রাজশাহী-৫
বিভক্ত বিএনপি, সুযোগ নিতে চায় জামায়াত
ছবিতে মাহমুদা হাবিবা, আবু বক্কর সিদ্দিক, নজরুল ইসলাম মন্ডল ও নূরুজ্জামান লিটন
রাজশাহী-৫ (পুঠিয়া-দুর্গাপুর) আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রার্থীর সংখ্যা আটজনে পৌঁছেছে। প্রত্যেকে নিজ নিজ নেতাকর্মী নিয়ে নির্বাচনী এলাকায় গণসংযোগ চালাচ্ছেন। যদিও মনোনয়ন দৌড়ে এগিয়ে আছেন তিনজন। মনোনয়নপ্রত্যাশীর সংখ্যা বেশি থাকায় বিভক্ত স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মীরা। তবে আগাম প্রার্থী ঘোষণার ফলে দৌড়ে এগিয়ে জামায়াত। বিএনপির বিভক্তির সুযোগ নিতে চায় দলটি।
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই আসনে মনোনয়ন পেতে কোমর বেঁধে মাঠে নেমেছেন বিএনপির হাফ ডজনের বেশি প্রার্থী। ফলে স্থানীয় নেতাকর্মীরা কয়েক ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন। মাঠে তৎপর জামায়াতের কর্মী-সমর্থকরাও। বিএনপির বিভাজন তাদের সুযোগ করে দিতে পারে বলে মনে করছেন স্থানীয়দের অনেকেই।
মনোনয়নপ্রত্যাশীরা নিজেদের সাংগঠনিক শক্তি জানান দিতে কর্মী-সমর্থকদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ শুরু করেছেন। তাদের সমর্থন আদায়ের চেষ্টা করছেন। রাজনৈতিক কর্মসূচিসহ বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে সক্রিয়তা বাড়িয়েছেন। এতে পুঠিয়া ও দুর্গাপুরে নির্বাচনী আবহ তৈরি হয়েছে।
নির্বাচনে এ আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রতাশীদের মধ্যে রয়েছেন বিএনপির কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ও পুঠিয়া উপজেলার আহ্বায়ক আবু বক্কর সিদ্দিক, বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য ও কৃষক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহমুদা হাবিবা, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ও জেলা শ্রমিক দলের সভাপতি রুকুনুজ্জামান আলম, জিয়া পরিষদ কেন্দ্রের সহকারী মহাসচিব সিরাজুল করিম সনু, যুবদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক কোষাধ্যক্ষ গোলাম মোস্তফা, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ও পুঠিয়া উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক নজরুল ইসলাম মন্ডল এবং এ আসনের প্রয়াত সংসদ সদস্য নাদিম মোস্তফার ছেলে জুলকার নাঈম মোস্তফা।
নেতাকর্মীরা জানান, মনোনয়নপ্রত্যাশীরা নিজেদের সাংগঠনিক শক্তি জানান দিতে কর্মী-সমর্থকদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ শুরু করেছেন। তাদের সমর্থন আদায়ের চেষ্টা করছেন। রাজনৈতিক কর্মসূচিসহ বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে সক্রিয়তা বাড়িয়েছেন। এতে পুঠিয়া ও দুর্গাপুরে নির্বাচনী আবহ তৈরি হয়েছে।
- আরও পরুন
- বিএনপির মনোনয়ন চান ৬ জন, ভালো কিছুর প্রত্যাশায় জামায়াত
- সাবেক চেয়ারম্যান জামায়াতের এমপি প্রার্থী, বিএনপিতে সম্ভাব্য তিন
এদিকে প্রার্থী বাছাইয়ে এরই মধ্যে জনমত জরিপ শুরু করা হয়েছে। ২০০৮ ও ২০১৮ সালের দুর্দিনে যারা মনোনয়ন পেয়েছিল, তাদের জনপ্রিয়তা এবারও টিকে থাকার কথা জানা গেছে। বিশেষ করে সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান অধ্যাপক নজরুল ইসলাম মন্ডলকে ধানের শীষের মনোনয়ন দেওয়ার পক্ষে পুঠিয়া দুর্গাপুরের জনসাধারণের একটি বড় অংশ।
নতুন প্রজন্মের নেতাদেরই মনোনয়ন দেওয়া উচিত, যারা দল ও সময়ের দাবিকে ধারণ করতে সক্ষম। আমি এই আসনে নতুন নয়। আমার বাবার হাত ঘরে এই আসনে রাজনীতি শুরু হয়েছে। সবগুলো উপজেলায়ই আমি গেছি। আমার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগও নেই। কেউ বলতে পারবে না ১০ টাকা নিয়েছি। সুতরাং আমি মনে করি এ আসনে আমাকেই মনোনয়ন দেওয়া উচিত।
