চাপা কষ্টে তরমুজ চাষি, বিক্রেতার অট্টহাসি

কৃষকের অক্লান্ত পরিশ্রমের পর মাঠ থেকে বাজারে যায় তরমুজ। কিন্তু হাত ঘুরলেই বেড়ে যায় তরমুজের দাম। ১৫০ টাকার তরমুজ বাজারে বিক্রি হয় ৬০০ টাকা। মৌসুমের প্রথম ফসল হিসেবে বাজারে এলেও ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হন কৃষক। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর বলছে, খুচরা বিক্রেতারাই দাম বাড়ান, যা নিয়ন্ত্রণে নিয়মিত অভিযান চালানো হচ্ছে।
কৃষক থেকে শুরু করে খুচরা বিক্রেতা—চার হাত ঘুরে চারগুণ দামে বিক্রি হচ্ছে তরমুজ। সাধারণত কৃষকদের কাছ থেকে তরমুজ কেনেন পাইকাররা। কখনো ক্ষেত চুক্তিতে, কখনো পিস হিসেবে। ক্ষেত থেকে পিস হিসেবে কেনা তরমুজ রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্রি হয় আড়তদারের কাছে।
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
ক্ষেত থেকে কৃষক প্রতি পিস তরমুজ বিক্রি করেন ১৫০ টাকা। পাইকার ও আড়তদার সেটি খুচরা বিক্রেতাদের কাছে বিক্রি করেন ১০০-৩০০ টাকা। খুচরা বিক্রেতারা ৩০০ টাকার তরমুজ বিক্রি করেন ৫০০-৭০০ টাকা। তারা লাভ করেন শতকরা ৬০-১৩০ ভাগ। আড়তদার আর খুচরা বিক্রেতারা দ্বিগুণ লাভ করলেও ন্যায্যমূল্য পান না কৃষক। সিন্ডিকেটের গ্যারাকলে ভোক্তারা কিনতে বাধ্য হন চড়া দামে।
কৃষি বিপণন আইন অনুযায়ী, কৃষক থেকে খুচরা বিক্রেতা পর্যন্ত সর্বোচ্চ ৩০ শতাংশ লাভ করা যাবে। কিন্তু খুচরা বিক্রেতারা ৬০-১৩০ শতাংশ পর্যন্ত লাভ করেন। এ বছর ফলন ভালো হয়েছে। যদিও সার ও কীটনাশকের দাম বাড়তি। শ্রমিক খরচ, খাবার খরচ সবকিছুই বেশি। ফলে কৃষকেরা সব সময় লসেই থাকেন।
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
তরমুজ পাকার সময় হলে পাইকাররা কৃষকের জমি কেনেন। পরে সংগ্রহ, পরিবহন ও খাজনাসহ একেকটি তরমুজ ২০০ টাকার মতো খরচ পড়ে। যা গড়ে ২২০ টাকায় আড়তদারের কাছে বিক্রি করেন। এ বছর দাম মোটামুটি ভালো। বাজারে চাহিদাও স্বাভাবিক। বড় তরমুজের চেয়ে মাঝারি ও ছোট তরমুজের চাহিদা বেশি। বর্তমানে ১০০-২৫০ টাকায় তরমুজ পাওয়া যাচ্ছে।
বাজারে তরমুজের সরবরাহ কম, তাই দাম বেশি বলে দাবি করেন ব্যবসায়ীরা। বাজারে আগাম তরমুজ ছাড়া সব রকমের তরমুজ এখনো আসেনি। তাই দাম একটু বেশি। তবে তরমুজ ভালো হলেও তাদের, মন্দ হলেও তাদের। বিক্রির সময় ক্রেতারা খারাপটা আর নেন না।
বিজ্ঞাপন
অনেক ক্রেতার অভিযোগ, এখন তরমুজের ভরা মৌসুম। বাজারেও পর্যাপ্ত তরমুজ আছে। কিন্তু দামের দিক থেকে সাধারণ ক্রেতার নাগালের বাইরে। তরমুজ এখন ভোগ্যপণ্য নয়, বিলাসি পণ্য হয়ে গেছে। কৃষি বিপণন বিধি অনুযায়ী, তরমুজের ক্ষেত্রে উৎপাদনের পর থেকে ভোক্তা পর্যন্ত পৌঁছাতে ৩০% লাভ করতে পারবেন। তবে বাজারে কিছু অসঙ্গতি আছে, যা নিয়মিত তদারকি করা জরুরি।
