খেলাধুলা

যে ভুলে দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ হারালো অস্ট্রেলিয়া

যে ভুলে দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ হারালো অস্ট্রেলিয়া

বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে তৃতীয় দিনের খেলা শেষ হয়েছে গতকাল শুক্রবার। লর্ডসে অস্ট্রেলিয়ার দেওয়া ২৮২ রানের লক্ষ্য তাড়ায় ২ উইকেটে ২১৩ রান করে দিন শেষ করেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। আজ চতুর্থদিনে জয়ের জন্য প্রোটিয়াদের দরকার ৬৯ রান, আর অস্ট্রেলিয়ার ৮ উইকেট। মানে, দক্ষিণ আফ্রিকা অনেকটা জয়ের কাছাকাছি।

Advertisement

কিন্তু শুক্রবার একটা সময় মনে হয়েছিল, ম্যাচের নিয়্ন্ত্রণ পুরোপুরি অস্ট্রেলিয়ার হাতে; যখন চ্যালেঞ্জিং কন্ডিশনেও মিচেল স্টার্কের ফিফটিতে ২৮১ রানের পুঁজি পায় এবং বল হাতে ৭০ রানের মাথায় দক্ষিণ আফ্রিকার ২ উইকেট ফেলে দেয় অসিরা।

কিন্তু তৃতীয় উইকেটে ১৪৩ রানের বিশাল জুটি করে ম্যাচের চেহারাই বদলে ফেলেন দক্ষিণ আফ্রিকার দুই ব্যাটার টেম্বা বাভুমা ও এইডেন মার্করাম। দিনের শেষ সেশনে একটি উইকেটও ফেলতে পারেনি অসিরা। এতে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ চলে যায় দক্ষিণ আফ্রিকার হাতে।

যে পিচে প্রথম দুইদিনে পড়েছিল ২৮ উইকেট, সেই একই পিচে কেন উইকেট ফেলতে পারলো না অস্ট্রেলিয়া, তার কারণ অনুসন্ধান করছেন ক্রিকেটবোদ্ধারা। যদিও মোটাদাগে বাভুমার দুটি ক্যাচ ফেলে দেওয়াকে বড় কারণ হিসেবে ধরে নিচ্ছেন ভক্তরা, সেটি ছাড়া অন্য কী কারণ থাকতে পারে, সেটিই খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

Advertisement

এর একটি ব্যাখ্যা দিয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার সাবেক ওপেনার ম্যাথিউ হেইডেন ও দক্ষিণ আফ্রিকার পেসার ডেল স্টেইন। তারা মনে করছেন, অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক প্যাট কামিন্সের ভুল কৌশলের কারণেই এমনটি হয়েছে। কৌশলটি হলো, দক্ষিণ আফ্রিকার রান তোলা ঠেকাতে আক্রমণাত্মক নীতি থেকে সরে এসে আত্মরক্ষামূলক নীতি গ্রহণ করেছিলেন কামিন্স।

তৃতীয় দিনের খেলা শেষে হেইডেন বলেন, ‘আপনি জানেন, আজ অস্ট্রেলিয়ার প্রতিরোধমূলক প্রচেষ্টা ছিল মূলত কীভাবে তারা উইকেট নিতে পারে এবং কীভাবে তারা শুরুতেই সেটা করবে। তারা যখন মুলডারকে (উইয়ান মুলডার) ও রিকেলটনকে (রায়ান রিকেল্টন) আউট করে, তখনই তাদের বাভুমার উপর চাপ সৃষ্টি করতে হতো। তখন ক্যাচিং কভারে ফিল্ডার রাখতে হতো। কম ডিফেন্সিভ, বেশি অ্যাটাকিং হতে হতো। ভাবো তো, যদি প্রথম কয়েকটা বলেই ক্যাচ উঠতো! দক্ষিণ আফ্রিকা তখন তিন উইকেট হারিয়ে বসে থাকতো, আর অস্ট্রেলিয়া ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিত। আমার মতে, ওটাই ছিল ভুল।’

হেইডেন আরও বলেন, ‘গেমের যে ধীরগতির প্রবাহ শুরু হলো, তাতে রোটেশন অব স্ট্রাইক সহজ হয়ে গেল। সেই জুটিটাও (বাভুমা ও মার্করাম) আত্মবিশ্বাস পেয়ে গেল এবং ধীরে ধীরে অস্ট্রেলিয়ার বোলিং আক্রমণ থেকে সেটা দূরে সরে গেল। হ্যাঁ, উইকেট ফ্ল্যাট। কিন্তু তোমাকে ১০ উইকেট নিতেই হবে, যদি বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ জিততে চাও। তোমাকে টপ থ্রি ব্যাটারদের আউট করতেই হবে।’

ডেল স্টেইনও অস্ট্রেলিয়ার কৌশলে বিস্ময় প্রকাশ করেন। বলেন, ‘এমন পিচে যেখানে বল স্লিপ পর্যন্তই পৌঁছাচ্ছে না, সেখানে ক্যাচিং পজিশনে ফিল্ডার না রাখাটা অবাক করার মতো।’

Advertisement

সাবেক প্রোটিয়া পেসার বলেন, ‘হ্যাঁ, আমি একটু অবাক হয়েছি। আপনি জানেন, খেলাটা যেমন এগোচ্ছে, তেমনটা বুঝে তোমাকে ট্যাকটিকস অ্যাডজাস্ট করতে হয়। আজকে আমরা দেখেছি বল খুব নিচু হচ্ছে, এমনকি গতকাল থেকেই বল স্লিপ পর্যন্ত পৌঁছাচ্ছে না। যখন আমি খেলতাম, বিশেষ করে ভারতে, তখন শর্ট কভার, শর্ট মিডউইকেট — এই পজিশনগুলো দক্ষিণ আফ্রিকা বা অস্ট্রেলিয়ায় স্লিপ কর্ডনের মতোই গুরুত্বপূর্ণ। তাই এমন দিনে, যখন বল স্লিপে পৌঁছাচ্ছে না, তখন এসব ক্যাচিং পজিশনে ফিল্ডার রাখা উচিত।’

যদিও দিন শেষে অস্ট্রেলিয়ার সহকারী কোচ ড্যানিয়েল ভেট্টোরি জোর দিয়ে বলেন, ‘মাত্র একটা উইকেটই দরকার, তাহলেই আমরা দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটিং লাইনআপে ভাঙন ধরিয়ে দিতে পারবো।’

এমএইচ/জিকেএস