তরুণ ভোটারদের দাবিতে ছাত্র রাজনীতি থেকে উঠে আসা পরিচ্ছন্ন ও ত্যাগী নেতাদের মনোনয়ন দেওয়া উচিত বলেও দাবি করছেন স্থানীয় নেতাকর্মীরা। কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও পুঠিয়া উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু বকর সিদ্দিক মনোনয়নপ্রার্থী তালিকায় এগিয়ে।
তারা জানান, প্রার্থী বাছাইয়ে নির্যাতিত, ত্যাগী, সৎ ও জনপ্রিয় নেতাদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। পুঠিয়া উপজেলা ও দুর্গাপুরের উন্নয়ন, দলের প্রতিষ্ঠা ও কর্মী সংগঠনে তারা সক্রিয় ভূমিকা পালন করছেন।
বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী নজরুল ইসলাম মন্ডল বলেন, ‘আমি দীর্ঘদিন ধরে বিএনপির জন্য কাজ করেছি, উন্নয়ন করেছি এবং ২০০৮ ও ২০১৮ সালের মনোনয়ন পেয়েছি। আশা করছি এবারও দল আমাকে সুযোগ দেবে।’
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসনে মনোনয়ন পেতে কোমর বেঁধে মাঠে নেমেছেন বিএনপির হাফ ডজনের বেশি প্রার্থী। ফলে স্থানীয় নেতাকর্মীরা কয়েক ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। মাঠে তৎপর জামায়াতের নেতাকর্মী-সমর্থকরাও। বিএনপির বিভাজন তাদের সুযোগ করে দিতে পারে বলে মনে করছেন স্থানীয়দের অনেকেই।
তিনি আরও বলেন, দল কোনো বিপদের সময় কিংবা মানুষের সমর্থন দুটোই আমার আছে। আমি চাই নতুন করে দল যাতে আমাকে মনোনয়ন দেয়। তবে এ আসনে আমার জেতার সুযোগ রয়েছে।
- আরও পড়ুন
- ১৮ বছর পর ফেরা তুহিনের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী জামায়াত
- লাখের বেশি হিন্দু ভোটারের মন জয়ে তৎপর বিএনপি-জামায়াত
আবু বকর সিদ্দিক বলেন, ২৭ বছর ছাত্র রাজনীতি করেছি, আন্দোলনে জীবন বাজি রেখেছি। আমার পরিচ্ছন্ন ইমেজ ও সাধারণ মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্যতার কারণে মনোনয়ন পাবো বলে বিশ্বাস করি।
মাহমুদা হাবিবা বলেন, নতুন প্রজন্মের নেতাদেরই মনোনয়ন দেওয়া উচিত, যারা দল ও সময়ের দাবি ধারণ করতে সক্ষম। আমি এ আসনে নতুন নয়। আমার বাবার হাত ঘরে এ আসনে রাজনীতি শুরু হয়েছে। সবগুলো উপজেলায়ই আমি গেছি। আমার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগও নেই। কেউ বলতে পারবে না ১০ টাকা নিয়েছি। সুতরাং আমি মনে করি এ আসনে আমাকেই মনোনয়ন দেওয়া উচিত।
জামায়াতের রাজশাহী জেলা শাখার সহকারী সেক্রেটারি নূরুজ্জামান লিটন এ আসনের দলের এমপি প্রার্থী। বিএনপির সঙ্গে জামায়াতের প্রতিদ্বন্দ্বিতা হতে পারে। তাই বিএনপির দলীয় কোন্দলের সুযোগে মাঠ গোছাচ্ছে জামায়াত। এরইমধ্যে তারা তাদের কাজ শুরু করেছেন।
সেক্রেটারি নূরুজ্জামান লিটন বলেন, আমি মনোনয়ন পাওয়ার পর থেকেই মাঠে কাজ শুরু করেছি। অনেক সভা-সমাবেশ করেছি। ইফতার মাহফিল করেছি। ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি।
তিনি আরও বলেন, বিশেষ করে তুন প্রজন্ম যারা গত ১৫ বছর কোন ভোট দিতে পারেনি তারা এখন ভোট দিতে চায়। তারা পাশে থাকতে চায়। জয়-পরাজয় তো আল্লাহর হাতে। তারপরও আমি আশাবাদী আল্লাহ চাইলে আমি জিতবো।
এ আসনে জাতীয় পার্টি, এনসিপি, ইসলামী আন্দোলনসহ অন্য রাজনৈতিক দলগুলোর নির্বাচনকেন্দ্রিক তেমন কোনো তৎপরতা নজরে পড়েনি। তবে আসন্ন সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হলে তারা তৎপর হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
রাজশাহী-৫ আসনে মোট ভোটার ৩ লাখ ৪৯ হাজার ১৩৮। এদের মধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৮৪ হাজার ৩৮১ ও নারী ভোটার ১ লাখ ৭৪ হাজার ৭৫২। তৃতীয় লিঙ্গের পাঁচজন। নতুন ভোটার ৪ হাজার ৭৪৯ জন। এ আসনে সবচেয়ে বেশি ভোটার ব্যবসায়ী। মূলত তাদের ভোটেই জয়-পরাজয় নিশ্চিত হবে।
এসএইচ/এসএইচএস/এমএফএ/জিকেএস