ভিডিও EN
  1. Home/
  2. কৃষি ও প্রকৃতি

শখের ছাদ বাগানে মিটছে পরিবারের চাহিদা

মোহাম্মদ সোহেল রানা | প্রকাশিত: ১২:৫৭ পিএম, ১৮ ডিসেম্বর ২০২৫

রাজধানী ঢাকায় সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবনযাপন একটি বড় চ্যালেঞ্জ। দ্রুত নগরায়নের ফলে দিন দিন কমছে গাছপালা ও সবুজের পরিমাণ। অন্যদিকে বাড়ছে খাদ্যদ্রব্যের দাম, ভেজাল ও রাসায়নিকের ব্যবহার। এই বাস্তবতায় শহরবাসীর জন্য ছাদ বাগান হয়ে উঠেছে কার্যকর ও টেকসই সমাধান। অল্প জায়গা ব্যবহার করেই পরিবারের দৈনন্দিন খাদ্য চাহিদার বড় অংশ পূরণ করা সম্ভব হচ্ছে ছাদ বাগানের মাধ্যমে। এ ছাড়া মানসিক প্রশান্তি, পরিবেশ রক্ষা এবং অর্থনৈতিক সাশ্রয়ের ক্ষেত্রেও ছাদ বাগান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।

‎ঢাকার বসুন্ধরা এলাকায় ফ্ল্যাট কিনে বসবাস করছেন খান মোহাম্মদ আবু সাইদ ও নাজমুন নাহান দম্পতি। শখের বশে প্রায় পাঁচ বছর আগে বাড়ির ছাদে একটি বাগান গড়ে তোলেন নাজমুন নাহান। মায়ের অনুপ্রেরণায় তিনি ছাদ বাগান শুরু করেন। ছাদের এক অংশে বিভিন্ন ধরনের ফুল এবং অন্য অংশে শাক-সবজির চাষ করেছেন। এখানে টমেটো, মরিচ, বেগুন, লাউ, লেবু, সাজনা, ঢ্যাঁড়শসহ পরিবারের প্রয়োজন অনুযায়ী বিভিন্ন শাক-সবজি চাষ করা হচ্ছে। পাশাপাশি আমড়াসহ কয়েকটি ফলের গাছও আছে। তিনি মৌসুমভিত্তিক শাক-সবজি চাষ করে থাকেন।

তার ‎এই শখের বাগান বাজারের ওপর নির্ভরতা কমিয়েছে। তাজা ও বিষমুক্ত খাবার নিশ্চিত করেছে। পরিবারের চাহিদা পূরণে ছাদ বাগানের সবচেয়ে বড় অবদান হলো নিরাপদ খাদ্য সরবরাহ। বর্তমানে বাজারে পাওয়া অনেক শাক-সবজি ও ফল-মূলে অতিরিক্ত কীটনাশক ও রাসায়নিক সার ব্যবহারের অভিযোগ আছে। নিজ হাতে ছাদে চাষ করা ফসলে এসব ক্ষতিকর উপাদানের ব্যবহার সহজেই নিয়ন্ত্রণ করা যায়।

jagonews

‎নাজমুন নাহান জাগো নিউজকে বলেন, ‘ছাদ বাগানের সবজির স্বাদ অতুলনীয়, কারণ এগুলো জৈব পদ্ধতিতে উৎপাদিত। বারো মাস মৌসুমভিত্তিক সবজি চাষের জন্য পাইপের মাধ্যমে প্রয়োজন অনুযায়ী সেচ দিই। নিজেদের চাহিদা মেটানোর পর অতিরিক্ত সবজি প্রতিবেশী ও পরিচিতদের দিই। প্রথম দিকে চাষাবাদ নিয়ে মায়ের সঙ্গে আলোচনা করতাম। এখন ভিডিও ও কৃষিবিষয়ক ফেসবুক গ্রুপ থেকে প্রয়োজনীয় তথ্য ও সমাধান জেনে নিই।’

নাজমুন জৈব সার হিসেবে ব্যবহার করেন রান্নাঘরের উচ্ছিষ্ট, পচা পাতা ও ভার্মি কম্পোস্ট। ফলে তার উৎপাদিত সবজি সম্পূর্ণ বিষমুক্ত ও নিরাপদ। বর্তমানে তারা প্রায় প্রতিদিনই ছাদ বাগানের তাজা সবজি খাওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন।

