রাজশাহী-৩
সাবেক চেয়ারম্যান জামায়াতের এমপি প্রার্থী, বিএনপিতে সম্ভাব্য তিন
রাজশাহীর গুরুত্বপূর্ণ একটি সংসদীয় আসন হলো রাজশাহী-৩। শহর ও বাগামারা আসন ভেঙে ২০০৮ সালে এই আসনটি তৈরি করা হয়। শহরে ঘেঁষা এই আসনটি রাজশাহীর অধিক গুরুত্বপূর্ণ। আসনটিতে শুরু থেকেই আওয়ামী লীগের দখলে থাকলেও এটি ফিরে পেতে মরিয়া বিএনপি। তবে ছাড় দিতে নারাজ জামায়াত। এরইমধ্যে জামায়াত তাদের প্রার্থী ঘোষণা করেছে। মাঠেও কাজ শুরু করেছে।
তবে বিএনপির নেতাকর্মীরা কাজ শুরুর করেছেন। মনোনয়ন দৌড়ে এগিয়ে আছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির ত্রাণ ও পুনর্বাসনবিষয়ক সম্পাদক ও রাজশাহী মহানগর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট শফিকুল হক মিলন ও রাজশাহী জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি রায়হানুল ইসলাম রায়হান।
রাজশাহী-৩ (পবা-মোহনপুর) আসনেও শুরু হয়েছে রাজনৈতিক গরম বাতাস। মহানগরের উপকণ্ঠে অবস্থিত হওয়ায় আসনটি সব দলের কাছেই গুরুত্বপূর্ণ। এখানে আওয়ামী লীগের আধিপত্য থাকলেও এবার তৎপরতা বেড়েছে বিএনপি, জামায়াত, জাতীয় পার্টি ও ইসলামী আন্দোলনের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের। বিএনপির পক্ষ থেকে তিনজন সম্ভাব্য প্রার্থী মাঠে রয়েছেন।
আরও পড়ুন
তারা হলেন- বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির ত্রাণ ও পুনর্বাসনবিষয়ক সহ-সম্পাদক ও রাজশাহী মহানগর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট শফিকুল হক মিলন, রাজশাহী জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি রায়হানুল ইসলাম রায়হান এবং সাবেক প্রতিমন্ত্রী প্রয়াত অ্যাডভোকেট কবির হোসেনের ছেলে নাসির হোসেন অস্থির।
২০১৮ সালের নির্বাচনে দল আমাকে মনোনয়ন দিয়েছে। আশা করছি, এবারও দলের নীতিনির্ধারণী মহল আমাকে মনোনয়ন দেবেন। সেই লক্ষ্যেই কাজ করছি। মানুষও ব্যাপক সাড়া দিচ্ছে। এখন আমার পবা মোহনপুর নিয়েই সবকিছু। আমি আশাবাদী দল আমাকেই আবারো মনোনয়ন দেবে।
শফিকুল হক মিলন দীর্ঘদিন ধরে এ এলাকায় সক্রিয় এবং নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ রক্ষা করে চলছেন। তিনি ছাত্রদল থেকে রাজনীতি শুরু করে মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এবং এখন কেন্দ্রীয় কমিটিতে দায়িত্ব পালন করছেন। ২০১৮ সালে তিনি এ আসন থেকে বিএনপির মনোনয়ন পেয়েছিলেন।
শফিকুল হক মিলন বলেন, বিগত ১৭ বছর আওয়ামী লীগ দেশে অরাজকতা ও নৈরাজ্য সৃষ্টি করেছিল। দিনের ভোট রাতে হয়েছে। পরিস্থিতি পাল্টেছে। আমরা আশা করছি, একটি অবাধ, সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সাধারণ মানুষ বিশেষ করে তরুণ প্রজন্ম যারা কোনো দিন ভোটের স্বাদ পায়নি তারা এবার পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে চায়। এটিই সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা।
তিনি আরও বলেন, ২০১৮ সালের নির্বাচনে দল আমাকে মনোনয়ন দিয়েছে। আশা করছি, এবারও দলের নীতিনির্ধারণী মহল আমাকে মনোনয়ন দেবেন। সেই লক্ষ্যেই কাজ করছি। মানুষও ব্যাপক সাড়া দিচ্ছে। এখান আমার পবা মোহনপুর নিয়েই সবকিছু। আমি আশাবাদী দল আমাকেই আবারো মনোনয়ন দেবে।
আরও পড়ুন
- ১৮ বছর পর ফেরা তুহিনের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী জামায়াত
- লাখের বেশি হিন্দু ভোটারের মন জয়ে তৎপর বিএনপি-জামায়াত
রায়হানুল ইসলাম রায়হানও ছাত্রদলের মাধ্যমে রাজনীতিতে সক্রিয় হন এবং বর্তমানে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য। তিনি জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক, সভাপতি ও বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়কের দায়িত্ব পালন করছেন। রায়হান বর্তমানে দলের ৩১ দফা কর্মসূচির প্রচারে অংশ নিচ্ছেন নিয়মিত। নাসির হোসেন অস্থিরও এলাকায় নিজ অবস্থান দৃঢ় করতে তৎপর।
এদিকে আসনটিতে প্রার্থী চূড়ান্ত করেছে জামায়াত। দলীয় প্রার্থী হিসেবে পবার হড়গ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের চারবারের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদের নাম ঘোষণা করেছে দলটি। ফলে এ আসনেও সাংগঠনিক কার্যক্রম জোরদার করেছে তারা। জামায়াতের নেতাকর্মীরা বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ভোটারদের সঙ্গে সেতুবন্ধ তৈরি করছেন।
