ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

উৎপাদন খরচ ৩৮ বিক্রি ৫০, খুশি পেঁয়াজচাষিরা

আলমগীর হোসাইন | পাবনা | প্রকাশিত: ০৮:০২ পিএম, ২১ এপ্রিল ২০২৫

প্রতি কেজি পেঁয়াজ উৎপাদনে কৃষকের খরচ হয়েছে ৩৮-৪০ টাকা। সেক্ষেত্রে পেঁয়াজের দাম ৫০-৬০ টাকা পর্যন্ত স্বাভাবিক ও সহনশীল। এরচেয়ে বেশি হলে সেটা অস্বাভাবিক পর্যায়ে চলে যেতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন পাবনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. জাহাঙ্গীর আলম প্রামাণিক।

সোমবার (২১ এপ্রিল) জাগো নিউজকে একথা বলেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের এই কর্মকর্তা। জাহাঙ্গীর আলম বলেন, দাম যাতে অস্বাভাবিক আকারে বাড়তে না পারে, সেজন্য সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতনদের সঙ্গে তিনি আলাপ করেছেন।

পাবনায় মুড়িকাটা পেঁয়াজ (আগাম জাত) চাষে লোকসান হয়েছে চাষিদের। এরপর চলতি বছরের মার্চের শুরু থেকেই ব্যাপকহারে বাজারে তুলতে শুরু করেন চারা বা হালি পেঁয়াজ। এসময় হাজার টাকা মণ দরে পেঁয়াজের বাজার চলায় আবারও মাথায় হাত চাষিদের। তবে আমদানি বন্ধ ও মজুতদারদের তৎপরতায় সপ্তাহের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে দ্বিগুণ। ফলে মুখে হাসি ফুটেছে চাষিদের। দাম স্থির রাখতে আমদানি চালু না করার দাবিও তাদের।

উৎপাদন খরচ ৩৮ বিক্রি ৫০, খুশি পেঁয়াজচাষিরা

চাষিরা বলছেন, পাবনার পেঁয়াজ চাষিদের বড় একটি অংশ বেসরকারি সংস্থাসহ বিভিন্নভাবে ঋণ করে পেঁয়াজ আবাদ করেন। ফলে উত্তোলন মৌসুমের শুরুতেই ঋণ পরিশোধের ব্যাপক চাপ থাকে। এজন্য অনেকেই উত্তোলনের এক থেকে দুই মাসের মধ্যে অর্ধেক পেঁয়াজ বিক্রি করেন। এছাড়া পর্যাপ্ত সংরক্ষণাগার না থাকার কারণেও বাধ্য হয়ে পেঁয়াজ বিক্রি করেন অনেক চাষি। তবে যাদের সংরক্ষণাগার রয়েছে অথবা যারা আর্থিকভাবে সামর্থ্যবান ও ঋণ নেই; তারা ভালো দামের আশায় ঘরে রেখে দেন পেঁয়াজ। তবে এই সংখ্যা সর্বোচ্চ ২০-৩০ শতাংশ।

চলতি মৌসুমেও চিত্র একই। কীটনাশকের দোকানের বাকি ও অন্যান্য দেনা পরিশোধে উত্তোলনের শুরুতেই ব্যাপক লোকসানে উৎপাদিত পেঁয়াজের বড় একটি অংশ বিক্রি করে দিয়েছেন অনেক চাষি। তবে বর্তমানে দামবৃদ্ধিতে স্বস্তি প্রকাশ করেছেন চাষিরা। তারপরও চাষিদের শঙ্কা, এরইমধ্যে অনেকে কিছু পেঁয়াজ বিক্রি করে দেওয়ায় মূলধন উঠবে কিনা তা নিয়ে দুশ্চিন্তা কাটছে না তাদের।

উৎপাদন খরচ ৩৮ বিক্রি ৫০, খুশি পেঁয়াজচাষিরা

শুরু থেকেই এরকম দাম পেলে চাষিদের খরচ উঠতো জানিয়ে চাষি ইউনুস আলী মোল্লা জাগো নিউজকে বলেন, ‌বিঘায় ৫০ থেকে ৭০ হাজার টাকা খরচ। এবার ফলন কম। গড়ে ৩৫ থেকে ৪০ মণ করে ফলন হয়েছে। সর্বোচ্চ হয়েছে ৫০ মণ। ঋণ পরিশোধের জন্য জমি থেকে তুলে দফায় দফায় অর্ধেক পেঁয়াজ বিক্রি করেছি। সেসময় হাজার টাকা মণ দর ছিল। ঘরে পেঁয়াজ কমে এসেছে। এখন দাম বাড়ছে। এটা ভালো খবর হলেও খরচ উঠবে না বলে জানান এ চাষি।

