গাজীপুর
বন বিভাগের উচ্ছেদ অভিযানে গৃহহারা আড়াইশো পরিবার
‘ঈদের আগের দিন ঘরবাড়ি ভাইঙ্গা দেওনে আমাগো বাইত্তে (বাড়িতে) কোনো ঈদ নাই। রান্নার চুলাটাও ভাইঙ্গা দিছে, হের লাইগা রান্দন-বান্ধনও (রান্না বান্না) করবার পারি নাই। এর-ওর বাড়িত থাইক্যা কিছু খাওন-দাওন দিছে হেগিলা (সেগুলো) খাইয়াই আছি। খোলা আকাশের নিচে মশারি টানাইয়া কোনো রকমে ঘুমাইতাছি। এটা কোন মানুষের জীবন অইলো। আমাগো দেহার (দেখার) যেন কেউ নাই।’
কান্নাজড়িত কণ্ঠে কথাগুলো বলছিলেন গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার বাঘাম্বর গ্রামের বাসিন্দা জরিনা বেগম।
একই এলাকার বাসিন্দা আসমা খাতুন বলেন, রাতে মশারি টানিয়ে খোলা জায়গায় ঘুমিয়ে ছিলাম। মধ্যরাতে হঠাৎ শিয়াল ঢুকে শরীরে কামড়ে দিয়েছে।

ঠিক ঈদের আগের দিন রোববার (৩০ মার্চ) ঢাকা বন বিভাগ অভিযান চালিয়ে এস্কেভেটর (মাটিকাটার যন্ত্র) দিয়ে ভেঙে গুঁড়িয়ে দেয় কালিয়াকৈর উপজেলার সিনাবহ ও বাঘাম্বর এলাকার ঘরবাড়ি। এতে গৃহহীন হয়ে পড়েছে আড়াই শতাধিক পরিবার। ঘরবাড়ি ও রান্নাঘর ভেঙে ফেলায় ঈদের দিনও অনেকের খাবার জোটেনি। খোলা আকাশের নিচে মশারি টাঙিয়ে রাত্রি যাপন করছেন বাসিন্দারা।
মঙ্গলবার দুপুরে বিপদগ্রস্ত পরিবারগুলোকে ত্রাণ সহায়তা দিয়েছেন কালিয়াকৈর পৌর বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাইজুদ্দিন আহাম্মেদ।
বিএনপি নেতা সাইজুদ্দিন আহাম্মেদ বলেন, যে পরিমাণ ত্রাণ সহায়তা দেওয়া হয়েছে, আশা করছি আগামী ১৫-১৬ দিন তারা ভালোভাবে কাটিয়ে দিতে পারবেন। প্রয়োজনে আরও সহায়তা দেওয়া হবে।
বন বিভাগ সূত্রে জানা যায়, কালিয়াকৈরসহ বিভিন্ন এলাকায় গত ৫ আগস্টের পর বনের অসাধু কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় বন বিভাগের জমি দখল করে হাজার হাজার ঘরবাড়ি ও অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে। এদের মধ্যে অনেকেই দোতলা ভবন, কেউ টিনশেড, আবার কেউ আধা পাকা ঘর নির্মাণ করেছেন। স্থানীয় অসাধু ব্যক্তিরা অবৈধভাবে ঘর নির্মাণ করে ভাড়া দিয়েছেন। কয়েক মাস ধরেই বন বিভাগের লোকজন মাইকিং করে এসব অবৈধ স্থাপনা ভেঙে সরিয়ে নেওয়ার জন্য বলছেন। কিন্তু কেউ এ বিষয়ে কর্ণপাত করেননি।

অবশেষে রোববার সকালে যৌথ বাহিনীর সহযোগিতায় চারটি এস্কেভেটর দিয়ে উপজেলার সিনাবহ ও বাঘাম্বর এলাকায় আড়াই শতাধিক ঘরবাড়ি ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। ওইদিন থেকেই এতগুলো পরিচার খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছে। বাড়ির চুলাগুলো ভেঙে ঘরে থাকা চাল-ডাল ফেলে দেওয়ায় তারা রান্না করেও খেতে পারছেন না। আড়াইশ পরিবার ঈদ উদযাপন করা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। ঈদের দিন প্রতিবেশীদের কাছ থেকে কিছু খাবার পেয়ে কোনো রকমে খেয়ে আছেন।
ওই দুই এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে, যেদিকে চোখ যায় সেদিকেই ঘরবাড়ি ভাঙা। এ যেন এক ধ্বংস্তূপ। প্রতিটি বাড়ির খাট, আলমারি ঘরের ভেতরেই পড়ে আছে। টিনের ও আধাপাকা ঘরগুলো ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। সেখানে কোনো রকমে মশারি টাঙিয়ে শিশু ও বয়ষ্করা রাত্রীযাপন করছেন। কারো বাড়িতেই রান্না করতে দেখা যায়নি।
বাঘাম্বর গ্রামের বাসিন্দা মাহমুদা বেগম বলেন, ‘আমাগো দেশে যদি ১৬ লাখ রোহিঙ্গা থাকতে পারে, সরকার যদি তাদের থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা করতে পারে, তাইলে আমরা এই দেশের নাগরিক হয়ে কী দোষ করলাম। আমাদের ঘরবাড়ি কেন ভেঙে দেওয়া হলো। আমরাতো ভোটার, আমরাতো ভোট দেই। রোহিঙ্গারা সুবিদা পাইলে আমারা কেন পাবো না।’

ঢাকা বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) বশিরুল আল মামুন বলেন, দীর্ঘদিন ধরেই স্থানীয় ব্যক্তিরা বনের জমি দখল করে স্থাপনা তৈরি করছিলেন। বিশেষ করে ৫ আগস্টের পর দখলের পরিমাণ আরও বেড়ে যায়। তাদের নিজেদের এসব অবৈধ স্থাপনা সরিয়ে নিতে বলা হয়েছিল, কিন্তু সরাননি। বাধ্য হয়ে অভিযান চালিয়ে আড়াই শতাধিক স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, দখলদারদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে এবং বনভূমি পুনরুদ্ধারে নিয়মিত অভিযান চালানো হবে।
কালিয়াকৈর উপজেলার চন্দ্রা বিট কর্মকর্তা ইকবাল হোসেন বলেন, আমরা এখানে ২-৩ মাস আগে এসেছি। বর্তমানে যারা আছেন তারা কেউ বন দখলে সহযোগিতা করেনি। আগের কর্মকর্তারা করে থাকতে পারেন।
ঈদের আগে ঘর ভেঙে দেওয়ার বিষয়ে বলেন, এটি উপরের কর্মকর্তাদের বিষয়। এ বিষয়ে আমাদের কোনো কথা নেই।
এফএ/জেআইএম
সর্বশেষ - দেশজুড়ে
- ১ ফ্যাসিবাদী আমলে বন্ধ হওয়া চিনিকলগুলো পুনরায় চালুর উদ্যোগ নিয়েছি
- ২ ৮০০ টাকা কেজি রান্না করা গরুর মাংস কিনতে ক্রেতাদের হিড়িক
- ৩ পুরোনো রাজনীতি পরিহার করে নতুন রাজনীতি করতে চাই: মঞ্জু
- ৪ ফ্যাসিবাদের আমলে ৫ টাকা চাঁদা দিলে এখন ২০ টাকা দেওয়া লাগে
- ৫ রাজমিস্ত্রির বাড়ি থেকে ওয়ানশুটার গানসহ দুই পিস্তল উদ্ধার