‘রক্তে রাঙা বিজয় আমার’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তিন দিনব্যাপী ‘রক্তে রাঙা বিজয় আমার-২০২৫’ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়, ছবি: জাগো নিউজ
বিজয়ের মাস ডিসেম্বরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি প্রাঙ্গণে সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনসমূহের যৌথ উদ্যোগে তিন দিনব্যাপী ‘রক্তে রাঙা বিজয় আমার-২০২৫’ অনুষ্ঠান হয়ে গেলো। ১৪ থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত এই আয়োজন চলে।
আয়োজনের প্রথম দিন ১৪ ডিসেম্বর সকাল ১০টায় শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে টিএসসিভিত্তিক সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনসমূহের নেতা ও সদস্যদের অংশগ্রহণে একটি শোক র্যালি অনুষ্ঠিত হয়। র্যালিটি টিএসসি প্রাঙ্গণ থেকে শুরু হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি চত্বরে অবস্থিত স্মৃতির চিরন্তনে গিয়ে শেষ হয়। সেখানে মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের স্মরণে শ্রদ্ধাঞ্জলি জ্ঞাপন ও এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়। একইদিন সন্ধ্যায় টিএসসির সামনে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মরণে প্রদীপ প্রজ্জ্বলন কর্মসূচি পালিত হয়।

দ্বিতীয় দিন স্বাধীন বাংলাদেশের মানচিত্র সম্বলিত পতাকা সেলাই কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় বিভিন্ন সংগঠনের সদস্যরা জাতীয় পতাকার লাল অংশে বাংলাদেশের মানচিত্র সেলাই করে পতাকায় যুক্ত করেন এবং টিএসসির প্রবেশমুখে পতাকাটি উত্তোলন করা হয়। ১৫ ডিসেম্বর বিকেল ৩টায় টিএসসির পায়রা চত্বরে ‘রক্তে রাঙা বিজয় আমার-২০২৫’-এর মূল সাংস্কৃতিক পর্ব শুরু হয়।
সাংস্কৃতিক পর্বের শুরুতে টিএসসি পরিচালক ফারজানা বাসার শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন। তিনি বলেন, বিজয়ের মাসে টিএসসিভিত্তিক সংগঠনগুলোর যৌথ আয়োজন প্রশংসনীয়। মুক্তিযুদ্ধ আমাদের শক্তি ও আবেগের জায়গা, আর নতুন প্রজন্মের এমন আয়োজন আনন্দের।

পরবর্তীতে নির্ধারিত সূচি অনুযায়ী বিভিন্ন সংগঠনের পরিবেশনা অনুষ্ঠিত হয়। এর মধ্যে ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কুইজ সোসাইটির ওপেন কুইজ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নাট্য সংসদের বিশেষ পথনাটক ‘খ্যাপা পাগলার প্যাঁচাল’, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংস্কৃতিক সংসদের মিশ্র প্রযোজনা ‘রক্তে দিয়ে নাম লিখেছি বাংলাদেশের নাম’, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পরিবেশ সংসদের পাপেট শো, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ডিবেটিং সোসাইটির ‘প্লানচেট বিতর্ক’ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মাইম অ্যাকশনের বিশেষ মাইম ‘রঙ, রক্ত ও চিৎকার’। এছাড়াও কবিতা আবৃত্তি, নৃত্য, একক ও সমবেত সংগীত পরিবেশিত হয়।
সাংস্কৃতিক পর্ব শেষে অনুষ্ঠিত হয় বিজয় কনসার্ট। এতে গান পরিবেশন করে ইলা লালালা, দূর্গ, টর্চার গোরগ্রিন্ডার, ইন্ট্রইট, আপনঘর, ডিইউবিএস টিম, রেড ওয়াইন, আননেইমড, কৃষ্ণপক্ষ, অ্যানেস্থেসিয়া ও অ্যান্টস অন দ্য রান। পুরো কনসার্ট পর্বটি সমন্বয় করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ব্যান্ড সোসাইটি।

সবশেষে ১৬ ডিসেম্বর বিজয়ের প্রথম প্রহরে টিএসসি পায়রা চত্বরে সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনসমূহের নেতৃত্বে সমবেত কণ্ঠে জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মাধ্যমে আয়োজনের সমাপ্তি ঘটে।
আয়োজনের একজন সংগঠক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণা সংসদের সাধারণ সম্পাদক শাহরিয়ার নাজিম সীমান্ত বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, শহীদদের আত্মত্যাগ ও বিজয়ের অনুভব নতুন প্রজন্মের মাঝে ছড়িয়ে দেওয়াই এই আয়োজনের মূল উদ্দেশ্য।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাহিত্য সংসদের সাধারণ সম্পাদক রায়হান আহমেদ বলেন, নানা প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও মহান বিজয় দিবসকে যৌথভাবে উদযাপনের ব্যাপারে তারা দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংস্কৃতিক সংসদের সাধারণ সম্পাদক রওনক জাহান রাকামনি বলেন, বিজয় দিবস আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতার মাহাত্ম্য এবং সেই স্বাধীনতা রক্ষা করা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব।
‘রক্তে রাঙা বিজয় আমার’ আয়োজনটি টিএসসিভিত্তিক সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনসমূহের যৌথ উদ্যোগে প্রতিবছর ১৪ থেকে ১৬ ডিসেম্বর টিএসসি প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে।
এফএআর/এসএনআর/এএসএম