জাগো জবস

ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে কর্মসংস্থান কেমন?

ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে কর্মসংস্থান কেমন?

ইলেকট্রিক্যাল হচ্ছে সবচেয়ে পুরাতন এবং প্রচলিত ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের মধ্যে অন্যতম টেকনোলজি। তথ্যপ্রযুক্তির এই যুগে বিশ্বের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছে ইলেকট্রিক্যাল। ফলে বিশ্বজুড়ে এই টেকনোলজির ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং কী? এ টেকনোলজির কাজ কী? এ বিষয়ে ডিগ্রিধারীদের ক্যারিয়ার কেমন হতে পারে? এ ছাড়া আরও অনেক প্রশ্ন মাথায় ঘুরপাক খায়। সেসব নিয়েই আজকের আয়োজন—

Advertisement

ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং কী?

ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংকে বাংলায় বলা হয় তড়িৎ প্রকৌশল। প্রতিটা টেকনোলজি ইলেকট্রিক্যালের সঙ্গে সম্পর্কিত। তাই ইলেকট্রিক্যালকে ইঞ্জিনিয়ারিং শাখার আত্মা বলা হয়। যেখানে সাধারণত ইলেক্ট্রিসিটি, ইলেকট্রনিক ও ইলেক্ট্রম্যাগনেটিজমের জ্ঞান ও দক্ষতা অর্জন করানো হয়।

একজন ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি রক্ষণাবেক্ষণ, নকশা প্রণয়ন, পরীক্ষা-নিরীক্ষা সংক্রান্ত বাস্তবায়ন করে কাজ করেন। বৈদ্যুতিক পাওয়ার সিস্টেম থেকে শুরু করে সিগন্যাল প্রসেসিং এবং ম্যানেজমেন্ট সেক্টরেও কাজ করার সক্ষমতা একজন ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার রাখেন। এককথায় বিদ্যুৎ ও ইলেকট্রনিক প্রযুক্তির ব্যবহার করে মানবজীবনকে উন্নত করে এই টেকনোলজি।

Advertisement

যেসব বিষয়ে আলোচনা হয়

এসি মেশিন, ডিসি মেশিন, পিসিবি ডিজাইন, ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন অব ইলেকট্রিক্যাল এনার্জি, সিগন্যাল প্রসেসিং ছাড়াও অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে ইলেকট্রিক্যাল টেকনোলজিতে আলোচনা করা হয়।

ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের প্রধান শাখা ও বিষয়

পাওয়ার সিস্টেম: ১. বিদ্যুৎ উৎপাদন, যেমন- তাপবিদ্যুৎ, জলবিদ্যুৎ, সৌর বিদ্যুৎ২. বিদ্যুৎ পরিবহন ৩. বিদ্যুৎ বণ্টন।

Advertisement

ইলেকট্রনিক্স: ১. অ্যানালগ ও ডিজিটাল সার্কিট ডিজাইন২. সেমিকন্ডাক্টর ডিভাইস (যেমন- ট্রানজিস্টর, ডায়োড)৩. ইন্টিগ্রেটেড সার্কিট এবং মাইক্রোকন্ট্রোলার।

কন্ট্রোল সিস্টেম:১. স্বয়ংক্রিয় নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা২. রোবটিক্স ও অটোমেশন৩. সেন্সর ও অ্যাকচুয়েটরের ব্যবহার।

ইনস্ট্রুমেন্টেশন:১. পরিমাপ ও নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রপাতির নকশা ও ব্যবহার২. শিল্প কারখানায় ব্যবহৃত সেন্সর ও মিটার।

টেলিযোগাযোগ: ১. সিগন্যাল প্রক্রিয়াজাতকরণ২. তারবিহীন যোগাযোগ, মোবাইল নেটওয়ার্ক, রেডিও, টেলিভিশন।

রিনিউয়েবল এনার্জি সিস্টেম:সৌর শক্তি, বায়ু শক্তি, বায়োগ্যাস ইত্যাদির ব্যবহার ও উন্নয়ন।

ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারদের ভবিষ্যৎ

ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং এমন পেশা, যার ব্যবহার আমাদের দৈনন্দিন জীবন থেকে শুরু করে শিল্পক্ষেত্র, প্রযুক্তি এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনায় ব্যাপকভাবে বিদ্যমান। এককথায় যতদিন পৃথিবী টিকে থাকবে; ততদিন ইলেকট্রিক্যাল টেকনোলজির চাহিদা থাকবে।

ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে কর্মসংস্থান

একদিকে যেমন বিশ্ব উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাচ্ছে; অন্যদিকে ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারদের চাহিদাও বাড়ছে। সরকারির পাশপাশি বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানগুলোতে বিপুল পরিমাণ কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা রয়েছে। দেশের পাশাপাশি বিদেশেও ক্যারিয়ার গড়ার সুযোগ আছে। এ ছাড়া এ টেকনোলজি নিয়ে ব্যবসা ও চুক্তিভিত্তিক কাজও করতে পারবেন। তবে শুধু ডিগ্রি অর্জন করলেই হবে না। ইলেকট্রিক্যাল টেকনোলজিতে সফল ক্যারিয়ার গড়তে হলে অবশ্যই প্রযুক্তিভিত্তিক জ্ঞান ও বাস্তব কাজের অভিজ্ঞতা অর্জন করতে হবে।

সরকারি চাকরি

১. বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডদেশব্যাপী বিদ্যুৎ উৎপাদন ও বিতরণে নিয়োজিত এ প্রতিষ্ঠান ইলেকট্রিক্যাল প্রকৌশলীদের জন্য একটি প্রধান কর্মক্ষেত্র। এখানে সহকারী প্রকৌশলী পদে নিয়োগ দেওয়া হয়ে থাকে।