হাজিরহাটসহ পাবনার কয়েকটি পাইকারি বাজার ঘুরে দেখা যায়, সপ্তাহের ব্যবধানে দাম দ্বিগুণ বাড়ায় ভোর থেকেই বেশিরভাগ বাজার বা হাটে পাইকারি দামে পেঁয়াজ বিক্রি করতে এসেছেন চাষিরা। মানভেদে ১৬০০-২২০০ টাকা মণ (কেজি ৪০-৫৫ টাকা) দরে বিক্রি হচ্ছে পেঁয়াজ। সপ্তাহখানেক আগেও এসব পেঁয়াজ এক হাজার থেকে সর্বোচ্চ এক হাজার ৩০০ টাকায় (কেজি ২৫-৩২ টাকা) বিক্রি হয়েছে। দাম বাড়ায় এক থেকে দুই সপ্তাহ আগের তুলনায় বাজার বা হাটগুলোতে এখন পেঁয়াজ বেশি আনছেন চাষিরা।

উৎপাদন খরচ ৩৮ বিক্রি ৫০, খুশি পেঁয়াজচাষিরা

হাজিরহাটে পেঁয়াজ বিক্রি করতে আসা চাষি আলিমুদ্দিন খা বলেন, ‘চৈত্র মাসের শেষের দিক থেকে বৈশাখ মাসে পেঁয়াজ বাঁধাই (মজুত) করা শুরু হয়। পেঁয়াজ ওঠার শুরুতে বাঁধাইকারীরা না কিনলেও এসময় বেশি কেনেন। এছাড়া আমদানি পেঁয়াজ বাজারে এখন কম। তাই একটু দাম বেড়েছে। এরকম দাম হলে কিছু চাষি অন্তত ঋণটা শোধ করতে পারতো।’

সদর উপজেলার ভাঁড়ারা ইউনিয়নের হলুদবাড়িয়া থেকে পেঁয়াজ বিক্রি করতে আসা সজিব বলেন, ‘আমদানি থাকলে দাম কমে। এখন বন্ধ, তাই দাম একটু বেড়েছে। এছাড়া এখন বাঁধাই সময়। এখন ব্যাপারী-ব্যবসায়ীরা বাঁধাইয়ের জন্য বেশি কিনছেন। সেক্ষেত্রে দাম বাড়ছে। এতে আমরা খুশি। বতরের সময় (উত্তোলনের সময়) আমাদের এক হাজার টাকা মণে বিক্রি করতে হয়েছে। এখন দাম এরকম থাকলে আমরা লাভবান হবো।’

উৎপাদন খরচ ৩৮ বিক্রি ৫০, খুশি পেঁয়াজচাষিরা

ওসমান গণি ও আ. রব—দুজনই পেঁয়াজ ব্যবসায়ী। তারা জানান, গত তিন মাসে মেহেরপুরের পেঁয়াজের একটা বাজার ছিল। ওই পেঁয়াজটা এখন নেই। তাছাড়া এখন কিছু মানুষ স্টক করছে। আবার আমদানিও বন্ধ। তাই পেঁয়াজের দাম একটু বাড়তি। এটা চাষিদের জন্য ভালো। তবে বাজার এরচেয়ে বেশি হওয়ার সম্ভাবনা নেই।’

কৃষি বিভাগ বলছে, জেলায় এবার চারা বা হালি পেঁয়াজ আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪৪ হাজার হেক্টর জমিতে। এর বিপরীতে আবাদ হয়েছে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি। এছাড়া উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছিল ছয় লাখ ৮০ হাজার মেট্রিক টন। এর বিপরীতে উৎপাদন হয়েছে সাত লাখ ১২ হাজার মেট্রিক টন। তবে চাষিরা বলছেন, এবার ফলন কম পেয়েছেন তারা। তবে আবাদ হয়েছে বেশি।

উৎপাদন খরচ ৩৮ বিক্রি ৫০, খুশি পেঁয়াজচাষিরা

চাষির ঘরে পর্যাপ্ত পেঁয়াজ রয়েছে জানিয়ে পাবনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. জাহাঙ্গীর আলম প্রামাণিক বলেন, আমাদের কাছে থাকা মাঠপর্যায়ের তথ্যানুযায়ী চাষিদের ঘরে এখনো অনেক পেঁয়াজ রয়েছে। হয়তো ২০-৩০ শতাংশ পেঁয়াজ বিক্রি করেছেন তারা। পেঁয়াজ সংরক্ষণে কৃষকদের আমরা এয়ার ফ্লো প্রযুক্তি ব্যবহারে উৎসাহ দিচ্ছি। সুজানগরে ৬০, সদরে তিন ও সাঁথিয়া উপজেলায় পাঁচটি এয়ার ফ্লো মেশিন কৃষকরা ব্যবহার করছেন। সরকারিভাবে এর ব্যবহার বাড়াতে আমরা চেষ্টা করছি।

এসআর/এএসএম