ভিডিও EN
  1. Home/
  2. কৃষি ও প্রকৃতি

টাঙ্গাইলে ৫৮ কোটি টাকার হলুদ বিক্রির সম্ভাবনা

জেলা প্রতিনিধি | টাঙ্গাইল | প্রকাশিত: ১২:২৯ পিএম, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫

টাঙ্গাইলে এবার হলুদ চাষে সুদিনের স্বপ্ন দেখছেন কৃষকেরা। প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে হলুদ চাষে লাভবান হবেন তারা। হলুদ চাষ অন্য ফসলের চেয়ে বেশি লাভজনক। অল্প জমিতে কম খরচে বেশি হলুদ চাষ করা যায়। পাহাড়ি এলাকায় সাথী ফসল হিসেবে হলুদের চাষ হয়। তবে এ বছর মধুপুরে প্রায় ৫৮ কোটি টাকার হলুদ বিক্রির সম্ভাবনা দেখছেন চাষিরা।

কৃষকেরা বলেন, হলুদে গরু, ছাগল ও পোকামাকড়ের কোনো উপদ্রব নেই। ফসলহানির আশঙ্কাও কম। পরিত্যক্ত জমিতে হলুদের চাষ ভালো হয়। বাজারে মসলাজাতীয় পণ্য হলুদের চাহিদা অনেক। দামও অন্য ফসলের চেয়ে ভালো। এ কারণে ঘাটাইল, মধুপুর ও সখীপুর উপজেলার পাহাড়ি এলাকায় হলুদের আবাদ দিন দিন বাড়ছে।

জেলা কৃষি অফিস জানায়, জেলার ১২টি উপজেলায় ৩ হাজার ২০৮ হেক্টর জমিতে হলুদ চাষ করা হয়েছে। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ৪৫, বাসাইলে ২০, কালিহাতীতে ৩০, ঘাটাইলে ১ হাজার ৪৫৬, নাগরপুরে ৫০, মির্জাপুরে ১২৫, মধুপুরে ৯৮০, ভূঞাপুরে ১৫, গোপালপুরে ৩৭, সখীপুরে ৩৫০, দেলদুয়ারে ৮০ ও ধনবকাড়ী উপজেলায় ২০ হেক্টর জমিতে হলুদ আবাদ করা হয়েছে।

উর্বরতা ও জৈব পদার্থ সমৃদ্ধ দোআঁশ ও বেলে-দোআঁশ মাটি হলুদ চাষের জন্য ভালো। সবচেয়ে উত্তম দোআঁশ ও বেলে-দোআঁশ লাল মাটি। জেলার ঘাটাইল, মধুপুর ও সখীপুর উপজেলার পাহাড়ি অঞ্চলে দোআঁশ ও বেলে-দোআঁশ লাল মাটি বেশি। ফলে জেলার ওই তিন উপজেলায় মসলাজাতীয় পণ্য হলুদের আবাদ সবচেয়ে বেশি হয়েছে।

হলুদের স্থানীয় জাতগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- হরিণপালি, আদাগতি, মহিষবাট, পাটনাই, আড়ানী ইত্যাদি। তবে উচ্চফলনশীল ডিমলা ও সিন্দুরী নামে দুটি জাতের হলুদ আছে। ডিমলা জাতটি স্থানীয় জাতের তুলনায় ৩ গুণ এবং সিন্দুরী জাতটি স্থানীয় জাতের তুলনায় ২ গুণ ফলন বেশি দেয়। দুটি জাতই লিফ ব্লাইট রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পন্ন। এ ছাড়া বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের বারি হলুদ-৩, বারি হলুদ-৪, বারি হলুদ-৫ জাতের হলুদ চাষ করে কৃষকেরা আশানুরূপ ফলন পাচ্ছেন।

টাঙ্গাইলে ৫৮ কোটি টাকার হলুদ বিক্রির সম্ভাবনা

কৃষিবিদরা বলেন, হলুদকে অনেক সময় ‘মিরাকল হার্ব’ বা অলৌকিক ভেষজ বলা হয়। হলুদ আমাদের কাছে অত্যন্ত পরিচিত একটি মসলা। হলুদে প্রচুর ফাইবার, পটাশিয়াম, ভিটামিন বি-৬, ম্যাগনেশিয়াম ও ভিটামিন সি থাকে। এতে কারকিউমিন নামক রাসায়নিক থাকে, যা বিভিন্ন রোগের হাত থেকে মানুষকে বাঁচায়। মসলা হিসেবে ব্যবহার ছাড়াও অনেক ধরনের প্রসাধনীর কাজে ও রং শিল্পের কাঁচামাল হিসেবে হলুদ ব্যবহার করা হয়।

