ভ্রমণ মানেই খরচ নয়, বরং পরিকল্পিত ভ্রমণ মানে সাশ্রয় আর আনন্দের চমৎকার সমন্বয়। আমরা অনেক সময় ভাবি, ঘোরাঘুরি মানেই যেন হাজার হাজার টাকা খরচ হবে। কিন্তু একটু বুদ্ধি খাটালেই খরচের অর্ধেক বাঁচানো যায়।
Advertisement
ভ্রমণকে বিলাসিতা না বানিয়ে, খরচ কমিয়ে তা উপভোগ করুন। এতে আপনি কম খরচে বেশি ভ্রমণ করতে পারবেন। চলুন জেনে নেওয়া যাক কিছু বাস্তবসম্মত কৌশল, যেগুলো অনুসরণ করলে আপনার ঘোরাঘুরির আনন্দ ঠিকই থাকবে, অথচ খরচ হবে অনেকটাই কম।
১. পরিকল্পনার সময় ঠিক করে নিনভ্রমণের জন্য অফ-সিজন সময় বেছে নিন। যেমন, ধরুন যখন দীর্ঘ ছুটিতে সবাই যখন ভ্রমণে ব্যস্ত আপনি তখন না গিয়ে যখন ছুটি কম তখন যান। এতে তখন দর্শনার্থীর ভিড় কম থাকে। হোটেল-বাস ভাড়াও কম থাকে। আর খাবার-দাবারের দামও তুলনামূলকভাবে স্বাভাবিক থাকে।
২. গন্তব্যে বেছে নিন সাশ্রয়ী উপায়বাংলাদেশেই আছে এমন অনেক গন্তব্য যেখানে যাওয়া-থাকা খরচ একেবারেই কম। যেমন-সুনামগঞ্জের টাঙ্গুয়ার হাওর, নেত্রকোনার বিজয়পুর, খুলনার সুন্দরবন, কিংবা কুয়াকাটা সৈকত। আবার আন্তর্জাতিক ভ্রমণের ক্ষেত্রে ভারত, নেপাল, ভুটান বা থাইল্যান্ডের মতো তুলনামূলক কম খরচের দেশগুলো ভেবেচিন্তে নিতে পারেন।
Advertisement
৩. ভ্রমণের সময় দল বেঁধে যাওয়ার পরিকল্পনা করুনএকসঙ্গে ৫-৬ জন মিলে গেলে পরিবহন, থাকার জায়গা ও খাবারের খরচ অনেকটাই ভাগ হয়ে যায়। যেমন ধরুন, একটি মাইক্রোবাস বা ভ্যান রিজার্ভ করলে একা গেলে যেমন খরচ হবে, ছয়জনে গেলে তা ভাগ হয়ে বেশ কমে আসে। হোস্টেল, গেস্টহাউস কিংবা বড় রুম ভাগাভাগি করে থাকার সুযোগও থাকে। তাই দল বেঁধে যাওয়াই সাশ্রয়ী উপায়।
আরও পড়ুননেত্রকোনায় চন্দ্রডিঙ্গার ছায়ায় একদিনভ্রমণ অভিজ্ঞতার ঝাঁপি পূর্ণ করে৪. স্থানীয় খাবার খানঅচেনা শহরে গিয়ে প্রথমেই গুগলে দামি রেস্টুরেন্টে না খুঁজে, আপনার গন্তব্যে গিয়ে আশপাশে দেখে নিন, কোথায় স্থানীয়রা খায়। সেসব জায়গায় খাবারও সস্তা, আর স্বাদেও অথেনটিক। এতে করে একবেলার খাবারেই প্রায় ২০০ থেকে ৩০০ টাকা সাশ্রয় সম্ভব।
৫. স্মার্টফোনকেই বানান আপনার ভ্রমণ গাইডএখনকার যুগে হোটেল, বাস-ট্রেন, এমনকি নৌকা-সবই আগেভাগে অনলাইনে বুক করা যায়। আগেই বুকিং করলে অনেক সময় ডিসকাউন্ট পাওয়া যায়। গুগল ম্যাপ, সহজ, বিডি টিকেটস, বুকিং ডট কম এর মতো অ্যাপ বা ওয়েবসাইটগুলো কাজে লাগান। এতে সময় ও খরচ দুটোই বাঁচবে আপনার।
