সাব্বির হাসান নিরব
Advertisement
দেশজুড়ে বিখ্যাত কিশোরগঞ্জের পাগলা মসজিদ। প্রায় আড়াইশ বছরের পুরোনো মসজিদটি কালের বিবর্তনে আধুনিকতার ছোঁয়ায় বর্তমানে দৃষ্টিনন্দন রূপ লাভ করেছে। কিশোরগঞ্জের হারুয়া নামক এলাকায় নরসুন্দা নদীর তীরঘেঁষে মসজিদটি অবস্থিত। জেলার পাশাপাশি পার্শ্ববর্তী ময়মনসিংহসহ দেশের সব জেলার ধর্মভীরু মানুষেরা মসজিদে নামাজ আদায়ের জন্য আসেন।
প্রায় আড়াইশ বছরের পুরোনো বলে মসজিদটির ইতিহাস ঘিরে আছে বেশকিছু জনশ্রুতি। কেউ বলেন, পাগলবেশী এক লোক নরসুন্দা নদীতে মাদুরে ভেসে মসজিদের এখানে অবস্থান নেন। ফলে তাকে ঘিরে ভক্তদের সমাগম শুরু হতে থাকে। কিছুদিন পর পাগলের মৃত্যুর পর তার কবরের পাশে একটি মসজিদ নির্মাণ করা হয়। যা বর্তমানে পাগলা মসজিদ নামে পরিচিত।
অন্য এক জনশ্রুতি থেকে জানা যায়, হয়বতনগর এলাকার জমিদার দেওয়ান হয়বত দাত খানের প্রথম স্ত্রী আয়শা দাত খান এ মসজিদের প্রতিষ্ঠাতা। তিনি ছিলেন নিঃসন্তান। তাকে সবাই পাগলা বিবি বলে ডাকতেন। একদিন তিনি স্বপ্নে দেখেন, নরসুন্দার তীরে একটি মসজিদ প্রতিষ্ঠা করেছেন। যার ফলেই বর্তমানের পাগলা মসজিদ।
Advertisement
সবচেয়ে বেশি গ্রহণযোগ্য জনশ্রুতি; যা থেকে জানা যায়, প্রাচীন বাংলার ইতিহাসের ১২ ভূঁইয়ার মধ্যে অন্যতম একজন জমিদার ঈসা খাঁর পঞ্চম পুরুষ হয়বতনগরের প্রতিষ্ঠাতা দেওয়ান হয়বত দাত খানের দৌহিত্র দেওয়ান জিলকদর খান ওরফে জিলকদর পাগলা সাহেব এখানে নামাজ পড়তেন এবং ধ্যানমগ্ন থাকতেন। পরে তার নামানুসারে মসজিদটির নামকরণ করা হয় পাগলা মসজিদ।
প্রথমদিকে যদিও হয়বতনগরের দেওয়ানবাড়ির ওয়াকফকৃত ১০ শতাংশ জমিতে মসজিদটি নির্মাণ করা হয়। তবে বর্তমানে আধুনিক স্থাপত্যশৈলীতে নির্মিত পাগলা মসজিদের ছাদে তিনটি বড় গম্বুজ এবং বিশাল উঁচু একটি মিনার আছে। প্রায় ছয়শ মুসল্লির বেশি ধারণক্ষমতাসম্পন্ন মসজিদে নারীদের জন্যও নামাজ আদায়ের পৃথক ব্যবস্থা আছে।
আরও পড়ুন নুহাশ পল্লীতে একদিনের আনন্দভ্রমণ একলা পথে এক শান্তির খোঁজেবর্তমানে মসজিদটির সৌন্দর্য দ্বিগুণ হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। মসজিদের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া নদীর ওপর দৃষ্টিনন্দন সেতু নির্মাণে। মসজিদের পাশে কৃষ্ণচূড়াসহ বাহারি ফুলের সৌন্দর্যে পর্যটকদের চোখ জুড়িয়ে যায়। রাতে পাগলা মসজিদের সৌন্দর্য যেন দ্বিগুণ হয়ে ওঠে। ঝলমলে বৈদ্যুতিক বাতিতে মসজিদ এবং আঙিনাকে নতুন রূপ দেয়। সামনে আছে বেশকিছু দোকানপাট। যেখানে বিক্রি হয় পবিত্র কুরআন শরীফ, তসবিহ, জায়নামাজসহ ধর্মীয় জিনিসপত্র। ফলে পর্যটকেরা এগুলো কিনে নিতে পারেন স্মৃতি হিসেবে।
দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে অনেক পর্যটক আসেন পাগলা মসজিদে। বিশেষ করে শুক্রবার জুমার নামাজে স্থানীয় এবং বিভিন্ন জেলার পর্যটকদের উপস্থিতিতে ভরে ওঠে মসজিদের আঙিনা। ইসলাম ধর্মের পাশাপাশি অন্য ধর্মের মানুষের কাছে পাগলা মসজিদ সার্বজনীন পবিত্র ধর্মীয় কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত। সব ধর্মের মানুষেরা বিশ্বাস করেন, কেউ যদি খাস নিয়তে পাগলা মসজিদে কোনো কিছু দান করেন, তাহলে মনের বাসনা পূর্ণ হবে। এমন বিশ্বাসের কারণে প্রচুর পরিমাণ দান করেন।
Advertisement
জানা যায়, মসজিদের আধুনিকায়ণে ১৫০ কোটি টাকার মেগা-প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। যার মাধ্যমে মসজিদটিকে আন্তর্জাতিক মানের ছয় তলা বিশিষ্ট দৃষ্টিনন্দন ইসলামি কমপ্লেক্স নির্মাণ করা হবে। যার ধারণক্ষমতা থাকবে পাঁচ হাজারের বেশি মানুষ। এটি শুধু একটি মসজিদ নয়, একটি ইতিহাস, বিশ্বাস ও অনুভূতির নাম। ধর্ম, সংস্কৃতি, মানবিকতার সম্মিলিত প্রতিচ্ছবি এ মসজিদ।
যেভাবে যাবেনঢাকার কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে কিশোরগঞ্জ আসার জন্য আছে ৩টি আন্তঃনগর ট্রেন। সবচেয়ে ভালো হয় সকালের এগারোসিন্ধুরের প্রভাতী ট্রেনে করে আসা। যার ফলে শুক্রবার দিনে জুমার নামাজের আগেই মসজিদে পৌঁছানো যাবে। শ্রেণি অনুযায়ী ১৩৫-৩৬০ টাকা করে ট্রেনের ভাড়া। সময় লাগবে প্রায় চার ঘণ্টা। কিশোরগঞ্জ রেলওয়ে স্টেশন থেকে অটোরিকশা করে পাগলা মসজিদে আসতে ৫০-৬০ টাকা ভাড়া এবং সময় লাগবে ৩০ মিনিটের মতো।
বাসে আসার জন্য ঢাকার মহাখালী থেকে অনন্যা পরিবহন, অনন্যা ক্লাসিক এবং গোলাপবাগ থেকে যাতায়াত, অনন্যা সুপার বাসে কিশোরগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড আসা যায়। ভাড়া লাগবে ২৭০-৩৫০ টাকা। মহাখালী থেকে সময় লাগবে প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টা এবং গোলাপবাগ থেকে চার ঘণ্টা। আবার কিশোরগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড থেকে অটোরিকশায় করে সরাসরি পাগলা মসজিদে আসতে ৩০-৪০ টাকা নেবে। সময় লাগবে ৩০ মিনিটের মতো।
লেখক: অনার্স দ্বিতীয় বর্ষ, বাজিতপুর সরকারি কলেজ, কিশোরগঞ্জ।
এসইউ/এএসএম