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর বাজারে গেলে দাম ঠিক থাকে। তারা চলে এলেই আবার দাম বেশি রাখার চেষ্টা করে। ভোক্তারা সচেতন না হওয়ায় সুযোগটা ব্যবসায়ীরা নিচ্ছে। তাই দরকার নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করা।
এসইউ/জেআইএম
আরও পড়ুন
বিজ্ঞাপন
লোকসান চাষিদের
বিক্রি না হওয়া টমেটো ময়লার ভাগাড়ে

টমেটো চাষে বাম্পার ফলন হলেও লাভের মুখ দেখেননি চাষিরা। গরম শুরু হওয়ায় গাছ শুকিয়ে টমেটো পচতে শুরু করেছে। বাধ্য হয়ে চাষিরা ময়লার ভাগাড়ে ফেলে দিয়েছেন টমেটো। খুলনা জেলার কৃষিনির্ভর তেরোখাদা উপজেলা ঘুরে এমন চিত্র দেখা যায়।
জানা যায়, তেরোখাদা অঞ্চলের অধিকাংশ মানুষ কৃষিনির্ভর। বারো মাস ধান, শাক-সবজি ও বিভিন্ন ফসল উৎপাদনে ব্যস্ত থাকেন তারা। প্রতি মৌসুমে প্রচুর শাক-সবজি উৎপাদিত হয়। সেই সাথে কৃষিযোগ্য জমির মধ্যে এবার শীত মৌসুমে প্রায় ১০০ হেক্টর জমিতে টমেটো উৎপাদিত হয়েছে। কিন্তু সে টমেটো বিভাগীয় শহর খুলনার মুখ দেখেনি। অধিকাংশ টমেটো নড়াইল জেলার বাজারে সরবরাহ হলেও একটি বড় অংশ শীতের শেষ পর্যন্ত রেখেও বিক্রি করতে পারেননি কৃষকেরা।
প্রতি বছর নদীর কারণে তেরোখাদা থেকে সরাসরি খুলনার আড়তে কৃষিপণ্য পরিবহনে জটিলতা থাকায় কৃষকদের এমন সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। অন্যদিকে টমেটো ব্যবহৃত খাদ্যপণ্য উৎপাদনকারী কোম্পানিগুলো এ অঞ্চল থেকে টমেটো সংগ্রহ না করায় প্রতি বছর লোকসানের সম্মুখীন হতে হচ্ছে। টমেটো সস কোম্পানিগুলো শীতকালে খুলনার সব অঞ্চলের টমেটো সংগ্রহ করলেও তেরোখাদা অঞ্চলের উৎপাদিত টমেটো সংগ্রহ হয়নি। ফলে ক্ষেতে পচে নষ্ট হয়েছে অনেক টমেটো। অনেক চাষি ক্ষোভে টমেটো ফেলে দিয়েছেন ময়লার ভাগাড়ে।
স্থানীয় চাষিরা জানান, প্রতি বছরই শীতের শেষে টমেটো ফেলে দিতে হয়। সস, চাঁটনি এবং টমেটো জাতীয় খাবার তৈরিতে কাঁচা-পাকা টমেটো ব্যবহার হলেও দেশের বড় বাণিজ্যিক কোম্পানিগুলো এ অঞ্চলের টমেটো সংগ্রহ করে না। ফলে টমেটোতে লোকসান গুনতে হচ্ছে স্থানীয় চাষিদের।
তেরোখাদা উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলার ছয়টি ইউনিয়নে প্রায় পনেরো হাজার হেক্টর কৃষিযোগ্য জমি আছে। সব মৌসুমেই এসব জমিতে শাক-সবজি উৎপাদিত হচ্ছে। পাশাপাশি ২০২৪ সালের শীত মৌসুমে প্রায় ১০০ হেক্টর জমিতে টমেটো উৎপাদিত হয়েছে। প্রতি হেক্টর জমিতে প্রায় ২০ টন টমেটোর ফলন পেয়েছেন চাষিরা।
ছাগলাদহ ইউনিয়নের চাষি যতেন্দ্র বাগচী জানান, তিনি নিজের ২ বিঘা জমিতে শাক-সবজি এবং টমেটো চাষ করেন। গত তিন বছর কৃষি অফিসের পরামর্শে আধুনিক পদ্ধতিতে অন্যান্য সবজির পাশাপাশি টমেটো চাষ করে বাম্পার ফলন হয়েছে। এ বছর বাম্পার ফলন হলেও টমেটো বিক্রি করতে অনেক কষ্ট হয়েছে। ২ বিঘা জমিতে প্রায় ৩০০ কেজি ফলন হলেও শীতের শেষে ২ টাকা কেজি দরেও বিক্রি করতে পারেননি তিনি।
