ভিডিও EN
  1. Home/
  2. ক্যাম্পাস

মৃত্যুর একযুগ পরে পুরান ঢাকায় হচ্ছে বিশ্বজিৎ স্মৃতিস্তম্ভ

তৌফিক হোসেন | জবি | প্রকাশিত: ০৬:৪৫ পিএম, ০৩ অক্টোবর ২০২৫

রাজধানীর পুরান ঢাকার বাহাদুর শাহ পার্ক এলাকায় তৎকালীন ছাত্রলীগের হাতে প্রকাশ্যে খুন হওয়া দর্জি দোকানি বিশ্বজিৎ দাসের নামে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হচ্ছে। ২০১২ সালের ৯ ডিসেম্বর বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলের অবরোধ চলাকালে শিবিরকর্মী সন্দেহে প্রকাশ্যে তাকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যা করে ছাত্রলীগ কর্মীরা।

প্রায় এক যুগ পর বিশ্বজিৎ দাসকে স্মরণে রাখার উদ্যোগ নিয়েছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। তাদের প্রচেষ্টায় সদরঘাট–শাঁখারিবাজার সংযোগস্থলে ‘বিশ্বজিৎ চত্বর’ নামে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণকাজ শুরু হয়েছে। সোমবার (২৯ সেপ্টেম্বর) সকালে স্মৃতিস্তম্ভের প্রাথমিক কাঠামো নির্মাণকাজ শুরু হয়।

এ বিষয়ে কথা হলে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. রইস উদ্দিন জাগো নিউজকে বলেন, ‌‘বিশ্বজিতের আত্মত্যাগকে স্মরণীয় করে আমরা ‌‘বিশ্বজিৎ চত্বর’ নির্মাণের ঘোষণা দিয়েছিলাম। সেই স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হচ্ছে।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের ২০২১-২২ সেশনের শিক্ষার্থী রিফাত হাসান বলেন, ‘বারো বছর পার হলেও বিচার প্রক্রিয়া শেষ হয়নি, এটি দুঃখজনক। তবে স্মৃতিস্তম্ভ তার স্মৃতিকে অমর করে রাখবে।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ২০২০-২১ সেশনের শিক্ষার্থী সাগর দেবনাথ বলেন, ‘আমরা চাই রাষ্ট্র দ্রুত এ মামলার বিচার সম্পন্ন করুক। পাশাপাশি বিশ্বজিৎ চত্বর হবে ফ্যাসিবাদী অত্যাচারের নির্মমতার প্রতীক।’

আরও পড়ুন
মৃত্যুর আগে বিচার দেখে যেতে চান বাবা-মা
শুধু নিষিদ্ধ নয়, দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিও নিশ্চিত করতে হবে

জানা যায়, জবি ক্যাম্পাসের সামনে থেকে বাসস্ট্যান্ড অপসারণের জন্য ১১ সেপ্টেম্বর সমাবেশের ঘোষণা দেয় শিক্ষক সমিতি। এসময় বাহাদুর শাহ পার্কের সামনে সদরঘাট-শাঁখারিবাজার চার রাস্তার মোড়কে ‘বিশ্বজিৎ চত্বর’ ঘোষণা করেন শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. রইছ উদ্দিন। পরবর্তীতে সেখানে স্মৃতিস্তম্ভ তৈরির জন্য আবেদন করা হয়। পরে সিটি করপোরেশনের নির্দেশে সোমবার সকালে প্রাথমিকভাবে স্মৃতিস্তম্ভের নির্মাণকাজ শুরু হয় এবং সন্ধ্যায় শেষ হয়েছে।

প্রাথমিকভাবে প্রতীকী হিসেবে একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হয়েছে। পরবর্তীতে স্থাপনার নকশা অনুমোদনের পরে পূর্ণাঙ্গ রূপে তা নির্মাণ করবে সিটি করপোরেশন।

২০১২ সালের ৯ ডিসেম্বর বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলের অবরোধের মধ্যে পুরান ঢাকার বাহাদুর শাহ পার্কের কাছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের একটি মিছিল থেকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে বিশ্বজিৎকে হত্যা করা হয়।

মৃত্যুর একযুগ পরে পুরান ঢাকায় হচ্ছে বিশ্বজিৎ স্মৃতিস্তম্ভছেলের জন্য দীর্ঘ একযুগ ধরে নীরবে চোখের জল ফেলে চলছেন মা কল্পনা দাস

ওই ঘটনার খবর ও ছবি সারা বিশ্বে আলোড়ন তোলে। আসামিরা সবাই ক্ষমতাসীন দলের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন ছাত্রলীগের জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখার নেতা-কর্মী হওয়ায় সরকারকে সে সময় তুমুল সমালোচনার মুখে পড়তে হয়।

সেই সময়ে অজ্ঞাতনামা ২৫ জনকে আসামি করে সূত্রাপুর থানায় মামলা করেন ওই থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) জালাল আহমেদ। তিন মাসের মধ্যে তদন্ত করে ২০১৩ সালের ৫ মার্চ ২১ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক তাজুল ইসলাম।

আরও পড়ুন
আগামীতে ট্যাগিংয়ের রাজনীতি চলবে না: শিবির সেক্রেটারি
বিশ্বজিৎ হত্যা: ১০ বছর পর যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি ধরা

আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মধ্যদিয়ে ২০১৩ সালের ২ জুন বিচারকাজ শুরু করেন ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালত। একই বছরের ১৮ ডিসেম্বর মামলাটিতে একই ট্রাইব্যুনালের সেসময়ের বিচারক এ বি এম নিজামুল হক আট আসামির মৃত্যুদণ্ড এবং অপর ১৩ আসামির যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের রায় দেন।

পরে ২০১৭ সালের ৬ আগস্ট নিম্ন আদালতে মৃত্যুদণ্ড পাওয়া আট আসামির মধ্যে দুজনের মৃত্যুদণ্ড বহাল, চারজনের মৃত্যুদণ্ড পরিবর্তন করে যাবজ্জীবন এবং অপর দুজনকে খালাস দিয়ে রায় দেন হাইকোর্ট। যাবজ্জীবন পাওয়া ১৩ আসামির মধ্যে দুজন পরে খালাস পেয়েছেন। মামলাটি বর্তমানে আপিলে বিচারাধীন।

বিশ্বজিতের বড় ভাই উত্তম দাস বলেন, ‘একযুগ কেটে গেলেও বিচার আজও শেষ হয়নি। তবে ভাইয়ের নামে স্মৃতিস্তম্ভ হচ্ছে জেনে ভালো লাগছে। অন্তত নতুন প্রজন্ম তার অবিচারের ইতিহাস জানতে পারবে।’

‘স্মৃতিস্তম্ভ’ নির্মাণের কথা শুনে সন্তোষ প্রকাশ করে বিশ্বজিতের বাবা অনন্ত দাস বলেন, ‘এত বছর পর তার স্মৃতিতে স্মৃতিস্তম্ভ হচ্ছে শুনে খুব ভালো লাগছে। সুযোগ পেলে গিয়ে দেখে আসবো।’

টিএইচকিউ/এমএএইচ/এএসএম