ভিডিও EN
  1. Home/
  2. ক্যাম্পাস

আবু সাঈদ হত্যা

৮ মাস পর মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে বেরোবি প্রশাসন

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক | বেরোবি | প্রকাশিত: ১০:৩৯ এএম, ০৫ মে ২০২৫

গেলো বছরের জুলাই বিপ্লবে কোটা সংস্কার আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে নিহত হন রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) ইংরেজি বিভাগের ২০১৯-২০২০ সেশনের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ। এই হত্যাকাণ্ড ও শিক্ষার্থীদের ওপর হামলায় জড়িতদের বিরুদ্ধে দীর্ঘ ৮ মাস পর মামলা করার পদক্ষেপ নিচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। মামলার বাদী ও সাক্ষী প্রাথমিকভাবে চূড়ান্ত করা হয়েছে বলে জানা গেছে।

এ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের কয়েক দফা বৈঠকের পর মামলায় আসামির তালিকা খসড়া প্রস্তুত করা হচ্ছে বলেও জানা গেছে। তবে তালিকায় অনেক হামলাকারীদের নাম বাদ দেওয়ার অভিযোগ ওঠায় শঙ্কায় প্রকাশ করছেন আন্দোলনকারীরা।

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায় তালিকায় রয়েছেন, শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি পোমেল বড়ুয়া, সাধারণ সম্পাদক শামীম মাহাফুজ, সহ-সভাপতি গ্লোরিয়াস (ফজলে রাব্বি), বিধান, আদুল্লাহ আল নোমান খান ও তানভীর, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোমিনুল, সাংগঠনিক সম্পাদক ধনঞ্জয় কুমার টগর ও ফরহাদ হোসেন এলিট, দপ্তর সম্পাদক বাবুলসহ। এছাড়াও রিফাত, আরিফুজ্জামান ইমন, গাজীউর, শাহিদ হাসান ও মামুন। এরসঙ্গে বহিরাগত ৮-৯ জন এবং বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এরইমধ্যে বহিষ্কৃত ৭ জন কর্মকর্তা ও ২ জন শিক্ষকসহ সর্বমোট ৩০ থেকে ৩৫ জনের একটি তালিকা করে বাকি কয়েকজনকে অজ্ঞাতনামা রেখে মামলা করার পরিকল্পনা করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তবে এতে মামলা থেকে বাদ পড়বেন হামলায় প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত এবং ইন্ধনদাতা হিসেবে অন্তত ২৫ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী।

এর আগে ২০ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০৯তম সিন্ডিকেট সভায় আবু সাঈদ হত্যাকাণ্ডে জড়িত ৭১ শিক্ষার্থীকে বিভিন্ন মেয়াদে সেমিস্টার অনুযায়ী সাময়িক বহিষ্কার করা হয়। এর মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় শৃঙ্খলা বোর্ড ২৩ জনকে এক সেমিস্টার, ৩৩ জনকে দুই সেমিস্টার ও ১৫ জন প্রাক্তন শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে কর্মচারী ও কর্মকর্তার বিরুদ্ধে এখনও পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করছেন শিক্ষার্থীরা।

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

সূত্র জানায়, নতুন করে এসব কর্মকর্তা-কর্মচারীকে মামলার আসামি করা হলে ক্যাম্পাসের পরিবেশ অস্থিতিশীল হওয়ার অজুহাতে তথ্য প্রমাণ থাকার পরও এদের বিরুদ্ধে তেমন কোনো ব্যবস্থা নেয়নি প্রশাসন।

গত ২৭ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য বরাবর বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালীন হামলার অভিযোগে সমন্বয়করা বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান কর্মরত ও বহিরাগতের বিরুদ্ধে নাম উল্লেখ করে দুইটি অভিযোগ জমা দেন। এতে একটিতে বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমান কর্মরত ২৬ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার কথা উল্লেখ করে তাদের শাস্তি দাবি করেন।

বিজ্ঞাপন

জুলাইয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার অভিযোগে অভিযুক্ত এসব কর্মকর্তা ও কর্মচারীর বিরুদ্ধে আট মাস অতিবাহিত হলেও প্রশাসন এ নিয়ে কোনো তদন্ত কমিটি গঠন করেনি এবং তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থাও নেয়নি। উল্টো এদের মধ্য থেকে অন্তত সাতজনকে বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত ঢাকা, রাজশাহী, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি গুচ্ছভুক্ত ও কৃষি গুচ্ছের ভর্তি পরীক্ষায় নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলা কমিটিতে রাখা হয়েছে।

