তিস্তার পানিতে কৃষকের সর্বনাশ
তিস্তার পানিতে ডুবে গেছে বিস্তীর্ণ এলাকার বাদামক্ষেত। ছবি-জাগো নিউজ
বৃষ্টি ও উজানের ঢলে তিস্তার পানি বেড়ে কুড়িগ্রামের উলিপুর ও রাজারহাট উপজেলায় বিভিন্ন চরে তলিয়ে গেছে বাদামসহ বিভিন্ন ফসলের ক্ষেত। এতে ক্ষতির মুখে পড়েছেন কৃষকরা। ক্ষতি কিছুটা পুষিয়ে নিতে কোথাও কোথাও তোলা হচ্ছে অপরিপক্ব বাদাম।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শনিবার (১৭ মে) থেকে বাড়তে থাকে তিস্তার পানি। রোববার (১৮ মে) জেলার রাজারহাট উপজেলার বিদ্যানন্দ ও ঘড়িয়ালডাঙ্গা ইউনিয়নের তিস্তা নদীর পাড়ের চর ও নিচু এলাকায় বাদামসহ বিভিন্ন ক্ষেত পানিতে ডুবে আছে। উলিপুর উপজেলার তিস্তা নদীবেষ্টিত দলদলিয়া ও থেতরাই ইউনিয়নের কয়েকটি কয়েকটি এলাকাতেও দেখা গেছে এমন দৃশ্য।

রাজারহাট উপজেলা কৃষি অফিস জানায়, এবছর তিস্তা নদীর পাড়ে জেগে ওঠা চরাঞ্চলে ১৭৫ হেক্টর চিনাবাদাম, ২০ হেক্টর পাট, তিন হেক্টর মরিচ ও পাঁচ হেক্টর বিভিন্ন সবজি চাষাবাদ করেছেন চাষিরা। কয়েকদিনের ভারী ও মাঝারি বৃষ্টি এবং উজানে বৃষ্টির ফলে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে তিস্তা নদীর পানি বেড়ে গিয়ে নিচু চরগুলোতে প্রবেশ করে। এতে রাজারহাট উপজেলার বিদ্যানন্দ ও ঘড়িয়ালডাঙ্গা ইউনিয়নের তিস্তা নদীর পাড়ে নিচু চরাঞ্চলের ক্ষেত তলিয়ে যায়। সবচেয়ে বেশি নিমজ্জিত হয়েছে বাদাম ক্ষেত। কেউ কেউ পানিতে নেমে অপরিপক্ব বাদাম, মরিচসহ অন্য ফসল তোলার চেষ্টা করছেন। কিন্তু তাতে লাভের চেয়ে ক্ষতি বেশি হচ্ছে।
তিস্তাপাড়ের বাসিন্দাদের শঙ্কা, উজানের ঢল বাড়তে থাকলে নতুন করে অনেক ক্ষেত তলিয়ে যাবে। বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের চর বিদ্যানন্দ গ্রামের কৃষক মাঈদুল ইসলাম জানান, তিনি চরের ছয় একর জমিতে চীনাবাদাম চাষ করেছেন। সবটুকু তলিয়ে গেছে।
- আরও পড়ুন
- ‘এভাবে চলতে থাকলে খালে পরিণত হবে তিস্তা’
- তিস্তা বাঁচানোর পদযাত্রায় মানুষের ঢল
- ভারত পানিকে মারণাস্ত্র-যুদ্ধাস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করেছে
রাজারহাট উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাইফুরন্নাহার সাথী বলেন, হঠাৎ তিস্তা নদীর পানি বেড়েছে। বিদ্যানন্দ ও ঘড়িয়ালডাঙ্গা ইউনিয়নের নামার চর কিছুটা ডুবে গেছে। কৃষকদের উঠতি বাদাম তোলার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
এদিকে, উলিপুর উপজেলা কৃষি অফিস জানিয়েছে, চলতি মৌসুমে তিস্তা নদীর চরে ২৩০ হেক্টর জমিতে চীনাবাদাম, ৪০০ হেক্টর পাট, ১০ হেক্টর মুগডাল, ১০ হেক্টর মরিচ, ৫ হেক্টর জমিতে শাকসবজি চাষ হয়েছে। এরমধ্যে কয়েকদিনের ভারী ও মাঝারি বৃষ্টিতে তিস্তা নদীর পানি বেড়ে ওই এলাকার বেশ কিছু ক্ষেত তলিয়ে গেছে।
উপজেলার থেতরাই ইউনিয়নের চর গোড়াইপিয়ারের কৃষক লাল মিয়া, ফরিদ শেখ, আলী আকবর, নজরুল ইসলাম, হোসেন আলীসহ কয়েকজন জানান, তাদের বাদাম ক্ষেত এখন পানির নিচে। ক্ষতি কিছুটা পুষিয়ে নিতে তাদের কেউ কেউ পানিতে অপরিপক্ব বাদাম তোলার চেষ্টা করছেন।

দলদলিয়া ইউনিয়নের কর্পূরা এলাকার কৃষক শুকাব্বর আলী জানান, তিনি ৫০ শতক জমিতে বাদাম চাষ করেছেন। এতে বেশ টাকা খরচ হয়েছে। ৩০ শতক জমির বাদাম ক্ষেত এখন পানির নিচে। সেগুলো তোলার চেষ্টা করছেন। তবে খরচ উঠবে না। পাশের রশিদের চর এলাকার বাদাম চাষি আতিয়ার রহমানও বলেন একই কথা।
উলিপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোশাররফ হোসেন জানান, তিস্তা নদীর পানি বেড়ে উপজেলার চার ইউনিয়নে প্রায় দুই হেক্টর জমির চীনাবাদাম পানিতে তলিয়ে গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকা করা হচ্ছে।
কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর খামারবাড়ীর উপপরিচালক আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, এ পর্যন্ত জেলায় তিন হেক্টর বাদামক্ষেত তলিয়ে যাওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে। তবে এরইমধ্যে পানি নামতে শুরু করেছে। পানি নেমে গেলে কৃষকের তেমন ক্ষতি হবে না।
রোকনুজ্জামান মানু/এসআর/জিকেএস