বারাসাত ইউনিয়নের চাষি কারিমুল বলেন, ‘এবার শীতে টমেটোর প্রচুর ফলন হয়েছে। তবে বিক্রি করে লাভ করতে পারিনি। খুলনার আড়তে শাক-সবজি নিয়ে গেলে খরচ অনেক পড়ে। পাইকাররা এত দাম দিয়ে কিনতে চান না। এ অঞ্চলে বড় সস কোম্পানিগুলোর কোনো অফিসার আসেন না। তারা সরাসরি এলে অনেক কম দামে টমেটো কিনতে পারতেন। এতে আমাদের টমেটো ফেলে দিতে হতো না।’
তেরোখাদা উপজেলা কৃষি অফিসার শিউলি মজুমদার বলেন, ‘এ অঞ্চলে প্রচুর শাক-সবজি উৎপাদিত হয়। এবার কৃষকেরা টমেটো চাষে সফল হয়েছেন। কিন্তু ফলনের তুলনায় বিক্রি কম হয়েছে। তাই কৃষকেরা কিছুটা হতাশ হয়েছেন। টমেটো বিক্রির নতুন ক্ষেত্র তৈরি করতে পারলে কৃষকেরা লাভের মুখ দেখতে পারবেন।’
মো. আরিফুর রহমান/এসইউ/জিকেএস
ধরলা নদীর তীরে মিষ্টি কুমড়া চাষ

লালমনিরহাটে ধরলা নদীর তীরে পতিত জায়গায় মিষ্টি কুমড়া চাষ করে বাড়তি আয় করছেন কৃষকেরা। এমন ফলনে পরিবারের চাহিদা মেটাতে পেরে খুশি তারা। সেখানে মিষ্টি কুমড়ার ভালো ফলন হয়েছে। প্রতিটি গাছে পাঁচ থেকে আটটি কুমড়া ধরেছে। কৃষি অফিস থেকে তাদের বিনা মূল্যে বীজ দেওয়া হয়।
জানা গেছে, পাটগ্রাম উপজেলা কৃষি বিভাগের সহায়তায় কৃষকদের মাঝে বিনা মূল্যে মিষ্টি কুমড়ার বীজ দেওয়া হয়। মিষ্টি কুমড়ার গাছে ৫-১০টি ফল আসে। বিনা মূল্যে বীজ ও কম খরচে ভালো ফসল পেয়ে খুশি চাষিরা। পাশাপাশি বাজারে বিক্রি করেও লাভবান হচ্ছেন। প্রতিটি কুমড়া কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩০-৩৫ টাকা।
এ অঞ্চলে মিষ্টি কুমড়া চাষ এনে দিয়েছে নতুন গতি। কৃষকদের জীবন-জীবিকায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে এই সফল পরিবর্তন। জেলায় উৎপাদিত মিষ্টি কুমড়া রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহ করা হচ্ছে।
কুমড়া চাষি সাফিউল ইসলাম বলেন, ‘নদীর কাদা মাটিতে কৃষি বিভাগের পরামর্শ নিয়ে মিষ্টি কুমড়ার বীজ রোপণ করলে বাম্পার ফলন আসে। দুই-এক মাসের মধ্যে কুমড়াগুলো তোলা হবে। তা সংগ্রহ করে বর্ষাকালে বিক্রি করলে আরও বেশি দাম পাওয়া যাবে।’
লালমনিরহাট কৃষি বিভাগ বলছে, লালমনিরহাট কৃষি অধিদপ্তর এ বছর জেলায় রবি মৌসুমে ২০০ হেক্টর জমিতে মিষ্টি কুমড়া চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। তবে তা ছাড়িয়ে প্রায় ৩০০ হেক্টর জমিতে কুমড়া চাষ হয়েছে।
পাটগ্রাম কৃষি বিভাগ বলছে, আগামীতে নদীর ধারে পতিত জায়গা নির্বাচন করে কৃষকদের মাঝে বিনা মূল্যে বীজ সরবরাহ করা হবে। সেখানে বড় পরিসরে চাষবাদ করার পরিকল্পনা আছে।
