ভিডিও EN
  1. Home/
  2. কৃষি ও প্রকৃতি

শহরের পরিবেশ রক্ষায় ছাদবাগানের গুরুত্ব

মোহাম্মদ সোহেল রানা | প্রকাশিত: ০২:৫৯ পিএম, ০৫ জুন ২০২৫

একটা সময় গ্রামের মতো শহরেও দেখা মিলত বিভিন্ন ধরনের গাছপালা। ছায়াঘেরা পথ, পাখির ডাক, আর চারপাশে সবুজের আধিপত্য। তবে বর্তমানে দিন দিন গাছের সংখ্যা কমে যাচ্ছে, উন্নয়নের নামে প্রয়োজনে-অপ্রয়োজনে কাটা হচ্ছে গাছ। এতে আজ শহর ক্লান্ত ধোঁয়ায় ভারী বাতাস, চারদিকে ইট-পাথরের দেয়াল, আর প্রতিদিনের দমবন্ধ করা যান্ত্রিকতা। নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হয়।

প্রকৃতি যেন শহর ছেড়ে দূরে কোথাও হারিয়ে গেছে। তবে সেই প্রকৃতিকে ফিরিয়ে আনার আশাটুকু এখনো বেঁচে আছে, আমরা চাইলেই বাড়ির ছাদবাগানের মাধ্যমেই এই শহরকে সবুজ করতে পারি। ছাদবাগান আজ শুধু শখ নয়, এটি শহরকে বাঁচিয়ে রাখার এক নীরব বিপ্লব।

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

যখন আমরা শহরের একঘেয়েমি, তাপ, দূষণ আর কৃত্রিম জীবনের ক্লান্তিতে হাপিয়ে উঠি, তখন ছাদবাগান হয়ে ওঠে বাঁচার অক্সিজেন। একটি ছোট্ট টবের মাটি থেকে গজিয়ে ওঠা গাছ মানে শুধু পাতা নয়- ওখানে ফুটে ওঠে একটা শ্বাস নেওয়ার অধিকার, একটা জীবন্ত পৃথিবীর আশা।

বিশ্ব পরিবেশ দিবস উপলক্ষে আজকের এই ফিচারের মাধ্যমে আমরা জানবো শহরের পরিবেশ রক্ষায় ছাদ বাগানের গুরুত্ব এবং কীভাবে এই ছোট উদ্যোগ আমাদের জীবনে বড় পরিবর্তন আনতে পারে-

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

শহরের ফুসফুস হয়ে ওঠে
আমরা এমন এক শহরে চলাফেরা করি, যেখানে গাড়ির ধোঁয়া, কারখানার বিষাক্ত গ্যাস আর ধুলার প্রাচুর্যে শ্বাস নিতে কষ্ট হয়। গাছ এই দূষণ শোষণ করে ও বাতাসকে পরিশুদ্ধ করে। শহরের প্রতিটি ছাদ যদি হয়ে ওঠে একটি সবুজ বাগান, তাহলে এই ছোট ছোট ফুসফুসগুলো মিলে একটা বড় প্রশ্বাস তৈরি করতে পারে। ছাদবাগান মানেই শহরের বুকে নির্মল বাতাসের জন্ম দেওয়া।

গরম কমায়, শান্তি বাড়ায়
শহরের কংক্রিট ছাদগুলো রোদের তাপে উত্তপ্ত হয়ে উঠে। এতে ঘরের তাপমাত্রাও অনেক বেড়ে যায়। যার ফলে বাড়ে বিদ্যুৎ বিল, কমে আরাম। ছাদবাগান ছাদকে সোজাসুজি সূর্যের আলো থেকে রক্ষা করে, ফলে ঘর অনেকটাই ঠান্ডা থাকে। এটি পরিবেশবান্ধব এক প্রাকৃতিক এসির মতো কাজ করে-নির্বিঘ্নে, খরচ ছাড়াই।

বিজ্ঞাপন

মানসিক প্রশান্তির ঘর
বর্তমানে আমাদের জীবনে সবচেয়ে বড় অভাব হলো মানসিক প্রশান্তি। কাজের চাপ, যান্ত্রিকতা, সামাজিক বিচ্ছিন্নতা- সব মিলিয়ে আমরা ক্লান্ত। ছাদবাগান সেই ক্লান্তির মাঝে স্বস্তির ছায়া দেয়। গাছের সঙ্গে সময় কাটানো, নিজ হাতে মাটি খুঁড়ে বীজ বোনা, কুঁড়ি ফোটা দেখা- এসব যেন এক ধরনের থেরাপি। মন ভালো রাখতে ছাদ বাগানের বিকল্প আর কিছু নেই।

