ভ্রমণ অভিজ্ঞতার ঝাঁপি পূর্ণ করে

ভ্রমণ ডেস্ক
ভ্রমণ ডেস্ক ভ্রমণ ডেস্ক
প্রকাশিত: ১২:০৮ পিএম, ২২ জুন ২০২৫

মো. ইফতেখার রেজা

স্বজনদের সঙ্গে মেলবন্ধন গড়তে বছরের নির্দিষ্ট মৌসুমে আমরা একত্রিত হই। দর্শনীয় স্থান ঘুরে ভ্রমণপিপাসা মেটাতে এবার স্বল্প সময়ে পরিকল্পনা করে রওয়ানা হলাম কক্সবাজারের উদ্দেশ্যে। চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ থেকে আগের দিন ভোররাতে নিজস্ব পরিচিত গাড়িতে যাতায়াতের হিসাব করে বেরিয়ে পড়া। সৌহার্দপূর্ণ ‘মিয়া বাড়ি’র সদস্যরা ঘুরতে ভালোবাসে।

বয়োজ্যেষ্ঠদের প্রেরণায় উল্লসিত হয়ে উষ্ণ আবহাওয়ায় ছোট্ট সদস্য শুকরিয়া, আফরাজ, ইভা, ইফাতদের সঙ্গে গল্প আর খুনসুটিতে পৌঁছে গেলাম ভোরে। মোটেলে উঠে হাত-মুখ ধুয়ে সকালের নাস্তা করার সময় জানালা দিয়ে কমলা রঙের সূর্য দেখছি। বিশ্রাম নেওয়ার পর রৌদ্র-ছায়ার লুকোচুরির মধ্যে ডালমুঠ খাচ্ছি আর চিকচিক করা বালি খালি পায়ে মেখে মনে হচ্ছে, যেন শৈশবে ফিরে গেছি।

হঠাৎ চোখে পড়লো সবুজের সমারোহের মধ্যে কিছু ফড়িং, আমায়িক একটি পেখম তোলা ময়ূর আর অপরাজিতার লতায় ঘেরা দারুণ শোভাময় পরিবেশ। কিছু ফলের গাছে ডালিমের ফুল, কুঁড়ি এসেছে; দেখতে সত্যিই মনোমুগ্ধকর। একটি বেলিফুলের ভারী মিষ্টি ঝাঁকড়া গাছে সাদা থোকা থোকা ফুল নুয়ে পড়ছে। যেমন নুইয়ে পড়ে পনেরো বছর বয়সী কোমল মেরুদণ্ডের মা তার শিশুকে কোলে নিয়ে। দুপুরের সময় রেস্তোরাঁয় বহু বিদেশি পর্যটকের উপস্থিতি চোখে পড়লো।

দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে কেবল কক্সবাজারেই বহুমাত্রিক পর্যটন শিল্পের বিপুল সম্ভাবনা আছে। বাংলাদেশ পর্যটন শিল্পের আদর্শ হতে পারে। বর্তমানে এ খাত থেকে বছরে প্রায় ৭৬.১৯ মিলিয়ন ডলার আয় হয়। দুপুরে সাদা ভাত, ডাল, মুরগির মাংস খেয়ে বিকেলে ঘোরাঘুরি শেষ করি।

পরদিন হোটেল-মোটেল আর রেস্তোরাঁর অভিজ্ঞতা ছেড়ে ‘সি পার্ল ওয়াটার পার্কে’ যেতে চাইলাম। প্রবেশমূল্যের দিকে নজর দিতেই চোখ কপালে উঠলো। বাজেটের বাইরে খরচ হবে। তাই মেরিন ড্রাইভের পথে কিছু সময় ইনানী বিচ ও ‘সোনার পাড় বিচে’ কাটালাম। চমৎকার সময় উপভোগ করলাম।

একপাশে পাহাড়, আরেক পাশে সমুদ্র এ সৌন্দর্যের গভীরতা স্মৃতিময় করে তুললো দুটি দূরন্ত বালকের আগমন। হাসিমাখা মুখের ‘হোসাইন’ আর ‘শফিক’ পরিচিত হলো। জানলাম ওরা আশপাশেই থাকে। মুখে হাসি থাকলেও জীবনের বাস্তবতা অনিশ্চিত। দর্শনার্থী ভেবে ছবি তুলে দিলো।

আমরা খুশি হয়ে ওদের কিছু বকশিস দিতে চাইলেও কোনো ভাবেই তা নেয়নি বরং একটাই আবদার ছবি তুলে দিক আমাদের স্মার্ট ফোনে। স্মৃতিবন্দি করলাম জীবন ও জীবিকার কিছু স্থিরচিত্র। লবণ চাষিদেরও দেখতে পেলাম। দুপুরে আজ রাঁধুনি রান্না করলেন গরুর মাংস, শাহী পোলাও আর ডিমের কারি। খেয়ে বিশ্রাম নিয়ে ব্যস্ত হয়ে প্রিয়তমাকে মুঠোফোনে সমুদ্রের ঢেউ দেখাতে গেলাম কিন্তু নেটওয়ার্ক ছিল ভীষণ দুর্বল।

পড়ন্ত বিকেলে ঠোঁটে ভাপ ওঠা গরম চা আর প্রিয় ‘জবা ফুলটা’ বাস্তবে সঙ্গে ছিল না। ভ্রমণে তৃপ্ত হলেও বুকের মাঝে এক অপূর্ণতা হু হু করে উঠলো। বাকি রইলো চিৎকার করে বলা: ‘আমি তোমায় সমুদ্রের চেয়েও বেশি ভালোবাসি, তোমার চোখ দুটি সমুদ্রের মতোই গভীর ও শান্ত। তুমি আমার অমরাবতী।’ ‘তুমি আকাশের বুকে বিশালতার উপমা’ গানটি গাইতেই সূর্যের মতো রক্তিম হয়ে চোখ ভিজে উঠলো। যেন সমুদ্রের ঢেউ বুক ছুঁয়ে গেল। তার অনুপস্থিতি বিদায়লগ্নকে আরও বিষণ্ণ সুন্দর করে তুললো। স্মৃতি জমা হলো কর্ণকুহরে, প্রতিধ্বনিত হলো, একসঙ্গে আমাদের পুরোটা পথ চলা এখনো বাকি।

লেখক: শিক্ষার্থী, ড্যাফোডিল ইনস্টিটিউট অব আইটি, চট্টগ্রাম।

এসইউ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।