পাটগ্রাম উপজেলা কৃষি উপসহকারী শাহিনুর রহমান বলেন, ‘আমরা কৃষকদের পরামর্শ দিয়েছিলাম। এমনকি তাদের বিনা মূল্যে বীজও দিই। এতে প্রতিটি গাছে ৫-১০টি ফল এসেছে। প্রতিটি ৫-৭ কেজি হবে। পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে তারা বাজারে বিক্রি করেও বাড়তি আয় করতে পারবেন।’
পাটগ্রাম উপজেলা কৃষি অফিসার আব্দুল গফফার বলেন, ‘উপজেলার পতিত জায়গাগুলো চাষাবাদ করার জন্য কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। এ লক্ষ্যে ধরলা নদীর তীরে মিষ্টি কুমড়া চাষের জন্য বিনা মূল্যে বীজ সরবরাহ করা হয়েছে। আগামীতে বড় পরিসরে করা হবে। এ সাফল্য দেখে অনেক কৃষক মিষ্টি কুমড়া চাষে আগ্রহী হবেন।’
রবিউল হাসান/এসইউ/জেআইএম
এক ফোঁটা পানি, এক ফোঁটা জীবন

‘পানির অপর নাম জীবন’—কথাটি শুধু একটি বাক্য নয়, এ যেন পৃথিবীর সবচেয়ে বড় বাস্তবতা। আমাদের শরীর থেকে শুরু করে প্রকৃতি, কৃষি, শিল্প—সবকিছুর মূলেই আছে পানি। অথচ দিন দিন বিশুদ্ধ পানির সংকট তীব্র হচ্ছে। সেই সংকট মোকাবিলার গুরুত্ব ও করণীয় সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করতেই প্রতি বছর ২২ মার্চ পালিত হয় ‘বিশ্ব পানি দিবস’।
বিশ্ব পানি দিবসের যাত্রা
১৯৯২ সালে ব্রাজিলের রিও ডি জেনিরোতে অনুষ্ঠিত জাতিসংঘের পরিবেশ ও উন্নয়ন সম্মেলনে প্রথমবারের মতো বিশ্ব পানি দিবস পালনের প্রস্তাব করা হয়। এরপর ১৯৯৩ সাল থেকে জাতিসংঘের আহ্বানে বিশ্বব্যাপী পালিত হয়ে আসছে দিনটি। প্রতি বছর একটি নির্দিষ্ট প্রতিপাদ্যের আলোকে বিশ্বজুড়ে পানি সংরক্ষণ, নিরাপদ পানি সরবরাহ ও ব্যবস্থাপনা নিয়ে নানা কর্মসূচি পালিত হয়।
২০২৫ সালের বিশ্ব পানি দিবসের প্রতিপাদ্য ‘হিমবাহ সংরক্ষণ’, যা জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলা ও নিরাপদ পানির ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করার ওপর গুরুত্বারোপ করে। এ প্রতিপাদ্য আমাদের মনে করিয়ে দেয়, নিরাপদ পানি নিশ্চিত করা ও জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবিলায় আরও দ্রুত ও কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে।
বিশ্বজুড়ে বিশুদ্ধ পানির সংকট
বিশ্বের প্রায় ২২০ কোটি মানুষ এখনো নিরাপদ পানির সুবিধা থেকে বঞ্চিত। ইউনিসেফ ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক গবেষণায় দেখা গেছে, ২০২৩ সাল পর্যন্ত বিশ্বের মোট জনসংখ্যার প্রায় ২৬% মানুষ বিশুদ্ধ পানির সুবিধা পাচ্ছে না। এর মধ্যে দক্ষিণ এশিয়া, আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যের অনেক দেশেই সুপেয় পানির তীব্র অভাব। শহরগুলোতে পানির স্তর নেমে যাচ্ছে, শিল্প-কারখানা ও দূষিত বর্জ্যের কারণে স্বাভাবিক জলাধার নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তন ও অনিয়ন্ত্রিত নগরায়নও এ সংকটকে আরও প্রকট করে তুলছে।
বাংলাদেশের পানি সংকট: সমস্যা কোথায়?
বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ হলেও সুপেয় পানির সংকট ক্রমশ ভয়াবহ হয়ে উঠছে। দেশের ৪১ শতাংশ মানুষ এখনো নিরাপদ পানির সুবিধা থেকে বঞ্চিত। বাংলাদেশে নিরাপদ পানি সংকটের কয়েকটি কারণ হলো:
আর্সেনিক দূষণ: বাংলাদেশের অনেক গ্রামীণ এলাকায় ভূগর্ভস্থ পানিতে আর্সেনিক দূষণ প্রকট। আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী প্রতি লিটারে ১০ মাইক্রোগ্রামের বেশি আর্সেনিক থাকা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর, কিন্তু অনেক এলাকায় তা ৫০ মাইক্রোগ্রামেরও বেশি।
নদীদূষণ: শিল্পবর্জ্য, প্লাস্টিক ও পয়োনিষ্কাশন সমস্যার কারণে দেশের প্রধান নদীগুলো মারাত্মক দূষিত। বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষ্যা, কর্ণফুলী ও বালু নদীর পানি প্রায় ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।
নগর এলাকায় পানির সংকট: রাজধানী ঢাকাসহ বড় শহরগুলোতে পানির স্তর দ্রুত নিচে নেমে যাচ্ছে। ওয়াসার হিসাব অনুযায়ী, প্রতিদিন প্রায় ২৪০ কোটি লিটার পানির প্রয়োজন হয় ঢাকাবাসীর, কিন্তু অনেক সময় তা সরবরাহ করা সম্ভব হয় না।
খরার প্রভাব: দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে বিশেষ করে রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ এলাকায় খরার কারণে পানির অভাব তীব্র হচ্ছে।
নিরাপদ পানি নিশ্চিত করতে আমাদের করণীয়
পানি সংকট মোকাবিলায় ব্যক্তি পর্যায় থেকে শুরু করে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ পর্যন্ত নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
ব্যক্তি পর্যায়ে করণীয়
১. অপ্রয়োজনে পানি অপচয় বন্ধ করতে হবে।
২. বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ ও ব্যবহারের দিকে মনোযোগ দিতে হবে।
৩. ব্যবহৃত পানিকে পুনরায় পরিশোধন করে পুনর্ব্যবহার করতে হবে।
সরকারি উদ্যোগ
১. নদীদূষণ রোধে কঠোর আইন প্রয়োগ করতে হবে।
২. টেকসই পানি ব্যবস্থাপনার জন্য গবেষণা ও প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়াতে হবে।
৩. গ্রামীণ অঞ্চলে নিরাপদ পানির সহজলভ্যতা নিশ্চিত করতে আরও গভীর নলকূপ স্থাপন করা প্রয়োজন।
সামাজিক সচেতনতা
পানির অপচয় রোধে সামাজিক সচেতনতাও একটি গুরুত্বপূর্ণ উপায়। পানির অপচয় রোধে আমাদের গণসচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। এ ছাড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পানি ব্যবহারের সঠিক নিয়ম শেখানো জরুরি।
