ঢাকা কলেজে যত্রতত্র ময়লা-আবর্জনা, দায় নিচ্ছে না কেউই
নির্মাণ কাজ শেষে সরানো হয়নি আবর্জনা
রাজধানীর বুকে সবুজে ঘেরা এক টুকরো ক্যাম্পাস ঢাকা কলেজ ৷ শীত কিংবা গ্রীষ্মে যেখানে একটু হলেও প্রশান্তি মেলে, সেই কলেজ নানা অব্যবস্থাপনায় এখন সৌন্দর্য হারাতে বসেছে ৷
করোনাকালে ক্যাম্পাসে নানা উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়িত হলেও সরানো হয়নি ময়লা-আবর্জনা ৷ এতে একদিকে যেমন নষ্ট হচ্ছে সৌন্দর্য অন্যদিকে বাড়ছে শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য ঝুঁকি ৷
সরেজমিনে ঢাকা কলেজের আবাসিক হল এলাকা, কর্মচারীদের কোয়ার্টার, ক্যাফেটেরিয়া ও মাঠ ঘুরে দেখা গেছে ময়লা-আবর্জনা, অপ্রয়োজনীয় কাগজ বা টিস্যু ফেলার জন্য নেই কোনো নির্দিষ্ট ঝুড়ি বা ডাস্টবিন। ক্যাম্পাসের মূল একাডেমিক প্রাঙ্গণ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকলেও বেহাল দশা পেছনের আবাসিক এলাকার৷ অধিকাংশ ড্রেনই উন্মুক্ত৷ যেখানে সেখানে পড়ে আছে ইট, টাইলস, প্লাস্টিকের বোতল, খাবারের উচ্ছিষ্টসহ নানা আবর্জনা৷
এছাড়া দক্ষিণ হল, দক্ষিণায়ন হল, আখতারুজ্জামান ইলিয়াস হল ও পশ্চিম হলের সামনে, শহীদ মো. ফরহাদ হোসেন হলের পাশে, মসজিদের দক্ষিণ পাশে নির্মাণ কাজের কংক্রিট, ময়লা-আবর্জনার স্তূপ জমে আছে ৷ পশ্চিম হল ও আন্তর্জাতিক হলের পেছনে ড্রেনের বেহাল দশা৷ ড্রেন থেকে ময়লা তুলে রাখা হয় ড্রেনের পাশেই ৷ সুয়ারেজ লাইনের ময়লা পানি এসে যোগ হচ্ছে ড্রেনে৷ ছড়াচ্ছে দুর্গন্ধ ৷ এই দুই হলের পেছনে কলেজের কর্মচারীদের কোয়ার্টার ৷
এ নিয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কর্মচারী বলেন, ড্রেন থেকে ছড়ানো দুর্গন্ধে বসবাস করা দায় ৷ বারবার হলের তত্ত্বাবধায়কদের বলা হলেও এসবের কোনো সমাধান হয়নি৷
ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী শফিক হোসেন বলেন, দীর্ঘদিন পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার অভাবে দীর্ঘস্থায়ী ময়লা জমেছে৷ এতে ক্যাম্পাসের সৌন্দর্য নষ্ট হচ্ছে। আমরা চাই প্রশাসনিকভাবে নিয়মিত তদারকির মাধ্যমে ক্যাম্পাসের পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার বিষয়টি নিশ্চিত করা হোক৷
তবে নির্মাণ কাজ শেষে এসব আবর্জনা পরিষ্কারের দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট ঠিকাদাররে বলে জানিয়েছেন আবাসিক হলের তত্ত্বাবধায়করা৷
আন্তর্জাতিক হলের তত্ত্বাবধায়ক মোহাম্মদ কামরুজ্জামান বলেন, ঠিকাদারকে ফোন দিয়েছিলাম৷ কাল আসবে৷ আমি লেবার নিয়ে আসতে বলেছি৷ রাবিশ যেখানে রাখে সেখান থেকে পরিষ্কার করতে বলেছি৷ কাল-পরশুর মধ্যে সমাধান হয়ে যাবে৷
সুয়ারেজ লাইনের পানি ড্রেনে মিশে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে, বিষয়টি নজরে আনলে তিনি বলেন, হলের পক্ষ থেকে এটা সংস্কার করা সম্ভব না। এখানে অনেক খরচের বিষয় আছে৷ প্রশাসনকে জানানো হয়েছিল৷ বাজেট স্বল্পতার কারণে এ কাজে হাত দেওয়া যাচ্ছে না৷

উন্মুক্ত ড্রেন আর ছড়িয়ে থাকা আবর্জনায় দূষিত হচ্ছে পরিবেশ
পশ্চিম হলের তত্ত্বাবধায়ক নকুল চন্দ্র পাল বলেন, কাজ শেষ হয়নি ৷ ঠিকাদারের এগুলো সরানোর কথা। সে এখনো সরায়নি৷ এগুলো তো আমাদের কাজ না৷ যেসব ঠিকাদার কাজ করে তারাই এগুলো সরানোর কাজ করে৷
দক্ষিণায়ন হলের তত্ত্বাবধায়ক মো. নাছির উদ্দিন বলেন, নিবে নিবে করে নিচ্ছে না৷ বলতে বলতে বিরক্ত হয়ে গেছি৷ ঠিকাদাররা কথা না শুনলে আমরা কী করতে পারি?
একই রকম কথা বলেন আবাসিক হল কমিটির চেয়ারম্যান ও উপাধ্যক্ষ প্রফেসর এ.টি.এম মইনুল হোসেন ৷ তিনি বলেন, সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারদের বলা হয়েছে ৷ বলেছে আবর্জনা সরিয়ে ফেলবে৷ যারা কাজ করে দায়িত্ব হচ্ছে তাদের৷ কাজের পর সেই ঠিকাদারই ময়লা আবর্জনা পরিষ্কার করবে৷
এ বিষয়ে ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক আই কে সেলিম উল্লাহ খোন্দকার বলেন, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার বিষয়টি শুধুমাত্র কলেজ প্রশাসনের দায়বদ্ধতা নয়। শিক্ষার্থীদেরও নিজেদের জায়গা থেকে এগিয়ে আসতে হবে। বিশেষ করে ক্যাম্পাসের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন স্কাউট, রেডক্রিসেন্ট ও বিএনসিসির সদস্যদের উদ্যোগী ভূমিকা পালন করতে হবে। ছাত্রাবাস এলাকা পরিষ্কার রাখার দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট তত্ত্বাবধায়কদের। তারা চাইলেই ছাত্রাবাসের শিক্ষার্থী নিয়ে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা অভিযান পরিচালনা করতে পারেন।
তাছাড়া যেসব ঠিকাদার নির্ধারিত সময়ের পরও তাদের কাজের উচ্ছিষ্ট ছাত্রাবাসের সামনে স্তূপ করে রেখেছে তাদের পরবর্তীতে কলেজে আর কোনো কাজ দেওয়া হবে না বলেও জানান তিনি।
নাহিদ হাসান/এমএইচআর/জেআইএম