ভিডিও EN
  1. Home/
  2. ক্যাম্পাস

চাকসু নির্বাচন ঘিরে ছাত্রদলে কোন্দল, সিনিয়র সহ-সভাপতি বহিষ্কার

মো. রফিক হায়দার | চট্টগ্রাম | প্রকাশিত: ০৫:০৬ পিএম, ১৩ অক্টোবর ২০২৫

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) নির্বাচন ঘিরে ক্যাম্পাসে ছাত্রদলের মধ্যে কোন্দল দেখা দিয়েছে। ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য দাঁড়িয়েছে ‘বিদ্রোহী’ প্যানেল। এর জেরে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের মাত্র পাঁচ সদস্যের কমিটির এক সিনিয়র সহ-সভাপতিকে আজীবনের জন্য সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।

ছাত্রদল সূত্র জানায়, সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ভঙ্গ ও দায়িত্বে অবহেলার সুনির্দিষ্ট অভিযোগে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) ছাত্রদলের সিনিয়র সহ-সভাপতি মোহাম্মদ মামুন উর রশিদ মামুনকে সাংগঠনিক পদ থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে। গত রোববার (১২ অক্টোবর) রাতে ছাত্রদলের দপ্তর সম্পাদক মো. জাহাঙ্গীর আলম স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

তবে নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দীর্ঘ ৩৬ বছর পর আগামী বুধবার (১৫ অক্টোবর) হতে যাওয়া চাকসু নির্বাচনে ছাত্রদলের প্যানেলে মামুনের অনুসারী তেমন কাউকে রাখা হয়নি। সিনিয়র সহ-সভাপতি হওয়ার পরও এমন অবজ্ঞা মামুন ও তার অনুসারীরা মেনে নেননি। তাই কেন্দ্রের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে তিনি সর্বজনীন ছাত্র ঐক্য পরিষদ নামে স্বতন্ত্র প্যানেল দাঁড় করান। সেই প্যানেল থেকে সহ-সভাপতি (ভিপি), সাধারণ সম্পাদক (জিএস), সহ-সাধারণ সম্পাদকসহ (এজিএস) সাত পদে ছাত্রদলের কর্মীরা প্রার্থী হন। পরে এ বিদ্রোহী প্যানেল রুখতে কঠোর হওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় কেন্দ্রীয় ছাত্রদল। এতে ভিপি প্রার্থী সাইদ রেদোয়ান ও দপ্তর সম্পাদক প্রার্থী সাখাওয়াত হোসাইন প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেন। তবে অন্য প্রার্থীরা নির্বাচন করার সিদ্ধান্তে অনড়। এজন্য মামুনকে দায়ী করছেন ছাত্রদলের অন্য পক্ষের নেতাকর্মীরা। তাই শৃঙ্খলা ভঙ্গের কারণ দেখিয়ে তাকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হয়।

চাকসু নির্বাচন সামনে রেখে ছাত্রদলের এমন সিদ্ধান্ত ক্যাম্পাসে সংগঠনটির অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত করে তুলবে বলে মনে করছেন নেতাকর্মীরা। তাদের কেউ কেউ বলছেন, ভোটের আগ মুহূর্তে একজন সিনিয়র নেতাকে বহিষ্কারের ঘটনা ছাত্রদলের প্রচার ও সাংগঠনিক অবস্থানে প্রভাব ফেলতে পারে।

চাকসু নির্বাচন ঘিরে ছাত্রদলে কোন্দল, সিনিয়র সহ-সভাপতি বহিষ্কার

চবি ছাত্রদলের সিনিয়র সহ-সভাপতি মোহাম্মদ মামুন উর রশিদ মামুন

ছাত্রদল সূত্রমতে, জুলাই অভ্যুত্থানের সম্মুখসারীর অনেক কর্মীকে চাকসু নির্বাচনে ছাত্রদলের প্যানেলে স্থান না দেওয়া মানতে পারেননি মামুন। তাই স্বতন্ত্র কয়েকজন প্রার্থীকে তিনি সমর্থন করেন।

আরও পড়ুন
চাকসু নির্বাচন সামনে রেখে চবিতে বহিরাগত প্রবেশ নিষেধ
সাইবার বুলিংয়ে প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ শিবির প্যানেলের
চবি ছাত্রদল: কমিটিই ৫ সদস্যের, এক নেতা আজীবন বহিষ্কার

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ছাত্রদল কর্মী বলেন, ‘ফ্যাসিস্ট হাসিনার আমলে জেল-জুলুম, রিমান্ড সহ্য করে ছাত্রদল করেছেন মামুন। আগেও তাকে দলীয় পদ দেওয়ার ক্ষেত্রে অবজ্ঞা করা হয়েছে। চাকসুতেও তার ত্যাগী কর্মীদের মূল্যায়ন করা হয়নি। তাই কিছু কর্মী স্বতন্ত্র পদে নির্বাচন করছেন। নির্বাচনে প্রতিযোগিতা করা প্রত্যেকের গণতান্ত্রিক অধিকার। এ অধিকার চর্চার জন্য দুর্দিনের কর্মীকে বহিষ্কার করবে তা মেনে নেওয়া যায় না।’

এ নিয়ে কথা হলে মামুন বলেন, ‘আমি দীর্ঘ ১৭ বছর রাজপথে লড়াই সংগ্রামের মধ্যে ছিলাম। দুঃসময়ে ছাত্রদলের নেতৃত্ব দিয়েছি। কী শৃঙ্খলা ভঙ্গ করেছি সেটা আমি বলতে পারবো না। সেটা কেন্দ্রীয় ছাত্রদল বলতে পারবে। দায়িত্ব অবহেলার যে অভিযোগ সেটা তো সবার ওপর বর্তায়। দায়িত্ব সবাই ভালোভাবে পালন করছে, এমন তো না। সবার মাঝে কিছু না কিছু খুঁত থেকে যায়।’

এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন বলেন, ‘ওনার (মামুন) কার্যক্রম সংগঠন পর্যবেক্ষণ করেছে। সংগঠন মনে করেছে উনি শৃঙ্খলা ভঙ্গ করেছেন এবং দায়িত্বে অবহেলা করেছেন। তাই তাকে কেন্দ্র বহিষ্কার করেছে।’

দায়িত্বে কী রকম অবহেলা হয়েছে সে সম্পর্কে জানতে চাইলে নাছির উদ্দিন বলেন, ‘চাকসুকেন্দ্রিক কিছু দায়িত্ব বিভিন্ন নেতাকে বণ্টন করে দেওয়া হয়। এ দায়িত্বে তার অবহেলা পরিলক্ষিত হয়। ফলে কেন্দ্রীয় সংগঠনের সিদ্ধান্ত মোতাবেক তাকে বহিষ্কার করা হয়।’

প্রসঙ্গত, ২০২৩ সালের ১১ আগস্ট তৎকালীন ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সংসদের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রাশেদ ইকবাল খান এবং সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েল স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে চবি শাখা ছাত্রদলের পাঁচ সদস্যের কমিটি ঘোষণা করা হয়। এতে মোহাম্মদ আলাউদ্দিন মহসিন সভাপতি ও আব্দুল্লাহ আল নোমান সাধারণ সম্পাদক হন। এছাড়া সিনিয়র সহ-সভাপতি হিসেবে মামুনুর রশিদ মামুন, সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হিসেবে মো. ইয়াসিন ও সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে মো. সাজ্জাদ হোসেন হৃদয়ের নাম ঘোষণা করা হয়।

এমআরএএইচ/একিউএফ/এমএস