বিনোদন

আশার আলো দেখিয়েও ব্যর্থ ‘থান্ডারবোল্টস’, কোন পথে মার্ভেল

আশার আলো দেখিয়েও ব্যর্থ ‘থান্ডারবোল্টস’, কোন পথে মার্ভেল

‘থান্ডারবোল্টস’ সিনেমা মুক্তির পরপরই উচ্ছ্বসিত ছিলেন ডিজনির প্রধান নির্বাহী বব আইগার। দর্শক-সমালোচকদের ইতিবাচক সাড়া পেয়ে তিনি এটিকে মার্ভেলের নতুন কৌশলের ‘প্রথম ও সেরা উদাহরণ’ বলে আখ্যা দেন। কয়েক বছর ধরে ব্যর্থতার মুখে থাকা মার্ভেলের জন্য এটি ছিল আশার আলো।

Advertisement

কিন্তু ছয় সপ্তাহ পার না হতেই হতাশার মুখে পড়ল ‘থান্ডারবোল্টস’। বিশ্বব্যাপী আয় মাত্র ৩৭১ মিলিয়ন ডলার। যা মার্ভেল সিনেমাটিক ইউনিভার্সের ইতিহাসে অন্যতম কম। এত বড় প্রত্যাশার পরও এই ফলাফল মার্ভেলকে নতুনভাবে ভাবতে বাধ্য করছে।

বিশ্বের সবচেয়ে বেশি আয় করা ফ্র্যাঞ্চাইজি মার্ভেল প্রতি সিনেমায় ১ বিলিয়ন ডলার আয় করবে, এমন ধারণা আগের মতো কার্যকর নয় বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা। ২০০৮ সালে ‘আয়রন ম্যান’ দিয়ে শুরু হওয়া এই যাত্রায় একসময় প্রত্যেক ছবিই ছিল ব্যবসায়িকভাবে সফল। কিন্তু মহামারির পরপরই হোঁচট খেতে শুরু করে ফ্র্যাঞ্চাইজিটি।

২০২০ সালের পর থেকে মুক্তিপ্রাপ্ত ১৩টি সিনেমার মধ্যে মাত্র ৬টি ৫০০ মিলিয়ন ডলার আয় ছুঁতে পেরেছে। যদিও ‘ক্যাপ্টেন আমেরিকা: ব্রেভ নিউ ওয়ার্ল্ড’, ‘দ্য মার্ভেলস’ এবং ‘অ্যান্টম্যান অ্যান্ড দ্য ওয়াস্প: কোয়ান্টোম্যানিয়া’র মতো সিনেমাগুলোর ব্যর্থতার পেছনে ছিল বাজে রিভিউ, ‘থান্ডারবোল্টস’-এর প্রেক্ষাপট ছিল আলাদা। ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া সত্ত্বেও এটি ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি।

Advertisement

বিশ্লেষকেরা বলছেন, বিশ্বব্যাপী বাজার সংকুচিত হওয়া, সুপারহিরো গল্পের অতিরিক্ত উপস্থিতি এবং দর্শকদের রুচির পরিবর্তন এর পেছনে বড় ভূমিকা রেখেছে। বড় বাজেটের অ্যাকশন সিনেমার ভিড়ে এখন দর্শক বেশি আগ্রহ দেখাচ্ছে পারিবারিক বা শিশুতোষ ছবির প্রতি।

তবে মার্ভেল এখন ধীরে চলার নীতি গ্রহণ করেছে। জটিল ও সংযুক্ত গল্প বলার বদলে গুণগত মানে জোর দেওয়া হচ্ছে। প্রশ্ন উঠেছে- যখন বাজেট নিশ্চয়তা পাচ্ছে না তখন স্বতন্ত্র সিনেমাগুলোর পেছনে বিনিয়োগ কতটা যুক্তিযুক্ত?

আগামী দিনে মার্ভেল যে কেবল বড় বাজেটের চেনা চরিত্রের ওপর ভরসা রাখছে, তার ইঙ্গিত মিলেছে। ‘দ্য ফ্যান্টাস্টিক ফোর: ফার্স্ট স্টেপস’ মুক্তির পর ২০২৬ সালে আসছে ‘অ্যাভেঞ্জার্স: ডুমসডে’ ও ‘স্পাইডার-ম্যান ৪’। ২০২৭ সালে থাকছে ‘অ্যাভেঞ্জার্স: সিক্রেট ওয়ার্স’। এছাড়া নতুন ‘এক্স-মেন’ এবং ‘ব্ল্যাক প্যান্থার’-এর কাজও চলছে। তবে ‘ব্লেড’-এর মতো অনেক সিনেমা এখনো অনিশ্চয়তায়।

পূর্বে মার্ভেল স্বল্প পরিচিত চরিত্র নিয়েই বাজিমাত করেছিল। কিন্তু সাম্প্রতিক বিভ্রান্তিকর উপখ্যান ও ব্যর্থ সিক্যুয়েলের কারণে দর্শকের আগ্রহ এখন কমে গেছে নতুন চরিত্রের প্রতি।

Advertisement

আর রবার্ট ডাউনি জুনিয়র তো আর বারবার ফিরতে পারবেন না। যদিও ‘অ্যাভেঞ্জার্স: ডুমসডে’তে তিনি থাকবেন খল চরিত্র ডক্টর ডুম হিসেবে। ফলে নতুন নায়ক তুলে আনতে চাইলে কম খরচে গল্প বলার উপায় খুঁজতে হবে মার্ভেলকে। এমনটাই মনে করছেন বাণিজ্য বিশ্লেষকরা।

‘থান্ডারবোল্টস’-এর ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা নিয়ে মার্ভেল বাজেট কমিয়ে আনছে। এই সিনেমার জন্য ব্যয় হয়েছে ১৮০ মিলিয়ন ডলার। প্রচারে আরও খরচ হয়েছে প্রায় ১০০ মিলিয়ন। অথচ লোকসান এড়াতে এর আয় দরকার ছিল অন্তত ৪২৫ মিলিয়ন ডলার। যা এই অবস্থায় সম্ভব নয় বলেই ধারণা।

তবে মার্ভেলের সুবিধা হলো তাদের সিনেমা শুধু আয়ের উৎস নয় বরং এটি ডিজনি প্লাস, মার্চেন্ডাইজিং, থিম পার্ক ও ক্রুজের মাধ্যমে বহু রকমের ব্যবসার অংশ। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় ‘থান্ডারবোল্টস’-এর চরিত্ররাই আবার ফিরবে ‘অ্যাভেঞ্জার্স: ডুমসডে’তে। দর্শক যদি সিনেমাটি মিসও করে তখন ডিজনি প্লাসে দেখে নিতে পারবে।

তাই প্রশ্ন থেকে যায় মার্ভেল কি আবার নিজেদেরকে নতুন করে আবিষ্কার করতে পারবে, নাকি কেবল পুরোনো সাফল্যের ছায়াতেই বাঁচার চেষ্টা করবে?

এলআইএ/জিকেএস