ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

তিস্তা সেতুতে খুলবে উন্নয়নের দ্বার

জেলা প্রতিনিধি | গাইবান্ধা | প্রকাশিত: ১২:১৮ পিএম, ২৩ জুলাই ২০২৫

গাইবান্ধা ও কুড়িগ্রামের সীমান্তে তিস্তা নদীর ওপর নির্মিত সেতুর কাজ প্রায় শেষ। আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহে এটি যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। গাইবান্ধা ও কুড়িগ্রামকে সংযোগকারী এ সেতুর ফলে এ অঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থার পাশাপাশি বাণিজ্যের প্রসার ঘটবে বলছেন স্থানীয়রা।

সেতুটি নির্মিত হয়েছে গাইবান্ধা জেলার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার হরিপুরঘাট এলাকায়। জেলা শহর থেকে এর দূরত্ব প্রায় ২৮ কিলোমিটার। এর অপর প্রান্তে কুড়িগ্রামের চিলমারী ঘাট। উদ্বোধনের আগেই সেতু এলাকা এক ধরনের বিনোদন কেন্দ্র হয়ে উঠেছে। প্রতিদিন শত শত মানুষ ছুটে আসছেন সেতু দেখতে।

গাইবান্ধা এলজিইডি কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, তিস্তা নদীর ওপর ১ হাজার ৪৯০ মিটার দীর্ঘ এ সেতু নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ৯২৫ কোটি টাকা। ২০১৮ সালের ৫ নভেম্বর প্রকল্পটির দরপত্র আহ্বান করা হয়। কাজের দায়িত্ব পায় চীনা প্রতিষ্ঠান ‘চায়না স্টেট কনস্ট্রাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশন লিমিটেড’।

তিস্তা সেতুতে খুলবে উন্নয়নের দ্বার

স্থানীয়রা বলছেন, সেতুটি উদ্বোধন হলে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি হবে। তখন দুই জেলার চরাঞ্চলসহ কৃষিপণ্য, শিল্পের কাঁচামাল, শিল্পজাত পণ্য সহজে ও স্বল্পব্যয়ে স্থানান্তর ঢাকাসহ বিভিন্ন জায়গায় স্থানান্তর করা যাবে। পাশাপাশি শিল্প ও ব্যবসায়-বাণিজ্যের প্রসার ঘটবে।

‘সেতুটি চালু হলে ব্যবসা বাণিজ্য করতে সুবিধা হবে। অনেক দূর আর ঘুরতে হবে না। চরের জিনিসপত্রের দাম কৃষকরা সঠিকভাবে পাবে।’

কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলার ব্যবসায়ী আইনুল হক বলেন, সেতুটি চালু হলে ব্যবসা বাণিজ্য করতে সুবিধা হবে। অনেক দূর আর ঘুরতে হবে না। চরের জিনিসপত্রের দাম কৃষকরা সঠিকভাবে পাবে।

কৃষক তারা মিয়া বলেন, যোগাযোগ ভালো না থাকায় চরের কাঁচামালের দাম পাই নাই। এখন দূর দূর থেকে পাইকাররা আসবে। আশা করছি দাম থেকে আ বঞ্চিত হবো না।

গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জের হরিপুর ইউনিয়নের ছিচা বাজারের বাসিন্দা শামীম মন্ডল বলেন, সেতুটি দীর্ঘ দিনের আন্দোলনের ফল। সেতুটি চালু হলে যোগাযোগ ব্যবস্থার দ্বার খুলে যাবে। সুন্দরগঞ্জ একটি উপজেলা শহর। এখান থেকে দূরপাল্লার কোনো গাড়ি যাওয়ার করে না। সেতুটি চালু হলে অসংখ্য গাড়ি যাতায়াত করবে। যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো হলে এলাকার মানুষের ভাগ্যের উন্নয়ন ঘটবে।

তিস্তা সেতুতে খুলবে উন্নয়নের দ্বার

শিক্ষিকা মোছা. আফিয়া জাহান বলেন, যে কোনো এলাকায় উন্নয়নের জন্য প্রথম ধাপ হলো যাতায়াত ব্যবস্থা। আর যাতায়াত ব্যবস্থার উন্নয়ন হলেই সেই এলাকার মানুষের জীবন মান উন্নয়ন হয়। তিস্তা সেতুটির কারণে গাইবান্ধা ও কুড়িগ্রামের মানুষদের জীবন উন্নয়নের এক মাইলফলক।

‘দেশে এলজিইডির সবচেয়ে বড় প্রকল্প এই সেতু। সেতুটি উন্মুক্ত হলে কুড়িগ্রাম থেকে ঢাকার দূরত্ব কমবে ১৩৫ কিলোমিটার। এতে সময় সাশ্রয় হবে দুই থেকে আড়াই ঘণ্টা।’

রাইসুল কামাল নামে একজন বলেন, আমি কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ীতে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করি। বর্ষাকালে নদীতে স্রোত বেশি থাকলে নৌকা চালাতে ভয় লাগে, তাই ঘুরে রংপুর হয়ে যেতে হয়। এতে সময় ও খরচ দুই-ই বাড়ে। সেতু চালু হলে সেই কষ্ট থাকবে না, ঝুঁকিও কমবে।

জানা যায়, সেতু ও সংযোগ সড়ক চালু হলে কুড়িগ্রাম থেকে ঢাকার দূরত্ব ১৩৫ কিলোমিটার কমে আসবে। কেবল কুড়িগ্রাম নয়, উত্তরাঞ্চলের আরও কয়েকটি জেলার ঢাকার সঙ্গে যোগাযোগ সহজ হবে। গাইবান্ধার মতো তুলনামূলক পশ্চাৎপদ একটি জেলার আর্থসামাজিক উন্নয়নও ঘটবে।

গাইবান্ধা জেলা দোকান মালিক সমিতির সভাপতি মাকসুদার রহমান বলেন, ঢাকা-রংপুর মহাসড়ক থেকে গাইবান্ধা শহর ২১ কিলোমিটার দূরে। এ কারণে এখানকার ব্যবসা-বাণিজ্য প্রসার হয়নি। তিস্তা সেতু ও সংযোগ সড়ক চালু হলে লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম জেলার মানুষ গাইবান্ধা শহরের ভেতর দিয়ে ঢাকায় যাতায়াতের সুযোগ পাবেন। এতে ব্যবসা-বাণিজ্যসহ সব খাতে উন্নয়ন হবে।

তিস্তা সেতুতে খুলবে উন্নয়নের দ্বার

গাইবান্ধা এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী উজ্জ্বল চৌধুরী বলেন, দেশে এলজিইডির সবচেয়ে বড় প্রকল্প এই সেতু। সেতুটি উন্মুক্ত হলে কুড়িগ্রাম থেকে ঢাকার দূরত্ব কমবে ১৩৫ কিলোমিটার। এতে সময় সাশ্রয় হবে দুই থেকে আড়াই ঘণ্টা। মূল সেতুর কাজ শেষ। কিছু সংযোগ সড়ক ও বিদ্যুৎ সংযোগের অল্প কাজ বাকি আছে। সেতু চালুর পর যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়ন হবে, নতুন শিল্পকারখানা গড়ে উঠবে, চরাঞ্চলের কৃষকরা তাদের ফসলের ন্যায্য মূল্য পাবেন। এছাড়া দুই জেলার মানুষদের কর্মসংস্থান বাড়বে।

আনোয়ার আল শামীম/এমএন/এএসএম