অরুণাচল প্রদেশের চীন সীমান্তবর্তী পাহাড়ঘেরা অঞ্চলে ভারতের বৃহত্তম জলবিদ্যুৎ প্রকল্প সিয়াং আপার মাল্টিপারপাস প্রজেক্ট (এসইউএমপি) নিয়ে স্থানীয় আদিবাসী জনগণের মধ্যে ক্রমবর্ধমান অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। সম্প্রতি সেখানে ড্রিলিং যন্ত্রপাতি ও আধাসামরিক বাহিনী মোতায়েন করার পর থেকে উত্তেজনা আরও বেড়েছে।
Advertisement
স্থানীয় বাসিন্দা কেন্টু বলেন, রাতের অন্ধকারে সেনা ও যন্ত্রপাতি নিয়ে আসা হয়েছে। আমাদের কোনো কিছু না জানিয়ে, আমাদের কৃষিজমির পাশেই সব বসানো হয়েছে। এখন শুধু অস্ত্রধারী বাহিনী আর মেশিন দেখি।
প্রকল্পটির পেছনে ভারত সরকারের যুক্তি হলো এটি জল নিরাপত্তা, বিদ্যুৎ উৎপাদন এবং সীমান্তবর্তী অঞ্চলে কৌশলগত উপস্থিতি নিশ্চিত করবে। তবে স্থানীয়দের মতে, এটি তাদের জীবিকা, সংস্কৃতি ও অস্তিত্বের জন্য হুমকি।
আদিবাসী জনগোষ্ঠীর কাছে সিয়াং নদী (ব্রহ্মপুত্র) শুধু পানি নয়, এটি মাদার সিয়াং অর্থাৎ জীবনের উৎস। তারা বাঁধের জায়গায় ধান, কমলা, বাঁশ চাষ করেন এবং নদীকে পবিত্র মনে করেন।
Advertisement
দিবুত সিরাম নামের একজন বলেন, প্রকল্পটি অন্তত ৪২টি গ্রামে সরাসরি বা পরোক্ষভাবে প্রভাব ফেলবে। যদি জনগণের মত নেওয়া হতো তাহলে ৯৫ শতাংশ মানুষ বিরোধিতা করতো।
এদিকে সরকারের দাবি, ৭০ শতাংশ মানুষ প্রকল্পের পক্ষে, যা স্থানীয়রা মিথ্যা ও প্রতারণামূলক বলে অভিহিত করেছেন।
স্থানীয় এক কর্মী বলেন, আমরা রাজনৈতিক কমিটি চাই না, চাই একটি স্বাধীন মূল্যায়ন কমিটি। মানুষকে জানতে দেওয়া হোক কী হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রকল্পটি শুধু বিদ্যুৎ উৎপাদনের নয়, বরং চীনের সঙ্গে সীমান্ত বিরোধে ভারতের ভূ-রাজনৈতিক অবস্থান জোরদার করার কৌশল। চীন যখন তিব্বতের মেডোগ এলাকায় বিশ্বের সবচেয়ে বড় বাঁধ প্রকল্প চালু করেছে, ভারত তখন সীমান্তবর্তী অঞ্চলে পাল্টা পদক্ষেপ নিচ্ছে।
Advertisement
চীনের প্রকল্পে তারা প্রাকৃতিক ঢাল ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপাদন করছে, কিন্তু ভারতের বিশালাকার বাঁধ প্রকল্প পরিবেশগত ও কারিগরি দিক দিয়ে অযৌক্তিক বলে অনেকেই মনে করছেন।
বিশ্লেষক মির্জা জুলফিকার রহমান বলেন, নদীগুলো সার্বভৌমত্ব প্রদর্শনের হাতিয়ার হয়ে উঠেছে। একে বলা যায় ‘স্টেট-মেকিং থ্রু ড্যামস।
ভারতের পক্ষ থেকে সাধারণ পুলিশ না পাঠিয়ে আধাসামরিক বাহিনী মোতায়েন একটি কৌশলগত বার্তা বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
আন্দোলনকারীরা স্পষ্ট করে বলছেন, এটি কেবল উচ্ছেদ বা ক্ষতিপূরণের প্রশ্ন নয়। এটি পরিচয়, সংস্কৃতি এবং অস্তিত্বের সংগ্রাম।
একজন গ্রামবাসী বলেন, মানুষের শরীর যদি টুকরো করে দেন, সে কি বাঁচে? নদীকেও আপনি টুকরো করবেন, আর ভাববেন জীবন চলবে।
সূত্র: নিক্কেই এশিয়া
এমএসএম