সেশনজটে জর্জরিত জাবির ফার্মেসি বিভাগে চালু হচ্ছে সান্ধ্যকোর্স
দীর্ঘ আড়াই থেকে তিন বছরের সেশনজটে ভুগছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগের শিক্ষার্থীরা। ফলে পাঁচ বছরের কোর্স শেষ হচ্ছে না আট বছরেও। এমন সংকটময় পরিস্থিতিতে বিভাগটি নতুন করে সান্ধ্যকোর্স (উইকেন্ড প্রোগ্রাম) চালু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। নিয়মিত শিক্ষার্থীদের দুর্ভোগের মধ্যেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়ায় শিক্ষার্থীদের মাঝে তীব্র ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিভাগটি বর্তমানে একই সঙ্গে চলমান রয়েছে ৮টি শিক্ষাবর্ষের শিক্ষা কার্যক্রম। এর মধ্যে স্নাতক ও স্নাতকোত্তরসহ ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষ থেকে ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষ পর্যন্ত মোট আটটি ব্যাচের শিক্ষার্থীদের ক্লাস-পরীক্ষা চলছে। এখনো প্রকাশ পায়নি স্নাতকোত্তর ২০১৬-১৭ সালের ফলাফল। এতে আড়াই থেকে তিন বছরের সেশনজটে ভুগছে শিক্ষার্থীরা।
বিভাগ সূত্রে জানা যায়, জাবির ফার্মেসি বিভাগে ৫ বছরে স্নাতক ও ১ বছরের স্নাতকোত্তর হওয়ার কথা থাকলেও ৮ বছরেও স্নাতকোত্তর শেষ করতে পারে না শিক্ষার্থীরা। বিভাগের ২০১৮-১৯ (৪৮ব্যাচ) শিক্ষাবর্ষ থেকে ২৪-২৫ (৫৪ ব্যাচ) শিক্ষাবর্ষ পর্যন্ত মোট ৭টি ব্যাচের স্নাতক চলমান রয়েছে। ২০১৭-১৮ (৪৭ব্যাচ) শিক্ষাবর্ষ স্নাতকোত্তরে পড়লেও ১৬-১৭ (৪৬ ব্যাচ) শিক্ষাবর্ষের স্নাতকোত্তরের ফলাফল এখনো প্রকাশ পায়নি। এতে ৬ বছরে স্নাতকোত্তর শেষ হওয়ার কথা থাকলেও ৮ বছরেরও বেশি সময় ধরে আটকে রয়েছে শিক্ষার্থীরা।
বিভাগের শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করে বলেন, দীর্ঘদিন থেকে আমরা সেশনজটের কবলে। আমাদের বিভাগের প্রতিটি ব্যাচের ৭ বছরে অনার্স ও ২ বছরের মাস্টার্স শেষ করতে হয়। শিক্ষক সংকট, নিয়মিত ক্লাস, পরীক্ষা নিতে না পারা, ক্লাসরুম ও ল্যাবের সংকটের কারণে এমন জটের কবলে পড়ছেন।
তারা আরও জানান, এমন সংকটময় পরিস্থিতিতে নতুন করে উইকেন্ড প্রোগ্রাম চালু করার সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণ অযৌক্তিক, অগ্রহণযোগ্য ও শিক্ষার্থীদের স্বার্থবিরোধী। বিভাগের রেগুলার কোর্সের চেয়ে সান্ধ্যকোর্সে শিক্ষকদের আগ্রহ বেশি দেখা দিচ্ছে।
ফার্মেসি ৪৮ ব্যাচের শিক্ষার্থী ও জাকসুর তথ্য প্রযুক্তি ও গ্রন্থাগার সম্পাদক রাশেদুল ইসলাম লিখন বলেন, বিভাগে অনার্স ও মাস্টার্স মিলিয়ে আড়াই থেকে তিন বছরের সেশনজট চলছে। বিভাগ যেখানে রেগুলার শিক্ষার্থীদের সেশনজট দূর করতে ব্যর্থ সেখানে উইকেন্ড প্রোগ্রাম চালু হওয়ার কোনো যৌক্তিকতা নেই। এটি সম্পূর্ণ শিক্ষার্থীদের স্বার্থবিরোধী কাজ।
৪৭ ব্যাচের শিক্ষার্থী ও জাকসুর শিক্ষা ও গবেষণা সম্পাদক আবু উবায়দা উসামা বলেন, দীর্ঘদিন ধরে বিভাগে শিক্ষক সংকট রয়েছে। শিক্ষক, ক্লাসরুম, ল্যাব রুমের সংকটের জন্য এতো সেশনজট। এমন অবস্থায় উইকেন্ড প্রোগ্রাম চালু করা কোনোভাবেই যৌক্তিক নয়।
বিষয়টি নিয়ে ফার্মেসি বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক মোহাম্মদ মোতাহার হোসেন চৌধুরী বলেন, স্বাভাবিকভাবেই আমাদের অনার্সের কোর্স ৫ বছরের হওয়ায় সময় একটু বেশি লাগে। এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সময় দেরি হওয়াসহ আমাদের ল্যাব ও প্রশিক্ষণ নিতেও সময় লাগে। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য বিভাগের সাথে তুলনা করলে আমরা পিছিয়ে নেই।
সান্ধ্যকোর্সের বিষয়ে তিনি বলেন, এটি একক কোনো সিদ্ধান্ত নয়। বিভাগীয় সকলের পরামর্শ ও সিদ্ধান্তে উইকেন্ড প্রোগ্রাম চালু করা হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সব নির্দেশনা নেমেই উইকেন্ড প্রোগ্রাম চালু হওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববিজ্ঞান অনুষদের ডিন ও ফার্মেসি বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ মাফরুহী সাত্তারকে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তার সাড়া পাওয়া যায়নি।
মো. রকিব হাসান প্রান্ত/কেএইচকে/এমএস
সর্বশেষ - ক্যাম্পাস
- ১ নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে অনাস্থা ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেলের
- ২ সেশনজটে জর্জরিত জাবির ফার্মেসি বিভাগে চালু হচ্ছে সান্ধ্যকোর্স
- ৩ যৌন হয়রানি: ঢাবি অধ্যাপক এরশাদ হালিম সাময়িক বরখাস্ত
- ৪ ভর্তি পরীক্ষায় নেই ডাকসুর ‘হেল্পডেস্ক’, শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ
- ৫ ভূমিকম্পে ফাটল: জাবির নবনির্মিত ৬ হল পর্যবেক্ষণে কমিটি গঠন