ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

বিদেশে যাচ্ছে কুমিল্লার সেমাই

জাহিদ পাটোয়ারী | কুমিল্লা | প্রকাশিত: ০৩:৩৭ পিএম, ২৬ মার্চ ২০২৫

রমজান এলে ব্যস্ততা বেড়ে যায় সেমাই তৈরির কারিগরদের। কারখানাগুলোতে দম ফেলানোর ফুসরত নেই। প্রায় চার দশকের বেশি সময় ধরে কুমিল্লার বিসিক শিল্পনগরীর বেশ কয়েকটি কারখানায় এমন চিত্র দেখা যায়।

কুমিল্লার তৈরি সেমাইয়ের সুনাম ও খ্যাতি হয়েছে বিশ্বজুড়ে। রাসায়নিক ও কৃত্রিম রং ছাড়া উৎপাদিত এ সেমাইয়ের চাহিদা রয়েছে দেশব্যাপী। এ সেমাই ভারত ও মালয়েশিয়াসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যাচ্ছে।

সরেজমিনে সেমাই কারখানায় গিয়ে দেখা যায়, এ শিল্প এলাকায় ছয়টি সেমাই তৈরির কারখানা রয়েছে। প্রায় চার দশকেরও বেশি সময় ধরে কারখানাগুলোতে বাংলা ও লাচ্ছা দুই ধরনের সেমাই তৈরি হচ্ছে।

বিদেশে যাচ্ছে কুমিল্লার সেমাই

খন্দকার ফুড ইন্ডাস্ট্রিজে গিয়ে দেখা যায়, দিন-রাত কাজ করছেন প্রতিষ্ঠানটির কর্মচারীরা। অন্যসব কারখানা থেকে এখানকার সেমাইয়ে মালিক ও রপ্তানিকারকদের রয়েছে বাড়তি নজর। এর কারণ কারখানা থেকে সেমাই স্থানীয় বাজারের পাশাপাশি যাচ্ছে দেশের বাইরেও। এতে তৈরি হচ্ছে নতুন বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জনের খাত। কুমিল্লা বিসিকের এটি একমাত্র প্রতিষ্ঠান, যারা দেশের বাইরে সেমাই রপ্তানি করে।

৪ নম্বর প্লটে থাকা কুমিল্লা ফ্লাওয়ার মিলসের ভেতরে প্রবেশ করে দেখা যায়, কারিগররা ব্যস্ত সময় পার করছেন। মেশিনে নানা উপকরণ মিশিয়ে ময়দা দিয়ে সেমাই তৈরির জন্য প্রস্তুত করা হয়। পরে উৎপাদিত কাঁচা সেমাই শুকানো হয় কারখানা ছাদে। ভালোভাবে শুকানোর পর এ সেমাই লাকড়ির চুলায় ভাজা হয়। এরপর নারী শ্রমিকেরা এসব সেমাই হাতে প্যাকেট করছেন। এরপর ২৪টি প্যাকেট একেকটি কার্টনে ঢোকানো হয়। ২০০ গ্রাম করে ২৪ প্যাকেটের প্রতি কার্টন সেমাই কারখানা থেকে বিক্রি করা হচ্ছে ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকায়।

কুমিল্লা ফ্লাওয়ার মিলসের নারী শ্রমিক সুমাইয়া আক্তার বলেন, ঈদকে সামনে রেখে উৎপাদিত সেমাই আমরা দ্রুত প্যাকেটজাত করছি। ঘণ্টায় তিনজন শ্রমিক ২০০-৩০০ সেমাইয়ের প্যাকেট প্রস্তুত করতে পারেন। স্বাস্থ্যবিধি মেনে আমরা এ কাজ করার চেষ্টা করছি।

বিদেশে যাচ্ছে কুমিল্লার সেমাই

সেমাই তৈরির কারিগর ফজলে রাব্বী বলেন, লাকড়ির আগুনে সেমাই ভাজা হলে এর স্বাদ ভালো থাকে। তাই আমরা সব সময় লাকড়ির আগুনে সেমাই ভাজি। ঈদের অল্প কয়েক দিন বাকি, প্রতিটা মিনিটের দাম আমাদের কাছে অনেক বেশি। কারণ আমাদের সেমাইয়ের চাহিদা দেশ ব্যাপী।

প্রতিষ্ঠানটির বিপণন বিভাগের কর্মকর্তা মো. মনিরুল ইসলাম বলেন, কুমিল্লা বিসিকে উৎপাদিত সেমাইয়ের যথেষ্ট চাহিদা রয়েছে। আমাদের উৎপাদিত সেমাই কুমিল্লা ছাড়াও ব্রাহ্মণবাড়িয়া, চাঁদপুর, ফেনী, নোয়াখালীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্রির জন্য যায়।

খন্দকার ফুড ইন্ডাস্ট্রিজের কর্ণধার মো. ফিরোজ খন্দকার বলেন, ২০২২ সাল থেকে দেশের বাইরে বিস্কুট ও চানাচুরসহ বিভিন্ন প্রোডাক্ট রফতানি করছি। ২০২৩ সাল থেকে ভারত ও মালয়েশিয়ায় সেমাই রপ্তানি শুরু করি। চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে মালয়েশিয়া, বিবির বাজার দিয়ে ভারতের ত্রিপুরা ও গোয়াইনঘাট দিয়ে ভারতের আসামে রপ্তানি করছি। এ বছর আমরা ভারতে এক লাখ ডলার ও মালয়েশিয়ায় ২০ হাজার ডলার রপ্তানি করছি।

বিদেশে যাচ্ছে কুমিল্লার সেমাই

কুমিল্লা ফ্লাওয়ার মিলসের পরিচালক সৈয়দ ইবনুল কাদের বলেন, আমরা সারাবছর সেমাই উৎপাদন করি না। প্রতিবছরের মতো এবারও ঈদ সামনে রেখে চিকন বাংলা সেমাই উৎপাদন করছি। মূলত রমজান শুরুর মাস খানেক আগে থেকে সেমাই তৈরির কাজ শুরু হয়। আমরা সেমাই তৈরিতে কোনো রাসায়নিক বা রং ব্যবহার করা হয় না। প্রায় চার দশক ধরে গুণগত মান বজায় রেখে সেমাইয়ের ব্যবসা করছি। নিম্নআয়ের মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখার জন্য আমরা সীমিত লাভে সেমাই বিক্রি করে থাকি।

কুমিল্লা বিসিকের উপ মহাব্যবস্থাপক মো. মুনতাসীর মামুন বলেন, কুমিল্লা বিসিকের উৎপাদিত সেমাইয়ের সুনাম ও খ্যাতি রয়েছে। বিশেষ করে সেমাই তৈরিতে রাসায়নিক ও রং ব্যবহার করা হয় না। আমরা প্রতিনিয়ত তদারকির মাধ্যমে বিষয়টি নিশ্চিত করছি। গুনগত মানের কারণে এ খানকার সেমাই দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে।

জাহিদ পাটোয়ারী/আরএইচ/এমএস