শহরের পরিবেশ রক্ষায় ছাদবাগানের গুরুত্ব

নিরাপদ খাদ্যের উৎস
আজকাল বাজার থেকে কেনা শাকসবজিতে ভরসা রাখা কঠিন। কোথায় কী কী কীটনাশক বা কেমিক্যাল ব্যবহৃত হয়েছে, তার কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। বাজারে ওঠা প্রতিটা ফলমূল ফরমালিনের সাহায্যে পাকানো, তাই সেটাও খাইতে ভয় করে। বিশেষ করে শিশুদের জন্য ভয়াবহ ক্ষতিকর। কিন্তু ছাদবাগানে আপনি নিজেই চাষ করছেন, জানেন কী দিচ্ছেন গাছে। ফলে এটি হয় স্বাস্থ্যকর ও বিষমুক্ত। পরিবারের জন্য এটি একটি নিরাপদ খাদ্যসূত্র হয়ে ওঠে।

বিজ্ঞাপন

শহরের সৌন্দর্য বাড়ায়
ছাদবাগান শুধু পরিবেশ রক্ষা করে না, সে শহরের রূপকে করে তোলে আরও প্রাণবন্ত। ছাদের উপর সাজানো ফুলের টব, ফলমূল বা লাউয়ের লতা, মৌমাছির গুনগুন, প্রজাপতির ডানা সব মিলে এক অপূর্ব নান্দনিকতা সৃষ্টি করে। বহুতল ভবনের উপরে দাঁড়িয়ে কেউ যখন দেখে, একটির পর একটি ছাদে রঙিন ফুল আর সবজির সারি, তখন সে শহরকে নতুন চোখে দেখে একটু ভালোবাসার চোখে, একটু আশার চোখে।

বৃষ্টির পানি ধরে রাখে
বৃষ্টির সময় শহরে জলাবদ্ধতা একটি বড় সমস্যা। ছাদবাগান বৃষ্টির পানি শোষণ করে রাখতে সাহায্য করে এবং তা ধীরে ধীরে নিষ্কাশনে যায়। এতে করে ড্রেনেজে চাপ কমে ও পানি ব্যবস্থাপনা উন্নত হয়। এভাবে ছাদবাগান শুধু সৌন্দর্যই নয়, বরং অবকাঠামোগত সমস্যা সমাধানের একটি ছোট কিন্তু কার্যকর উপায়।

পারিবারিক বন্ধন গড়ে তোলে
একটি গাছের যত্ন নেওয়া মানে একটি সম্পর্ক তৈরি করা। যখন মা-বাবা, সন্তান সবাই মিলে গাছ লাগায়, পানি দেয়, ফল দেখে আনন্দ পায়-তখন পারিবারিক সম্পর্ক আরও গভীর হয়। মোবাইলের স্ক্রিন ছেড়ে বাস্তব জীবনে এসে একসঙ্গে কিছু করার অনুভূতি পরিবারে ভালোবাসা ও সংযোগ বাড়ায়।

বিজ্ঞাপন

শিশুদের শেখার ক্ষেত্র
শিশুরা এখন প্রকৃতি থেকে বিচ্ছিন্ন। তারা জানে না গাছ কেমন করে বড় হয়, কোন পাতায় কী গন্ধ, কীভাবে ফুল ফল হয়। ছাদবাগান তাদের শেখার বাস্তব ক্লাসরুম হতে পারে। এখানে তারা শিখবে ধৈর্য, যত্ন, দায়িত্ববোধ। প্রকৃতির প্রতি ভালোবাসা গড়ে উঠবে সেই ছোট্ট বাগান থেকেই।

পরিবেশ সচেতন নাগরিক গড়ে তোলে
ছাদবাগান করার মধ্য দিয়ে একজন মানুষ পরিবেশ সম্পর্কে সচেতন হয়ে ওঠে। তিনি গাছের প্রতি যত্নবান হন, কম বর্জ্য তৈরি করতে চেষ্টা করেন, প্রাকৃতিক জীবনের গুরুত্ব বুঝতে শেখেন। এই ছোট উদ্যোগ একজনকে রূপ দেয় এক পরিবেশবান্ধব নাগরিকে, যিনি ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য দায়িত্ব নিতে প্রস্তুত।

কেএসকে/এএসএম

আরও পড়ুন

বিজ্ঞাপন