ইবি শিক্ষার্থীর মৃত্যু
শিক্ষার স্বাভাবিক পরিবেশ বজায় রেখে তদন্তের আহ্বান পরিবার-বিভাগের

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) শিক্ষার্থী সাজিদ আব্দুল্লাহর রহস্যজনক মৃত্যুর ঘটনায় সুষ্ঠু তদন্তের দাবি জানিয়েছে আল-কুরআন অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ ও তার পরিবার। বিভাগ ও পরিবারের পক্ষ থেকে শিক্ষার স্বাভাবিক পরিবেশ বজায় রেখে তদন্ত কার্যক্রমের দাবি তুলে ধরার আহ্বান জানানো হয়েছে। এ ছাড়া এ মৃত্যু নিয়ে অপরাজনীতি না করার আহ্বান তার পরিবারের।
বুধবার (২৩ জুলাই) সকাল সাড়ে ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক লাউঞ্জে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা তুলে ধরেন বিভাগটির শিক্ষকরা।
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
এসময় সাজিদের মৃত্যুর তদন্ত দাবিতে একসঙ্গে কাজ করার প্রত্যয় ব্যক্ত করে বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্রিয়াশীল ছাত্রসংগঠনগুলো।
সংবাদ সম্মেলনে থিওলজি অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. আ ব ম সিদ্দিকুর রহমান আশ্রাফী, আল কুরআন অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. শেখ জাকির হোসেন, অধ্যাপক ড. আ ন ম এরশাদ উল্লাহসহ অন্য শিক্ষকরা উপস্থিত ছিলেন।
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
শিক্ষকদের পক্ষ থেকে ছাত্র সংগঠনগুলোকে সাজিদের বিষয়ে একজোট হয়ে কাজের আহ্বান জানালে সংগঠনগুলোর নেতারা নিজেদের ইতিবাচক অবস্থান তুলে ধরেন। এসময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ইবির সমন্বয়ক এস এম সুইট, শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক শাহেদ আহমেদ, ছাত্রশিবিরের সভাপতি মাহামুদুল হাসান, ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি নূর আলম সিদ্দিকী, ইসলামী ছাত্র আন্দোলনের সভাপতি ইসমাইল হোসেন রাহাত, খেলাফত মজলিসের সভাপতি সাদেক আহমেদ উপস্থিত ছিলেন।
এসময় আল-কুরআন অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. নাসিরুদ্দিন মিঝি বলেন, সাজিদের এমন মৃত্যুতে দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ও হল কর্তৃপক্ষের তদন্ত কমিটি এবং পুলিশ প্রশাসন কাজ অব্যাহত রাখছে।
বিজ্ঞাপন
তিনি আরও বলেন, সাজিদের মৃত্যু বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক নিরাপত্তা পরিস্থিতি সম্পর্কে চোখ খুলে দিয়েছে। এই ঘটনার ফয়সালা না হওয়া পর্যন্ত আল কুরআন বিভাগ কাজ করে যাবে। আমরা শিক্ষার্থীদের সকল দাবির সঙ্গে একমত। তবে সবকিছুর আগে এ ঘটনার তদন্ত করে বিচার নিশ্চিত করতে হবে। অন্যান্য দাবিগুলো আদায় করতে গিয়ে মুখ্য বিষয় যেন হারিয়ে না যায়। এ বিষয় নিয়ে যেন কোনো ধরনের অপপ্রচার না হয় সে ব্যাপারে খেয়াল রাখতে হবে। আল কুরআন বিভাগের শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে সকল শিক্ষার্থী আন্দোলনে অংশগ্রহণ করবে। তার বক্তব্য শেষে এ সব বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিয়াশীল ছাত্র সংগঠনগুলো একমত পোষণ করে।
এর আগে মঙ্গলবার (২২ জুলাই) সন্ধ্যায় সাজিদের পরিবার ক্যাম্পাসে এসে তদন্ত কমিটি ও হল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তারা জানান, তদন্তে অস্বাভাবিক মৃত্যুর প্রমাণ মিললে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আপাতত থানায় একটি জিডি করা হয়েছে।
