ভিডিও EN
  1. Home/
  2. ক্যাম্পাস

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

মৌলিক সংকট নিয়ে দেড় যুগ পার, আছে সম্ভাবনার দিগন্ত

রায়হান আহমেদ | প্রকাশিত: ০৯:৫৭ এএম, ১৯ অক্টোবর ২০২৩

পাঠশালা থেকে স্কুল, এরপর কলেজ, তারপর বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তর। নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় পার করছে ঐতিহ্য সংগ্রামের ১৮ বছর। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের মাধ্যমে অনাবাসিক তকমা গোছালেও এখনো হলবিহীন ১৫ হাজার শিক্ষার্থী। হল সংকট, শ্রেণিকক্ষ সংকট, নানা সীমাবদ্ধতা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টি ১৯তম বর্ষে পদার্পণ করেছে। ২০ অক্টোবর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় দিবস। তবে দিনটি শুক্রবার হওয়ায় আজ বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উদযাপিত হচ্ছে।

অবকাঠামোতে পিছিয়ে

প্রতিষ্ঠার ১৮ বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো পর্যন্ত এ বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামোগত উন্নয়ন হয়নি। নারীদের জন্য একটি হল আর নিউ একাডেমিক বিল্ডিং ছাড়া আর কোনো ভবন নির্মাণ করা হয়নি। কলেজ আমলের পুরোনো ভবনগুলোতেই চলছে ক্লাস ও প্রশাসনিক কার্যক্রম। রাজউক থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের চারটি ভবনই ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা হয়েছে।

নতুন ক্যাম্পাসের কাজে ধীরগতি

২০১৬ শিক্ষার্থীদের তীব্র আন্দোলনের মুখে ঢাকার কেরানীগঞ্জে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় ক্যাম্পাস নির্মাণের ঘোষণা দেওয়া হয়। ২০১৮ সালে দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের জন্য ভূমি অধিগ্রহণ ও উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ২ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দেয় সরকার। কিন্তু টাকা হাতে পাওয়ার ৫ বছর পেরিয়ে গেলেও পূর্ণভাবে ২০০ একর ভূমি অধিগ্রহণের কাজটাও সমাপ্ত করতে পারেনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। বাদ আছে সীমানাপ্রাচীরের কাজ। অন্যদিকে নতুন ক্যাম্পাসের কাজ সেনাবাহিনীর মাধ্যমের করানোর জন্য শিক্ষার্থীরা বার বার মানববন্ধন স্মারকলিপি দিলেও তা আমলে নেয়নি প্রশাসন।

মেসের খরচ দিতে হিমশিম খাচ্ছে শিক্ষার্থীরা

বিশ্ববিদ্যালয়ে নারী শিক্ষার্থীদের জন্য একটি হল থাকলেও পুরুষ শিক্ষার্থীদের জন্য নেই কোনো আবাসন ব্যবস্থা। চলমান দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে মেসের খরচ চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন শিক্ষার্থীরা।

শিক্ষার্থীরা জানান, মেসের খরচ আগের চেয়ে দ্বিগুণ হয়েছে। খাবারের মিল রেট হয়েছে আগের চেয়ে দ্বিগুণ। ন্যূনতম ৫০ থেকে ৫৫ টাকার নিচে কোনো মিল রেট নেই। পাশাপাশি বিদ্যুৎ বিল বাসাভাড়াসহ অন্যান খরচ জোগাতে প্রচুর বেগ পেতে হচ্ছে।

আরও পড়ুন>>> জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়: ইতিহাস-ঐতিহ্যের ধারক

গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী সোলায়মান জাগো নিউজকে বলেন, নতুন ক্যাম্পাসের কাজ শুরুর পর শিক্ষার্থীদের দাবি ছিল নতুন ক্যাম্পাসে অন্তত প্রথমে দু-তিনটি হল নির্মাণ করা। যাতে করে শিক্ষার্থীদের আবাসিক সমস্যা দূর হয়। কিন্ত প্রশাসন শিক্ষার্থীদের এসব দাবি আমলে নেয়নি। হল থাকলে শুধু আবাসিক ব্যবস্থা না, সেখানে পড়াশোনার সুন্দর পরিবেশ, সাংস্কৃতিক কার্যক্রম সমানতালে চলে। আমাদের হল নির্মাণের সুযোগ থাকা সত্ত্বেও আমরা বঞ্চিত হচ্ছি।