রায়হানুল আলম বলেন, আমার বাড়ি পবায়। আমি সব সময় পবা ও মোহনপুরবাসীর সুখ-দুঃখে পাশে আছি। এ আসনে ২০১৮ সালে দলীয় মনোনয়ন চেয়েছিলাম। কিন্তু পাইনি। আশা করছি, দল সবকিছু বিবেচনায় নিয়ে এবার আমাকে মনোনয়ন দেবে। কারণ এলাকায় সাধারণ জনগণের প্রত্যাশা, পবা-মোহনপুরের নেতৃত্ব দেবে এ এলাকারই মানুষ, বাইরের কেউ নয়।
এদিকে আসনটিতে প্রার্থী চূড়ান্ত করেছে জামায়াত। দলীয় প্রার্থী হিসেবে পবার হড়গ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের চারবারের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদের নাম ঘোষণা করেছে দলটি। ফলে এ আসনেও সাংগঠনিক কার্যক্রম জোরদার করেছে তারা। জামায়াতের নেতাকর্মীরা বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ভোটারদের সঙ্গে সেতুবন্ধ তৈরি করছেন। দোয়া চাইছেন। নিয়মিত দলীয় কর্মসূচির মাধ্যমে নেতাকর্মীদের চাঙ্গা করতে তৎপর দলটি।
অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ বলেন, দল থেকে আমাকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। দলীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আমাদের নেতাকর্মীরা আগাম নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করেছেন। আমি নিজেও ভাগ ভাগ করে গণসংযোগ করছি। আমিও সাংগঠনিক তৎপরতা চালিয়ে নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করেছি। আশা করছি এ নির্বাচনে পবা-মোহনপুরবাসী আমার সঙ্গে থাকবে।
তিনি আরও বলেন, আমি ভালো সাড়া পাচ্ছি। আমি শতভাগ আশাবাদী জয়ী হবো। ২৮ বছর আমি ইউনিয়ন পরিষদে ছিলাম। যারা অতীতে ও বর্তমান মেম্বার-চেয়ারম্যান তারা আমার পাশে থাকবেন। আমি আশাবাদী এবার আমি বিজয়ী হবো।
আরও পড়ুন
এ আসনে জাতীয় পার্টির (জাপা) প্রার্থী হতে চান আব্দুস সালাম। তিনি আগেও এ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। তবে এবার তার দলের স্বৈরাচার আওয়ামী লীগের দোসর তকমা থাকায় তিনি নির্বাচন করতে পারবেন কি না সে বিষয়টি এখনো নিশ্চিত নয়। আব্দুস সালাম বলেন, ‘নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়ার পরিবেশ সৃষ্টি হলে তারা অংশগ্রহণ করবে।’
আমার বাড়ি পবায়। আমি সব সময় পবা ও মোহনপুরবাসীর সুখে-দুঃখে পাশে আছি। এ আসনে ২০১৮ সালে দলীয় মনোনয়ন চেয়েছিলাম। কিন্তু পাইনি। আশা করছি, দল সবকিছু বিবেচনায় নিয়ে এবার আমাকে মনোনয়ন দেবে। কারণ এলাকায় সাধারণ জনগণের প্রত্যাশা, পবা-মোহনপুরের নেতৃত্ব দেবে এ এলাকারই মানুষ, বাইরের কেউ নয়।
এদিকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী এখনো চূড়ান্ত হয়নি। এছাড়া এনসিপি তাদের দল গুছিয়ে উঠতে পারেনি। দল গুছিয়ে ওঠার পরই তারা দলীয় মনোনয়ন দেওয়ার কথা ভাববে।
তবে রাজশাহী-৩ আসনে নির্বাচন ঘিরে জমে উঠেছে রাজনৈতিক মাঠ। নেতাকর্মীরা সক্রিয়ভাবে প্রচারে নেমেছেন এবং সাধারণ ভোটারদের সঙ্গেও গড়ে তুলছেন যোগাযোগ। এখন দেখার বিষয় এ আসনে বিএনপির হাইকমান্ড কাকে সবচেয়ে উপযুক্ত প্রার্থী হিসেবে মনে করছে।
২০০৮ সালের নির্বাচনে এ আসনে প্রথম এমপি নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগের মেরাজ উদ্দিন মোল্লা (প্রয়াত)। এরপর ২০১৪ ও ২০১৮ সালে একই দলের আয়েন উদ্দিন সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। সর্বশেষ ২০২৪ সালের নির্বাচনে এমপি হন জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ।
আরও পড়ুন
- ১০০ আসনে হবে সংসদের উচ্চকক্ষ, পিআর পদ্ধতিতে সদস্য মনোনয়ন
- অপেক্ষা করেন, কিছুদিনের মধ্যে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা
রাজশাহী-৩ (পবা-মোহনপুর) আসনে ২০২৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত মোট ভোটার ছিল ৪ লাখ ৬৬১। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ২ লাখ ১৮০ ও নারী ভোটার ২ লাখ ৪৭৮ এবং তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার তিনজন। এই আসনের নতুন ভোটার ৬ হাজার ৩১৩ জন। এখানে সবচেয়ে বেশি ভোটার কৃষক। মূলত তাদের ভোটেই জয়-পরাজয় নিশ্চিত হবে।
এসএইচ/এসএইচএস/এমএফএ/জেআইএম