মনে রাখতে হবে, বিশ্বের জলবায়ু পরিবর্তন, নগরায়ন ও জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে নিরাপদ পানির চাহিদা বাড়ছে কিন্তু সরবরাহ কমছে। এ ক্ষেত্রে আমাদের দায়িত্ব হলো পানির সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনায় যত্নবান হওয়া। ‘এক ফোঁটা পানি, এক ফোঁটা জীবন’—সত্যটি মনে রেখে আমাদের সবাইকে পানির গুরুত্ব বুঝতে হবে এবং সুস্থ ভবিষ্যৎ গড়ে তুলতে দায়িত্ব নিতে হবে।
বিশ্ব পানি দিবসে আমরা শপথ নিই—নিরাপদ পানি সংরক্ষণে দায়িত্বশীল হবো, পানির অপচয় রোধ করবো এবং আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি নিরাপদ ও সুস্থ পরিবেশ গড়ে তুলবো।
এসইউ/এএসএম
মিরসরাইয়ের পাহাড়ে চাষ হচ্ছে থাই সফেদা

চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ের পাহাড়ে চাষ হয়েছে থাই সফেদা। তরুণ কৃষি উদ্যোক্তা মো. ওমর শরীফ তার বাগানে এ ফলের চাষ করেছেন। গত ৩ বছর ধরে গাছে ফল আসছে। এবার তিনি বাজারে বিক্রিও করেছেন। ভিনদেশি সফেদা চাষ করে সফলতা পেয়েছেন তিনি। চারা লাগানোর ৩ বছরের মাথায় গাছে ধরেছে সফেদা। উঁচু-নিচু পাহাড়ের গাছে থোকায় থোকায় ঝুলছে থাই সফেদা। নির্জন গহীন পাহাড়ে বিদেশি এ ফল প্রথমবার দেখে অবাক হচ্ছেন অনেকে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মিরসরাইয়ে প্রথমবারের মতো থাই সফেদা পরীক্ষামূলক চাষ করে সফল হয়েছেন তরুণ কৃষি উদ্যোক্তা মো. ওমর শরীফ। ২০২২ সাল থেকে গাছে ফলন আসতে শুরু করেছে। আগামীতে তিনি চাষের পরিধি আরও বাড়ানোর পাশাপাশি চারাও বাজারজাত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
জোহরা এগ্রো ফামর্স অ্যান্ড নার্সারিতে গিয়ে দেখা গেছে, ওমর শরীফের এ বাগানে আছে অনেক দেশি-বিদেশি ফলের গাছ। আছে বিদেশি অ্যাভোকাডো, মিয়াজাকি (সূর্যডিম) কিউজাই, ব্যানানা ম্যাংগো, ইন্দোনেশিয়ান ব্রুনাই কিং, কিং অব চাকাপাত, আলফেনসো, আলফানচুন এবং থাই ব্যানানা।
এ ছাড়াও আছে দারচিনি, লবঙ্গ, পুলসান, রাম্বুটান, আপেল, তেঁতুল, থাই সফেদা, চেনাক ফ্রুট, থাই বেরিকেডেট মাল্টা, বারোমাসি মাল্টা, চাইনিজ কমলা, দার্জিলিং কমলা, চায়না-৩ লিচু, লটকন, ভিয়েতনাম নারিকেল এবং শ্রীলঙ্কান নারিকেল।
জোহরা এগ্রো ফামর্স অ্যান্ড নার্সারির মালিক মো. ওমর শরীফ বলেন, ‘২০১৯ সালে থাই সফেদার ৪০০ গাছের চারা সংগ্রহ করে লাগানো হয়। কিন্তু আগুনে সব গাছ পুড়ে যায়। মাত্র ৮-১০টি গাছ বেঁচে যায়। সেগুলোয় এখন ফল দিচ্ছে। প্রতিটি গাছে ৫০-৬০ কেজি ফলন এসেছে। আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধবদের দেওয়ার পর কিছু ফল বাজারে বিক্রি করেছি। আগামীতে ফলন আরও বাড়তে পারে। এ সফেদা যেমন মিষ্টি; তেমন সুস্বাদু। প্রথমে ফল আসে একটু কম। এখন ভালো ফলন এসেছে।’