শিক্ষা কার্যক্রমে এগিয়ে

বিশ্ববিদ্যালয়ের নানা সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও এগিয়ে যাচ্ছে শিক্ষার্থীরা। মেসে থেকে সংগ্রাম করে একের পর এক সফলতা পাচ্ছেন তারা। সম্প্রতি দেশসেরা বিভাগ হিসেবে সুনাম কুড়িয়েছে রসায়ন বিভাগ। সর্বশেষ পুলিশের সাব ইনস্পেক্টর নিয়োগ পরীক্ষায় সর্বোচ্চ সংখ্যক ৭৩ জন শিক্ষার্থী নিয়োগ পেয়েছে। ৪১তম বিসিএস পরীক্ষায় ৮৭ জন ক্যাডারে উত্তীর্ণ, বিজেএস জুড়িসিয়াল পরীক্ষায় ১১ জন শিক্ষার্থী জায়গা পেয়েছেন।

ব্যাংক, বিসিএস, সরকারি চাকরি, বিভিন্ন প্রাইভেট প্রতিষ্ঠান ও বিদেশি সংস্থায় চাকরি করছেন এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এছাড়াও শিক্ষার্থীরা জাতীয় পর্যায়ের বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় সাফল্য অর্জন করছে ধারাবাহিকভাবে। বিশ্ববিদ্যালয়টি পুরোপুরি ডিজিটালাইজেশন প্রক্রিয়ার আওয়ায় আনার প্রচেষ্টা চলছে।

বিশ্ববিদ্যালয় দিবস নিয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. আবুল কালাম মো. লুৎফর রহমান বলেন, ২০ অক্টোবর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ১৮ বছর অতিক্রম করে ১৯ বছরে পা দিতে যাচ্ছে। কিছু সীমাবদ্ধ থাকা সত্ত্বেও এ দেড় যুগে অনেক প্রাপ্তি এ বিশ্ববিদ্যালয়ের। শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা- কর্মচারী এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অক্লান্ত প্রচেষ্টায় এটি দেশের অন্যতম একটি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। সীমিত সুযোগ-সুবিধার মধ্যেও এখানকার শিক্ষার্থীরা দেশের বিভিন্ন সেক্টরে তাদের মেধা মননশীলতার স্বাক্ষর রাখছে। তবে আমাদের হল চালু সব সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে। আমাদের শিক্ষকরাও দূর থেকে এসে ক্লাস নিচ্ছেন তাদের ও সমস্যা সমাধান হবে।

আরও পড়ুন>>> গুচ্ছের গ্যাঁড়াকলে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

সামগ্রিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য (রুটিন দায়িত্ব) ও কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. কামালউদ্দীন আহমদ বলেন, পূর্ণাঙ্গ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়কে আরও অনেক পথ পাড়ি দিতে হবে। সেজন্য দরকার আরও গবেষণা। এবং এর জন্য প্রয়োজন প্রচুর অর্থ। এরই মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া ২০০ একর জায়গায় অবকাঠামো উন্নয়নের কাজ শুরু হয়েছে। সাংস্কৃতিক ও প্রশাসনিক ক্ষেত্রে জগন্নাথের অর্জন অত্যন্ত ঈর্ষণীয়। আমাদের আবাসিক সংকট কেটে গেলে এটি বাংলাদেশের সেরা বিশ্ববিদ্যালয় হবে। ২০৪১ এর স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সবাই তাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখবে ইনশাআল্লাহ।

প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, বর্তমান বিশ্ববিদ্যালয়ে ছয়টি অনুষদের অধীনে ৩৬টি বিভাগ ও দুটি ইনস্টিটিউট আছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে ৬৭১ জন শিক্ষক, ১৭ হাজার ৫২৭ জন শিক্ষার্থী। কর্মকর্তা ২৩৮ জন, কর্মচারী ৪৪৭ জন। ১৫৬ জন অধ্যাপক কর্মরত আছেন এ বিশ্ববিদ্যালয়ে। এর মধ্যে গ্রেড-১ পদে ৩৬ জন, গ্রেড-২ পদে ৪৬জন এবং গ্রেড-৩ পদে ৭৪ জন অধ্যাপক আছেন।

২০০৫ সালের ১১ সেপ্টেম্বর অষ্টম জাতীয় সংসদের ১৮তম অধিবেশনে ‘জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় আইন–২০০৫’ সংসদে উত্থাপিত হয় এবং ওই বছরের ২০ অক্টোবর সরকার প্রজ্ঞাপন জারি করে জগন্নাথ কলেজকে একটি পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে ঘোষণা করে।

আরএ/এমআইএইচএস/এএসএম