তারা বলেন, ক্যাম্পাসের ১৬ হাজার শিক্ষার্থী আমাদের সন্তানের মতো। তারা এখানে পড়াশোনার জন্য এসেছে। সাজিদের এ মর্মান্তিক ঘটনায় সকলেই ব্যথিত। তারা সাজিদের মৃত্যুর কারণ জানতে ও বিভিন্ন দাবিতে আন্দোলন করছে। কিন্তু সাজিদের মৃত্যু নিয়ে রাজনীতি করে ক্যাম্পাসে কোনো অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি হোক এটা আমরা চাই না। আমরা চাই ক্যাম্পাসে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় থাকুক এবং সাজিদের আকস্মিক মৃত্যুর তদন্ত কার্যক্রম দ্রুত ও সঠিকভাবে চলতে থাকুক।
বিজ্ঞাপন
মতবিনিময়কালে উপস্থিত ছিলেন সাজিদের বাবা আহসান হাবিবুল্লাহ দেলওয়ার, সাজিদের চাচা, ভগ্নিপতি, প্রতিবেশী, ধর্মতত্ত্ব অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. আ ব ম ছিদ্দিকুর রহমান আশ্রাফী, আল কুরআন অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. নাছির উদ্দিন মিঝি।
এদিকে সাজিদের মৃত্যুর সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচারের দাবিতে চলমান আন্দোলন নিয়ে শিক্ষার্থীদের মাঝে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে। গত সোমবার (২৩ জুলাই) আল কুরআন বিভাগের আহ্বানে সাড়া দিয়ে সকল সংগঠন আলোচনায় বসে। তখন পরেরদিন ডাকা বিক্ষোভ মিছিল ও অবস্থান কর্মসূচি বাতিল করে পরবর্তীতে সম্মিলিতভাবে নতুন কর্মসূচি ঘোষণার সিদ্ধান্ত হয় এবং এ ব্যাপারে সাজিদের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ইনসানুল ইসলাম নুর একটি পোস্ট দেন। কিন্তু পরবর্তীতে এ পোস্টটি তাকে জোর করে দেওয়ানো হয়েছে বলে ফেসবুকে বিভিন্ন প্রোপাগান্ডা ছড়ানো হয়।
এ বিষয়ে বুধবারের সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত হয়ে ইনসানুল ইসলাম নূর বলেন, আমাকে সেদিন চাপ দিয়ে এগুলো করানো হয়নি বরং সবার ঐক্যমত্যের ভিত্তিতে হওয়া সিদ্ধান্ত আমি নিজ ইচ্ছায় পোস্ট করেছি। সাজিদের হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচারের জন্য আমরা সবাই একসাথে কাজ করব।
বিজ্ঞাপন
১৭ জুলাই বিকেল সাড়ে ৬টায় শাহ আজিজুর রহমান হল পুকুর থেকে আল কুরআন অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ২০২১-২২ বর্ষের শিক্ষার্থী সাজিদের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। সাজিদ টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার আহসান হাবিবুল্লাহ দেলওয়ারের একমাত্র ছেলে। পরে সাজিদের মৃত্যুর প্রকৃত কারণ উদঘাটনের দাবিতে উত্তাল হয়ে উঠেছে ক্যাম্পাস। ১৮ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও হল প্রশাসন থেকে দুইটি তদন্ত কমিটি করা হয়। ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছে উভয় কমিটি। এদিকে এই ঘটনায় ক্যাম্পাসে বহিরাগত প্রবেশ নিষিদ্ধ ও পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত পুকুরে নামা নিষিদ্ধ করে মাইকিং করেছে প্রশাসন। এর আগে ১৯ জুলাই সাজিদের মৃত্যুকে ‘হত্যাকাণ্ড’ দাবি করে সুষ্ঠু তদন্ত ও নিরাপদ ক্যাম্পাসের দাবিতে টানা পাঁচ ঘণ্টা বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা।
ইরফান উল্লাহ/এমএন/এএসএম
বিজ্ঞাপন