জানা যায়, মধুপুর উপজেলার জয়নাতলী, ভুিটয়া, অরণখোলা, বেরিবাইদ, কুড়াগাছা, মমিনপুর, মির্জাবাড়ি, গাছাবাড়ি এলাকায় হলুদ চাষ হয়েছে। মধুপুরে এ বছর ৯৮০ হেক্টর জমিতে হলুদ চাষ করা হয়েছে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে প্রায় ১২ হাজার মেট্রিক টন। গত বছর ৭৬০ হেক্টর জমিতে হলুদের আবাদ হয়েছিল। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৯ হাজার মেট্রিক টন। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অনেক বেশি হলুদ উৎপাদন হয়েছিল। কোনো প্রকার প্রাকৃতিক বিপর্যয় না ঘটলে এ বছর মধুপুরে প্রায় ৫৮ কোটি টাকার হলুদ বিক্রির সম্ভাবনা দেখছেন কৃষকেরা।

উপজেলার মির্জাবাড়ি ইউনিয়নের ব্রাহ্মণবাড়ি গ্রামের হলুদ চাষি নজরুল ইসলাম বলেন, ‘এ বছরও হলুদ রোপণ করেছি। সাথী ফসল হিসেবে বেশিরভাগ উঁচু জমিতে চাষ করা হয়েছে। হলুদ চাষ অনেকাংশে সহজ ও লাভজনক। প্রতি বিঘায় সব মিলিয়ে ৩৫ থেকে ৪০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে প্রতি বিঘায় ৭০-৮০ মণ হলুদ উৎপাদনের সম্ভাবনা আছে। বাজারমৃল্য আশানুরূপ পাওয়া গেলে বিঘাপ্রতি ৭০-৮০ হাজার টাকা লাভ হবে।’

কৃষক বাপ্পি বলেন, ‘হলুদের কন্দ রোপণের পর পরিপক্ব হতে জাতভেদে ৭-১০ মাস সময় লাগে। যখন গাছের নিচের পাতা হলুদ হয়ে আসে এবং গাছটি মরে যেতে শুরু করে; তখন ফসল তোলার জন্য প্রস্তুত হয়। যা সাধারণত শীতকালে দেখা যায়। তবে হলুদ চাষে খুব একটা ঝামেলা পোহাতে হয় না। সার ও কীটনাশকও ব্যবহার করতে হয় খুবই কম। প্রতি বিঘা জমি হলুদ চাষের জন্য খরচ হয় ৩৫-৪০ হাজার টাকা। উৎপাদন ভালো হলে খরচ বাদে ৬০-৭০ হাজার টাকা লাভ থাকে।’

মধুপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রকিব আল রানা বলেন, ‘হলুদ বছরব্যাপী ফসল হওয়ায় সাথী ফসল হিসেবে কৃষকেরা এর আবাদ করে থাকেন। হলুদে তেমন কোনো রোগবালাই নেই। ফলে চাষিরা লাভবান হচ্ছেন। হলুদের কন্দ রোপণ থেকে শুরু করে উৎপাদন পর্যন্ত কৃষি অফিস থেকে নিয়মিত কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হয়। এ ছাড়া প্রতিটি ইউনিয়নে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা মাঠপর্যায়ে কৃষকদের আবাদ দেখভাল করেন।’

টাঙ্গাইল জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা মোহাম্মদ দুলাল উদ্দিন বলেন, ‘জেলার পাহাড়ি অঞ্চল বা উঁচু এলাকায় সাধারণত হলুদ সাথী ফসল হিসেবে চাষ করা হয়। হলুদে পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ একটি মসলাজাতীয় পণ্য। কাঁচা হলুদের ন্যূনতম ৪৬টি ভেষজ গুণাগুণ আছে। এবার জেলায় হলুদের বাম্পার ফলনের আশা করা হচ্ছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এবং বাজারে দাম ভালো থাকলে কৃষকেরা লাভবান হবেন।’

আব্দুল্লাহ আল নোমান/এসইউ/এএসএম

আরও পড়ুন