মিরসরাই উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা প্রতাপ চন্দ্র রায় বলেন, ‘সফেদা খুব ভালো একটি ফল। এতে আছে প্রচুন আয়রন। যা গর্ভবতী ও শিশুদের জন্য খুবই উপকারী। মস্তিষ্কের গঠনে এ ফলের জুড়ি নেই। তরুণ উদ্যোক্তা ওমর শরীফের বাগানে দেশি-বিদেশি অনেক ফল গাছ আছে। তার মধ্যে থাই সফেদা অন্যতম। ওমর শরীফের বাগানে গিয়ে দেখে আসবো।’
এম মাঈন উদ্দিন/এসইউ/এএসএম
ভোলার চরাঞ্চল
তরমুজের বাম্পার ফলনে ব্যাপক লাভের আশা কৃষকের

ভোলার বিচ্ছিন্ন চরাঞ্চলে এ বছরও তরমুজের ব্যাপক ফলন হয়েছে। মাটি ও আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় রোগ ও পোকামাকড়ের আক্রমণ কম হওয়ায় অন্য বছরের তুলনায় উৎপাদন খরচও কিছুটা কমেছে। ক্ষেতগুলোতে তরমুজের সমারোহে হাসি ফুটেছে কৃষকদের মুখে। তাই তরমুজ বিক্রি করে বেশি লাভের স্বপ্ন দেখছেন চাষিরা। তবে কৃষকদের দাবি, চরাঞ্চলেই তরমুজ চাষ করে তারা সফলতা পান বেশি।
সদর উপজেলার ভেলুমিয়ার ইউনিয়নের রাবেয়ার চর, ভেদুরিয়ার ইউনিয়নের চর চুটকিমারা ও দৌলতখান উপজেলার মদনপুর চর মুন্সি ও চর ভৈরাগীসহ বিভিন্ন চরে গিয়ে কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ভোলার ৭ উপজেলার বিচ্ছিন্ন চরাঞ্চলে এ বছরও তরমুজ চাষ হয়েছে। বিগ ফ্যামিলি, থাই সুপার, ড্রাগন সুপার, ড্রাগন কিংসহ বিভিন্ন জাতের তরমুজের চাষ করেছেন কৃষক। তবে এ বছর মাটি ও আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় বিগত বছরের চেয়ে ব্যাপক ফলন হয়েছে। কৃষকেরা হাসি মুখে তরমুজ তুলে বিক্রি করছেন। কেউ কেউ শেষ সময়ে তরমুজের ক্ষেত পরিচর্যার কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন। এ বছর বাজারে বিক্রি করে বেশি লাভবান হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন তারা।
ভেলুমিয়ার ইউনিয়নের রাবেয়ার চরের তরমুজ চাষি ও চরফ্যাশন উপজেলার আহমেদপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা কৃষক মো. মাহাবুব আলম জানান, চরাঞ্চলের জমিগুলো পলি মাটির। বর্ষার সময়ে জোয়ার-ভাটায় তলিয়ে যায় চরগুলো। বর্ষার শেষে আবার জেগে ওঠে। এই জোয়ার-ভাটার কারণে জমিগুলোতে পলি মাটি আসায় তরমুজ চাষের জন্য খুবই উপযোগী। ফলনও ভালো হয়। এ ছাড়া নদীর র্তীরবর্তী হওয়ায় ঠান্ডা আবহাওয়া চাষের জন্য উপযোগী থাকে। এতে রোগবালাই ও আক্রমণ কম থাকে। তাই চরাঞ্চলের কৃষকেরা তরমুজ চাষ করে সফল হন।
তিনি জানান, এ বছরও তিনি চরাঞ্চলে তরমুজ চাষ করেছেন। এবার ভেলুমিয়ার রাবেয়ার চরে প্রায় ৩ কানি জমিতে তরমুজ চাষ করেছেন। ক্ষেতে ব্যাপক ফলন হওয়ায় খুশি তিনি।
