সেতুর অভাবে যুগ যুগ ধরে দুর্ভোগ আলোকবালীবাসীর
কচুরিপানার জট পেরিয়ে গন্তব্যে পৌঁছাতে অতিরিক্ত ৩-৪ ঘণ্টা সময় লেগে যায়/ছবি-জাগো নিউজ
সেতুর অভাবে যুগ যুগ ধরে দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন নরসিংদীর চরাঞ্চল আলোকবালী ইউনিয়নের অর্ধলক্ষাধিক মানুষ। জেলা সদরের সঙ্গে উপজেলার আলোকবালী ইউনিয়নের জনগণের যাতায়াতের একমাত্র ভরসা নৌকা। মেঘনা নদী দ্বারা পরিবেষ্টিত এই চরাঞ্চল থেকে শহরে যাতায়াতে সময় লাগে ৪-৫ ঘণ্টা। এতে দুর্ভোগের পাশাপাশি অতিরিক্ত অর্থও খরচ হচ্ছে বাসিন্দাদের।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সদর উপজেলার এই ইউনিয়নে ৯টি গ্রামে ৫০ হাজার নারী-পুরুষের বসবাস। জেলা শহর থেকে এর দূরত্ব ২০ কিলোমিটার হলেও নদীতে সেতু না থাকায় দুর্ভোগ বাড়ছে চরমে। কচুরিপানার জট পেরিয়ে নৌকায় করে চলাচল করতে হয় তাদের। নদীপথে পার হতে গিয়ে ঘটছে দুর্ঘটনা।
আলোকবালী গ্রামের বাসিন্দা রুবেল আহমেদ জাগো নিউজকে বলেন, ‘নদীতে সেতু না থাকায় নৌকায় আসতে কচুরিপানার জন্য এক ঘণ্টার রাস্তা ৩-৪ ঘণ্টা লাগছে। রোগীরা যথাসময়ে চিকিৎসা নিতে পারেন না। অনেক সময় অন্তঃসত্ত্বা নারীরা মাঝপথেই সন্তান প্রসব করেন। কৃষিপণ্য বাজারজাত করতে পারি না। শিক্ষার্থীরাও চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। ৩০০-৩৫০ মিটার দৈর্ঘ্যের একটি সেতু হলে আমাদের সমস্যা অনেকটাই কমে যেত।’
বাখরনগর গ্রামের আহমদ মিয়া বলেন, ‘এক রাতে আমার বাবা বুকে ব্যথা অনুভব করেন। তবে ঘন কুয়াশা ও নদীতে ঘন কচুরিপানা থাকায় কোনো নৌকা শহরে আসতে রাজি হয়নি। পরে ভোরে নৌকায় প্রায় দেড় ঘণ্টা বিলম্বে নরসিংদী সদর হাসপাতালে নিয়ে আসি। ততক্ষণে বাবা বড় ধরনের হার্ট অ্যাটাক করেন। হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক আমাদের জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে রেফার করেন। দীর্ঘপথ পাড়ি দিয়ে ঢাকার শেরে-বাংলা নগরে পৌঁছে হাসপাতালের মেইন গেটে প্রবেশ করতেই বাবা মারা যান। সঠিক সময়ে চিকিৎসা দিলে তাকে বাঁচানো যেতো।’
আলোকবালী গ্রামের সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘শহরের সঙ্গে সড়ক পথে যোগাযোগ না থাকায় প্রশাসন ঠিকমতো দায়িত্ব পালন করতে পারছে না। ফলে, সন্ত্রাস, মাদক ও অস্ত্রের ঝনঝনানি ব্যাপক হারে বেড়েছে।’
আলোকবালীর আরেক বাসিন্দা তোফাজ্জল হোসেন বলেন, আমাদের এলাকার জনগণের দুর্ভোগ লাঘবে মেঘনা নদীর ওপর সেতু নির্মাণ করা খুবই জরুরি হয়ে পড়েছে।
এ বিষয়ে নরসিংদীর এলজিইডির প্রধান প্রকৌশলী ফুলকাম বাদশা বলেন, ‘আমি নিজে পরিদর্শনে গিয়ে কচুরিপানায় তিন ঘণ্টা নৌকায় আটকে ছিলাম। বিষয়টি আমি উপলব্ধি করেছি। এরইমধ্যে সেতু নির্মাণের সম্ভাব্যতা যাচাই শেষ হয়েছে। আলোকবালী থেকে করিমপুরের শ্রীনগর পর্যন্ত প্রায় ৩০০ মিটার দীর্ঘ সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।’
নরসিংদী সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আসমা জাহান সরকার বলেন, ‘অবহেলিত চরাঞ্চলের মানুষ দীর্ঘদিন ধরে দুর্ভোগে রয়েছেন। আমি নিজেও নৌপথে গিয়ে পরিস্থিতি দেখেছি। তাদের সুবিধার্থে সেতু নির্মাণের জন্য সম্ভাব্যতা যাচাই করা হয়েছে। এ বিষয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’
সঞ্জিত সাহা/এসআর/জিকেএস