আরও পড়ুন ভাইভা বোর্ড নিজের নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার উপায়  বিদেশে পড়তে যাওয়ার পর যেসব বিষয় জানা জরুরি 

২. পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডগ্রামাঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবরাহ ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য এ বোর্ড ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারদের নিয়োগ দিয়ে থাকে। এ প্রতিষ্ঠানে কাজের পরিধি বিস্তৃত ও প্রায়ই মাঠ পর্যায়ে নেতৃত্বমূলক ভূমিকা পালন করতে হয়।

৩. বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানিএখানে প্রকৌশলী হিসেবে নিয়োগ পেলে বিদ্যুৎ সঞ্চালন, রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচালনার দায়িত্ব পালন করতে হয়।

৪. বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডপাম্পিং স্টেশন, ড্রেনেজ সিস্টেম ও পানি প্রবাহ নিয়ন্ত্রণে বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি ব্যবহারের জন্য এই বোর্ডে ইলেকট্রিক্যাল প্রকৌশলীদের প্রয়োজন হয়।

৫. বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন সংস্থাএ সংস্থায় ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়াররা পাওয়ার ট্রান্সমিশন লাইন, সাবস্টেশন ও ন্যাশনাল গ্রিড সংক্রান্ত জটিল কাজ করে থাকেন। এখানে প্রযুক্তিনির্ভর ও চ্যালেঞ্জিং কাজের সুযোগ রয়েছে।

৬. বাংলাদেশ অ্যাটমিক এনার্জি কমিশনপরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র ও গবেষণা কাজে ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারদের জন্য রয়েছে গবেষণা, উন্নয়ন ও পরিচালনার সুযোগ। এখানে কাজ করা মানেই দেশের প্রযুক্তিগত অগ্রগতির অংশ হওয়া।

৭. বাংলাদেশ রেলওয়েরেলওয়ের বৈদ্যুতিক সিগন্যালিং, স্টেশন লাইটিং, ইলেকট্রিক ট্রেন সিস্টেম ইত্যাদির জন্য ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার প্রয়োজন হয়।

৮. বিমানবন্দর ও বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষএভিয়েশন সেক্টরের টার্মিনাল, রানওয়ে লাইটিং, কমিউনিকেশন ও রাডার সিস্টেমের রক্ষণাবেক্ষণে ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়াররা নিয়োজিত থাকেন।

বেসরকারি চাকরি

১. বেসরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র২. ইলেকট্রিক্যাল যন্ত্রাংশ উৎপাদন ও রক্ষণাবেক্ষণ কোম্পানি৩. নির্মাণ ও রিয়েল এস্টেট কোম্পানি৪. অটোমেশন ও রোবোটিক্স কোম্পানি৫. টেলিকম ও মোবাইল কোম্পানি৬. রিনিউয়েবল এনার্জি (সৌরবিদ্যুৎ) কোম্পানি৭. গবেষণা ও প্রযুক্তি উন্নয়ন প্রতিষ্ঠান৮. কলকারখানা ও বড় বড় শিল্প প্রতিষ্ঠান

অন্য ক্যারিয়ার

প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় এবং সরকারি ও বেসরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে শিক্ষকতার মাধ্যমে ক্যারিয়ার গড়ার সুযোগ আছে। সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন কারিগরি ট্রেনিং সেন্টারেও চাকরি করতে পারবেন। এ ছাড়া বাংলাদেশ নৌবাহিনী, সেনাবাহিনী ও বিমান বাহিনীতেও ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারদের জন্য নির্দিষ্ট কারিগরি পদ রয়েছে। এখানে কাজের সঙ্গে থাকে সম্মান, শৃঙ্খলা ও সুযোগের বিশাল পরিসর।

এদিকে উন্নত দেশগুলোয় ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারদের চাহিদা ও কর্মক্ষেত্র ব্যাপক। ফলে বিদেশেও ক্যারিয়ার গড়ে তোলা সম্ভব। এককথায় নিজের দক্ষতা, আগ্রহ ও অভিজ্ঞতার ওপর ভিত্তি করে একজন ইঞ্জিনিয়ার দেশে বা বিদেশে ক্যারিয়ার গড়তে পারবেন।

কারা পড়বেন

এককথায় ইলেকট্রিক্যালের যন্ত্রপাতি নাড়াচাড়া করতে যদি আপনার ভালো লাগে, ফিজিক্সের বিদ্যুতের অধ্যায়গুলো যদি প্যারা মনে না হয়, ইলেক্ট্রিসিটি নিয়ে যদি ন্যূনতম কৌতূহলও থাকে, কাশরফের ম্যাথ করে যদি আপনাকে আবিষ্কারের নেশায় পেয়ে বসে, তবেই ইলেকট্রিক্যাল নিয়ে পড়তে পারেন। তবে এ টেকনোলজি নিয়ে পড়ার জন্য অবশ্যই মনে অদম্য সাহস থাকতে হবে। যারা বিদুৎ নিয়ে ভয় পান তাদের দূরে থাকাই উত্তম।

কোথায় পড়বেন

যদি ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার বা ডিপ্লোমা ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার হতে চান, তাহলে ৪ বছর মেয়াদি ডিপ্লোমা ইন ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং অথবা কোনো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ৪ বছর মেয়াদি বিএসসি ডিগ্রি অর্জন করতে হবে। ডিপ্লোমা ইন ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার জন্য সরকারি ও বেসরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট আছে। ডিপ্লোমা শেষে সরকারি ভাবে ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (ডুয়েট) বিএসসি করার সুযোগ আছে। এ ছাড়া দেশের অনেক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকেও বিএসসি করা যাবে।

এসইউ/জিকেএস