো আজও রাজধানী ঢাকার অনেক জায়গায় পশু কোরবানি হচ্ছে। সে হিসেবে এই সময়ে মানুষের খাদ্যতালিকায় গরু বা খাসির মাংস থাকবে এটাই স্বাভাবিক। মাছ বা ডিম, সবজির চাহিদা থাকবে কম। এখন মাছের বাজার বা আড়তেও মানুষের হাঁকডাক কম থাকে।

Advertisement

ঈদের তৃতীয় দিন রাজধানীর যাত্রাবাড়ী মাছের আড়তেও মানুষের হাঁকডাক চোখে পড়েনি। যেখানে সাধারণত প্রতিদিন কাঁকডাকা ভোরে বেচাকেনা জমে ওঠে। সেখান এখন ক্রেতার সমাগম কম। খুচরা ও পাইকারি মাছের ক্রেতাও কম।

ক্রেতা-বিক্রেতাদের হাঁকডাক কম থাকলেও আড়তটিতে কিছু মাছ কম দামে আবার কিছু মাছ বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। সবচেয়ে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে ইলিশ। গলদা চিংড়ি ঈদের আগের মতোই। ঈদের আগের দিন রুই-কাতলা, টেংরা ও পাবদা মাছের দাম কম থাকলেও এখন একটু বাড়তি। কিন্তু বাগদা চিংড়ি, পাঙাশ ও ছোট মাছ লোকসানে বিক্রি করছেন বলে জানান আড়তদাররা।

সোমবার (৯ জুন) সকালে যাত্রাবাড়ী মাছের আড়ত ঘুরে ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আড়তের কয়েকশ দোকানের মধ্যে হাতেগোনা ৫০টির মতো দোকান খুলেছে। ঈদে কেউ বাড়িতে আবার কেউ বেড়াতে গেছেন। আবার মাছের আমদানিও কম দেখা গেছে।

Advertisement

শরীয়তপুর থেকে পাঙাশ নিয়ে আসা আড়তদার কাদের শিকদারের ছোট ভাই রমজান সিকদার জাগো নিউজকে বলেন, ঈদের আগে আড়তে মাছের সরবরাহ থাকলেও ক্রেতা কম ছিল, তাই কম দামে মাছ বিক্রি করতে হয়েছে। ঈদের আগের দিন পাঙাশ বিক্রি করতে না পেরে বরফ দিয়ে ফ্রিজে রেখেছিলাম। সে মাছগুলোতে এখন লোকসান হচ্ছে।

তিনি বলেন, আজ যেসব পাঙাশ এসেছে সেগুলোতেও লোকসান হচ্ছে। ঈদের আগে ১৪৫, ১৫০ ও ১৬০ টাকা কেজিতে বিক্রি হওয়া পাঙাশ এখন বিক্রি হচ্ছে ১৬০, ১৭০ থেকে ১৮০ টাকা কেজিতে। তারপরও লোকসান হচ্ছে।

পাবদা মাছ বিক্রি করছেন সততা মৎস্য আড়তের মোহাম্মদ লিটন মিয়া। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, মাছের আমদানি কম, দাম একটু বেশি। কিন্তু আজ পাইকারি ক্রেতা একদমই নেই। তাই মাছ বিক্রি করতে না পেরে প্যাকেজিং করে রেখে দিচ্ছি।

মাছের সরবরাহ কম হওয়ার কারণ হিসেবে তিনি বলেন, কোরবানির ঈদের কারণে খামার ও হ্যাচারি থেকে অনেকেই মাছ তুলছেন না। আড়তদারদের কেউ গ্রামের বাড়িতে গেছেন, কেউবা বেড়াতে গেছেন। এজন্য দোকান খুলেছে কম।

Advertisement

ছোট মাছ বিক্রিতে কেজিতে ২০ থেকে ৩০ টাকা লোকসান হচ্ছে দাবি করে আশরাফ এন্টারপ্রাইজের আসাদুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, ঈদের পর মাছের আড়তদার কম, আমদানিও কম। বাজারে পাইকারি ক্রেতাও কম। তার ওপর পাইকাররা এই ছোট মাছ নিচ্ছে না।

লোকনাথ মৎস্য আড়তে কাজ করেন বাদল দাস। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, আজ মাছের আমদানি নেই তাই দাম ঈদের আগের তুলনায় একটু বেশি। আজ রুই, কাতলা ৩২০ থেকে ৪০০ টাকায় বিক্রি করছি। আমাদের এখানে মিয়ানমার থেকে মাছ আসে।

মা ফিশের সনজিদ মন্ডল ও জুনায়েদ ফিশের আবুল হোসেন বিক্রি করছেন বাগদা চিংড়ি। তারা জাগো নিউজকে বলেন, ঈদের আগে এবং অন্য সময়ের চেয়ে অনেক কম দামে বাগদা চিংড়ি বিক্রি হচ্ছে। পানির দামে বাগদা চিংড়ি বিক্রি হচ্ছে। ঈদের আগে এসব চিংড়ি বিক্রি করেছি ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকা। এখন সেটা ৬০০ থেকে ৬২০ টাকা। দামও জিজ্ঞাসা করে না কেউ, কিনতেও আসে না।

ইলিশ বিক্রি করছেন বেশ কয়েকজন আড়তদার। বিসমিল্লাহ মৎস্য আড়তের মো. মনির হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, ইলিশের আমদানি একেবারেই নেই, কিন্তু কোরবানির ঈদে সবচেয়ে চাহিদা বেশি ইলিশের। আমরা চাঁদপুরের বড় ইলিশ ২৯০০ থেকে ৩৫০০ টাকা এবং মিয়ানমারের বড় ইলিশ ২১০০ থেকে ২৯০০ টাকায় বিক্রি করছি। আর দেশি ৬০০ থোকে ৭০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ ২২০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছি।

যাত্রাবাড়ী থেকে পাইকারি দরে মাছ কিনে খুচরা বিক্রি করেন জামাল হোসেন। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, আড়াই-তিন কেজি ওজনের রুই ৩৫০ টাকা আর কাতলা ৩৮০ টাকা কেজি দরে কিনেছি। আর পাবদা ৪২০ টাকা কেজিতে কিনেছি।

এটা কম না বেশি দর জানতে চাইলে তিনি বলেন, আগে মাছের আমদানি বেশি ছিল তাই দাম কম হতো আর এখন মাছের আমদানি কম দাম বেশি।

এফএইচ/বিএ/এমএস