ভোলা সদর উপজেলার ইলিশা ইউনিয়নের বাসিন্দা মো. সাহাবুদ্দিন ফরাজি জানান, তিনি প্রায় ১৫-২০ বছর ধরে চরাঞ্চলে তরমুজ চাষ করেন। প্রতি বছরই সদর উপজেলার চরাঞ্চলে চাষ করেন। এ বছর রাবেয়ার চরে প্রায় ৩০ লাখ টাকা খরচ করে ৪০ একর জমিতে চাষ করেছেন। ক্ষেতে তেমন পোকামাকড়ের আক্রমণ না থাকায় ব্যাপক ফলন হয়েছে। বাজারের যে দাম আছে, তাতে তরমুজ বিক্রি করে প্রায় ২৫-৩০ লাখ টাকা লাভ করতে পারবেন। আগামী বছর আরও বেশি জমিতে চাষ করার পরিকল্পনার কথা জানান তিনি।
মনির হোসেন জানান, তিনি প্রায় ৭-৮ বছর ধরে বিভিন্ন চরাঞ্চলে তরমুজ চাষ করেন। প্রতি বছরই আলাদা আলাদা চরে চাষ করেন। এবার ৩ কানি জমিতে চাষ করতে গিয়ে জমি লগ্নি, বীজ, সার-কীটনাশক ও শ্রমিকের বেতনসহ ৭ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। এখন পর্যন্ত একবার সাড়ে ৭ লাখ টাকার তরমুজ বিক্রি করেছেন। এখনো ক্ষেতে যে তরমুজ আছে, তাতে আরও ৮-৯ লাখ টাকার তরমুজ বিক্রি করতে পারবেন।
দৌলতখান উপজেলার মদনপুর ইউনিয়নের চর মুন্সির তরমুজ চাষি মো. নাসিম ও মো. আলাউদ্দিন জানান, তারা প্রতি বছরই বিভিন্ন ব্যাংক ও এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে তরমুজ চাষ করেন। ক্ষেতে তরমুজের বাম্পার ফলন হয়েছে। এতে তারা অনেক খুশি। তাই আশা করেন, এ বছর তরমুজ বিক্রি করে বেশি লাভবান হবেন।
তারা জানান, আগে কয়েক বছর ওপরের জমিতে তরমুজ চাষ করেছিলেন। ক্ষেতে রোগবালাই ও পোকমাকড়ের আক্রমণে কোনো বছর লোকসান হতো আবার কোনো বছর উৎপাদন খরচ উঠে কিছু টাকা লাভ হতো। পরে প্রায় ২০ বছর ধরে ভোলা সদর, দৌলতখান, বোরহানউদ্দিন ও তজুমদ্দিনের বিচ্ছিন্ন চরাঞ্চলে তরমুজ চাষ করে যাচ্ছেন। এতে প্রতি বছরই ভালো লাভবান হচ্ছেন। আগামী বছর প্রায় ৫০ একর জমিতে চাষ করার পরিকল্পনা আছে তাদের।
ভোলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. খাইরুল ইসলাম মল্লিক বলেন, ‘আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় তরমুজ ক্ষেতে ব্যাপক ফলন হয়েছে। কৃষকেরা এ বছর গত কয়েক বছরের চেয়ে বেশি টাকা লাভবান হবেন। এতে আগামী বছরগুলোতে আরও বেশি পরিমাণ জমিতে তরমুজ চাষ করবেন। আমাদের মাঠ পর্যায়ের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা সার্বক্ষণিক পরামর্শ দিয়েছেন। যার কারণে এবার কৃষকদের উৎপাদন খরচও বাড়েনি।’
তিনি বলেন, ‘এ বছর ভোলার ৭ উপজেলায় বিভিন্ন জাতের ১৩ হাজার ৬১০ হেক্টর জমিতে তরমুজের আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে ভোলা সদর উপজেলায় ৯২৫, বোরহানউদ্দিনে ৮৩০, দৌলতখানে ৯৫, তজুমদ্দিনে ২৬০, লালমোহনে ৭০০, চরফ্যাশনে ১০ হাজার ৭৮০ ও মনপুরায় ২০ হেক্টর জমিতে তরমুজের আবাদ হয়েছে।’
এসইউ/জিকেএস