গুচ্ছের গ্যাঁড়াকলে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক
বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক জবি
প্রকাশিত: ০৯:২৭ এএম, ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩
ফাইল ছবি

২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষে দ্বিতীয়বারের মতো গুচ্ছ ভর্তি পদ্ধতিতে অংশ নেয় দেশের ২২ বিশ্ববিদ্যালয়। গত বছরের ৩০ জুলাই শুরু হয়ে ২০ আগস্ট শেষ হয় গুচ্ছভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভর্তি পরীক্ষা। এরপর পেরিয়ে গেছে সাড়ে ৫ মাস। কিন্তু এখনো সবগুলো আসন পূর্ণ হয়নি অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ের। সার্বিক প্রক্রিয়া সহজ করতে যে পদ্ধতি চালু করা হয়েছিল, তারই গ্যাঁড়াকলে পড়েছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। এর ব্যতিক্রম নয় এ কার্যক্রমে নেতৃত্ব দেওয়া জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। বার বার মেধাতালিকা ও গণবিজ্ঞপ্তি দিয়েও আসন কোনোভাবেই পূর্ণ হচ্ছে না বিশ্ববিদ্যালয়টির।

এ কারণে প্রায় দেড়শ আসন ফাঁকা রেখেই প্রথম বর্ষের ক্লাস শুরু করে কর্তৃপক্ষ। ভর্তি কার্যক্রমে অধিক কালক্ষেপণের ফলে প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের ক্লাসও শুরু হয়েছে দেরিতে। ফলে তারা স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়ের একই সেশনের শিক্ষার্থীদের চেয়ে সময়ের দৌড়ে পিছিয়ে পড়েছে।

পার্শ্ববর্তী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে একই সেশনের (২০২১-২২) শিক্ষার্থীদের প্রথম বর্ষ যেখানে শেষের দিকে, ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষা শুরুর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে আগামী ২৯ এপ্রিল থেকে, সেখানে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় এখনো ভর্তি কার্যক্রমই শেষ করতে পারেনি। কবে নাগাদ শেষ হবে, নিশ্চয়তা নেই তারও।

সার্বিক পরিস্থিতিতে গুচ্ছ পদ্ধতি বাদ দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টির নিজস্ব ভর্তি পদ্ধতিতে ফেরার দাবি জোরালো হচ্ছে। এরই মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি নিজস্ব ভর্তি পদ্ধতিতে ফেরার দাবি জানিয়েছেন কর্তৃপক্ষের কাছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩টি অনুষদ থেকে উপাচার্যের কাছে গুচ্ছ থেকে বের হয়ে নিজস্ব ভর্তি পদ্ধতির পক্ষে প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে।

আরও পড়ুন: ১০ দফা দাবিতে উত্তাল জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

এ নিয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপক বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের আসন পরিপূর্ণ হওয়ার ক্ষেত্রে শিক্ষার্থী সংকট, খুবই অনাকাঙ্ক্ষিত বিষয়। গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি লাঘবে আয়োজন করা হলেও নানান অব্যবস্থাপনা ছিল। এটিকে আরও ভালো করা যেত। এখন এর বিরূপ প্রভাব শিক্ষার্থীদের ওপর দিয়েই যাচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক সেশন পেছাচ্ছে। সার্বিক পর্যালোচনায় নিজস্ব ভর্তি পদ্ধতিতে ফেরার বিকল্প কিছু নেই।

শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. এ. কে. এম লুৎফর রহমান বলেন, গুচ্ছ ভর্তি পদ্ধতিতে যে মানের দরকার ছিল, সেটা নেই। এর ফলে উল্টো শিক্ষার্থীরাই এক প্রকার হয়রানির শিকার হচ্ছে, সেশনজটও বাড়ছে। আমরা গতবারও গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা সংক্রান্ত বেশ কিছু দাবি জানিয়েছিলাম। কিন্ত সেগুলো মানা হয়নি। এবছর আমরা আবারও দাবি জানিয়েছি নিজস্ব ভর্তি পদ্ধতিতে ফেরার জন্য। বিশেষ একাডেমিক কাউন্সিলেই হয়তো এটার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে।

আরও পড়ুন: জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কি খেলার মাঠও থাকবে না?