এদের মধ্যে তাপস কুমার গোস্বামী, রেজাউল ইসলাম লাবু ও শাহিন মিয়াকে মেইন গেটের নিরাপত্তার দায়িত্ব প্রদান করা হয়েছে। শাহিন মিয়াকে নিরাপত্তা শাখা থেকে বদলি করে প্রক্টর অফিসের মতো অতি গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় আনা হয়েছে। হামলার সময় উপস্থিত সবুজ মিয়াকে সংস্থাপন শাখা থেকে বদলি করে বহিরাঙ্গন পরিচালকের মতো গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় পদায়ন করা হয়, ভর্তি পরীক্ষা চলাকালীন সবুজ একাডেমিক ভবন-২ এর নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়া ৩নং গেইটে দায়িত্ব পালন করেন নুর আলম মিয়া, ৪নং গেইটে হাফিজ আল আসাদ। এছাড়া সাবেক ভিসির পিএ আবুল কালাম আজাদকে নিরাপত্তা ও পরিচ্ছন্নতা শাখায় বদলি করা হয়েছে, আবুল কালামের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার মদদ ও রংপুর সদরের আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সমন্বয় এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে অবস্থান করার জন্য সব ধরনের সহযোগিতা করার অভিযোগ থাকলেও তাকে জিরো পয়েন্টের নিরাপত্তার দায়িত্ব প্রদান করা হয়।

এ ব্যাপারে শহীদ আবু সাঈদের সহযোদ্ধা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক শামসুর রহমান সুমন বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন হামলাকারীদের ওপর মামলা করতে চাইলে আমরা সাক্ষীর একটা তালিকা জমা দিয়েছিলাম। কিন্তু প্রশাসনের অবহেলার জন্যই এখনো কোনো মামলা করা হয়নি। আশ্বাসে সীমাবদ্ধ না থেকে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে আমরা আবারো আন্দোলনে যেতে বাধ্য হব।

বিজ্ঞাপন

জুলাই বিপ্লবে শহীদ আবু সাইদের সহযোদ্ধা রোবায়েদ জাহিন বলেন, মামলা না হওয়ায় আমি পুরোপুরি হতাশ। প্রথম থেকে প্রশাসন ধীর গতিতে কাজ করছে। তদন্ত কমিটি গঠন করেও এখনও মামলা করতে পারেনি, এইটা প্রশাসনের ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে।

জুলাই আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের পাশে থাকা পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষক প্রভাষক ফারজানা জান্নাত তসি বলেন, আবু সাঈদ মারা গেছে গত প্রশাসনের দীর্ঘ ব্যর্থতার কারণে। জুলাই আন্দোলনে ১৪শ মানুষ মারা গেছে, তার পারস্পেক্টিভ ভিন্ন আর আবু সাঈদের পারস্পেক্টিভ ভিন্ন। আবু সাঈদ তার ক্যাম্পাসের সামনে মারা গেছে। গত প্রশাসন আমার ছাত্রকে রক্ষার ন্যূনতম চেষ্টা করেনি। গত প্রশাসনের উচ্চ পর্যায়ের দায়িত্বপ্রাপ্তরা কোনোভাবেই দায় এড়াতে পারে না, কিন্তু আমরা দেখতে পারছি শুধুমাত্র সাবেক প্রক্টরের ওপর দায় চাপিয়ে সবাই আড়ালে থেকে যাচ্ছে। আমার মনে হয় এই জায়গাটায় বর্তমান প্রশাসনও কোনো কাজ করেনি। যার কারণে আবু সাঈদ হত্যা ও শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্টতা থাকার পরও মামলা করতে পারেনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

এ বিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. শওকাত আলী বলেন, আমরা হামলাকারীদের সঠিকভাবে চিহ্নিত করতে পেরেছি। কারো নাম বাদ যাবে না। যারা জড়িত তাদের আমরা ছাড় দেবো না। মামলার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। এই সপ্তাহে না হলে আগামী সপ্তাহের মধ্যে মামলা হবে।

বিজ্ঞাপন

ফারহান সাদিক সাজু/এফএ/এএসএম

বিজ্ঞাপন