৬. স্থানীয় পরিবহন ব্যবহার করুনরিজার্ভ বা ভাড়া নেওয়ার বদলে চেষ্টা করুন বাস, ট্রেন বা শেয়ারে গাড়ি ব্যবহার করতে। অনেক ট্যুরিস্ট রিজার্ভ নেন শুধু সময় বাঁচানোর জন্য, কিন্তু আপনি যদি সময় হাতে নিয়ে যান তাহলে ট্রেন বা বাসই যথেষ্ট। যেমন-ঢাকা থেকে খুলনা যেতে গ্রীনলাইন নয়, বেছে নিন সুন্দরবন এক্সপ্রেস ট্রেন, বেচে গেলে খরচ অর্ধেক।
Advertisement
৭. অপ্রয়োজনীয় কেনাকাটা এড়িয়ে চলুনভ্রমণের স্মৃতি মানেই দোকান শোপিস বা অন্যান্য জিনিস কেনা নয়। এই ছোট ছোট জিনিসগুলো কেনার সময় মনে হয় খরচ কম, কিন্তু সেগুলোই পুরো ট্রিপে ১৫ থেকে ২০ শতাংশ বাজেট খেয়ে নেয়। বরং স্থানীয় কিছু দরকারি জিনিস কিনুন যেটা কাজে লাগবে।
৮. ছোট করে ব্যাগ প্রস্তুত করুনযদি বিমানে ভ্রমণ করেন, তাহলে লাগেজ সীমার বাইরে গেলেই অতিরিক্ত খরচ। তাই অপ্রয়োজনীয় পোশাক বা জিনিস না নিয়ে কমপ্যাক্টভাবে ব্যাগ গোছান। শুধু প্লেন নয়, এমনকি ট্রেন বা নৌকায়ও বেশি লাগেজ মানেই ঝামেলা ও খরচ।
৯. প্রাকৃতিক দৃশ্য উপভোগ করুনঅনেক সময় আমরা পেইড ট্যুর বা ভাড়া গাইড না নিলেও নিজে ঘুরে অনেক কিছু দেখে নিতে পারি। বিশেষ করে যেখানে ইকো-ট্যুরিজম বা ওপেন ট্রেইল আছে সেখানে নিজে হাঁটা, বাইসাইকেল কিংবা স্থানীয় কারো সঙ্গে একটু কথা বলে জানা অনেক বেশি রোমাঞ্চকর ও সাশ্রয়ী হয়।
১০. হোমস্টে কিংবা স্থানীয়ভাবে থাকার ব্যবস্থা বেছে নিনবড় বড় হোটেলের বদলে চেষ্টা করুন হোমস্টে, ভাড়া করা ঘর বা ছোট গেস্টহাউস বেছে নিতে। এতে খরচ কমবে, আবার স্থানীয় সংস্কৃতির সঙ্গেও পরিচয় ঘটবে। আবার চাইলে হোস্টের সঙ্গে মিলেমিশে থাকতে পারেন। এতে পাবেন স্থানীয় খাবার, গল্প আর নিরাপদ অভিজ্ঞতা।
১১. টাকা খরচের হিসাব রাখুনপ্রতিদিন কী খরচ হলো সেটা লিখে রাখুন বা ফোনে নোট করুন। একবার খরচ বেড়ে গেলে সেটি কোথা থেকে কমাবেন তা বোঝা সহজ হয়। ভ্রমণের আগে বাজেট ঠিক করে নিন এবং সেই ফ্রেমেই চলুন। প্রয়োজনে একদিনে একটু বেশি খরচ হলে পরদিন তা সামলে নিন।
১২. ট্যুর অপারেটরের ফাঁদে পা দেবেন নাঅনেক সময় বড় বড় অফার দিয়ে ট্যুর প্যাকেজ দেওয়া হয়, কিন্তু সেখানে অনেক হিডেন চার্জ বা খরচ থাকে। তাই নিজে রুট তৈরি করুন, গন্তব্য সম্পর্কে পড়ুন, অভিজ্ঞদের মতামত নিন। এতে শুধু টাকা নয়, সময় ও ভোগান্তিও কমে।
কেএসকে/জেআইএম