গুচ্ছের ভর্তি পরীক্ষা শেষে গত ১৭ অক্টোবর থেকে ২৭ অক্টোবর পর্যন্ত জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক (সম্মান) ও বিবিএ প্রথম বর্ষে ভর্তির জন্য আবেদন করেন শিক্ষার্থীরা। গত ৪ নভেম্বর প্রকাশ করা হয় প্রথম মেধাতালিকা। এরপর ধাপে ধাপে আরও ৮টি মেধাতালিকা প্রকাশ করা হয়। পাশাপাশি একটি গণবিজ্ঞপ্তি দিয়ে শিক্ষার্থীদের সরাসরি ভাইভার জন্য ডাকে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এতেও আসন পরিপূর্ণ না হওয়ায় সর্বশেষ গত ২৯ জানুয়ারি তাৎক্ষণিক ভর্তির বিজ্ঞপ্তি দেয় কর্তৃপক্ষ। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, এরপরও বিশ্ববিদ্যালয়টিতে প্রায় দেড়শ আসন ফাঁকা আছে।

বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্টদের দাবি, অল্প সময়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় যতটা এগিয়ে গিয়েছিল, দুবার গুচ্ছে যাওয়ায় অনেকটা আবার পিছিয়ে গেছে। গুচ্ছ পদ্ধতির অসংগতির ফলেই এবার শিক্ষার্থী সংকট হয়েছে। বারবার গণসাক্ষাৎকার নেওয়ায় এখানে মেধার কোনো মূল্যায়ন হয়নি। যারা ন্যূনতম নম্বর পেয়েছে তারাই এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হচ্ছে। তাই আগামী শিক্ষাবর্ষে আবারও নিজস্ব ভর্তি পদ্ধতিতে ফেরার দাবি তাদের।

আরও পড়ুন: ৩ বিভাগে শিক্ষক নিয়োগ দেবে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

এ নিয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. শাহজাহান বলেন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন সম্মিলিত ঘ ইউনিট নেই। ফলে বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরা বিজ্ঞান ইউনিটে পরীক্ষা দিয়েও যারা সিরিয়ালে পেছনে, তারা কলা অনুষদের বিষয় বরাদ্দ পাচ্ছে। অনেক শিক্ষার্থী আছে, যারা কলা অনুষদের বিষয় পড়তে আগ্রহী না। তাদের চাইলেই জোর করে ভর্তি করানো সম্ভব নয়। যদি ঘ ইউনিট থাকে তাহলে সেখানে তারাই পরীক্ষা দেবে যারা কলা অনুষদের বিষয় পড়তে চান। আর যারা বিজ্ঞানের বিষয় পড়তে চাইবে তারা বিজ্ঞানের নিজস্ব ইউনিটে পরীক্ষা দেবে। এর ফলে আসন পূর্ণ হতে তেমন জটিলতা বা সময়ক্ষেপণ হবে না। তাই আবারও সম্মিলিত ইউনিট চালু করার ব্যবস্থা করা যেতে পারে। তাহলে পরবর্তী বছরে আসনগুলো পূর্ণ হতে এত সময় লাগবে না বলে আশা করা যায়।

সার্বিক বিষয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. কামালউদ্দীন আহমদ বলেন, গুচ্ছ নিয়ে সবার মধ্যেই অসন্তোষ আছে। আমরা সর্বশেষ মিটিংয়ে এ নিয়ে কথা বলেছি। গুচ্ছ বিষয়ে খুব শিগগির আমাদের বিশেষ একাডেমিক কাউন্সিলের মিটিং হবে। সেখানেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে।

রায়হান আহমেদ/এমএইচআর/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।