‎ছাদ বাগানের ভারী টব আনা, মাটি সংগ্রহসহ বড় ধরনের কাজে স্বামী খান মোহাম্মদ আবু সাইদের সহযোগিতা আছে। পেশাগত ব্যস্ততার মাঝেও সময় পেলে তিনি গাছগুলোর পরিচর্যা করেন। গাছের যত্ন নেওয়া, পানি দেওয়া, নতুন পাতা ও ফল ধরতে দেখা—এসবই নাজমুন নাহান ও তার পরিবারের মনে প্রশান্তি এনে দেয়।

jagonews

আরও পড়ুন
আগাম সবজি চাষে সফল জিসান, চলতি মৌসুমেই বিক্রি সাড়ে ৩১ লাখ 
উত্তরার দিয়াবাড়ি যেন নার্সারির রাজ্য 

‎নাজমুন নাহান বলেন, ‘এই ভবনের সব ফ্ল্যাট মালিকদের ছাদ ব্যবহারের সুযোগ আছে। সবার অনুমতি নিয়েই আমি বাগান করেছি। অবসর সময়ে বিভিন্ন ফ্ল্যাটের বাসিন্দারা ছাদে এসে বাগান দেখে প্রশংসা করেন, ছবি তোলেন ও সময় কাটান। মেহমান এলে তারাও এখানে সময় কাটাতে পছন্দ করেন। আমার বাগান দেখে অনেক আত্মীয়-স্বজনও ছাদ বাগান শুরু করেছেন।’

‎তার মতে, ছাদ বাগান করতে বিশেষ কোনো জমির প্রয়োজন নেই। প্রয়োজন পরিকল্পনা ও নিয়মিত যত্ন। সঠিক টব বা ড্রাম নির্বাচন, ভালো মানের মাটি, জৈব সার এবং পর্যাপ্ত রোদ-বাতাস নিশ্চিত করতে পারলে সহজেই সফল হওয়া যায়। পাশাপাশি ছাদের ভার বহনক্ষমতা, পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা ও নিরাপত্তার বিষয়গুলো গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করা জরুরি। অল্প জায়গায় বেশি ফলনের জন্য উল্লম্ব বাগান বা ঝুলন্ত টব ব্যবহার করা যেতে পারে।

jagonews

‎খান মোহাম্মদ আবু সাইদ জাগো নিউজকে বলেন, ‘অবসর সময় কাজে লাগিয়ে গাছগুলোর যত্ন নিই। প্রতিদিন অন্তত একবার হলেও ছাদে আসার চেষ্টা করি। কোনো দিন আসতে না পারলে মনে হয় দিনটা ভালো কাটেনি। পরিশ্রম করে নিজের গাছের ফল ও সবজি খেতে পারার আনন্দ আলাদা। স্ত্রীকে বাগানের কাজে সহায়তা করতে ভালো লাগে। ছুটির দিনে পরিবার নিয়ে ছাদে আড্ডা দিই।’

‎ছাদ বাগান পরিবেশ রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। গাছপালা তাপমাত্রা কমাতে সাহায্য করে। বাতাসে অক্সিজেনের পরিমাণ বাড়ায় এবং কার্বন-ডাই-অক্সাইড শোষণ করে। ছাদ বাগান ভবনের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে। পাশাপাশি বৃষ্টির পানি ধরে রাখার মাধ্যমে জলাবদ্ধতা কমাতেও সহায়ক।

‎ছাদ বাগান শুধু একটি শখ নয়; এটি পরিবারের খাদ্য, স্বাস্থ্য ও অর্থনৈতিক চাহিদা মেটানোর একটি কার্যকর ও টেকসই উপায়। বর্তমানে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও বিভিন্ন প্রশিক্ষণ কর্মশালার মাধ্যমে ছাদ বাগান বিষয়ে সচেতনতা বাড়ছে। সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে এ কার্যক্রমকে আরও উৎসাহিত করা গেলে শহরের খাদ্য নিরাপত্তা ও পরিবেশ রক্ষায় এর ভূমিকা আরও বিস্তৃত হবে।

jagonews

এসইউ

আরও পড়ুন