শরীরে ২২ ছররা গুলি নিয়ে জীবন কাটাচ্ছেন জুলাই যোদ্ধা আলাউদ্দিন
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট। সময় তখন দুপুর ১২টা। কুষ্টিয়া থানা এলাকার কাছাকাছি শত শত মানুষ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার ডাকে রাজপথে। তাদেরই একজন ছিলেন চুয়াডাঙ্গা জেলার জীবননগর উপজেলার আলাউদ্দিন। হঠাৎ ছররা গুলি ছোড়ে পুলিশ। তাতে গলায় ও শরীরজুড়ে গুলিবিদ্ধ হন আলাউদ্দিন। এক বছর পরও আলাউদ্দিনের শরীরে রয়ে গেছে ২০-২২টি ছররা গুলি, গলার একটি গুলি অপারেশন করে বের করা হলেও বাকিগুলো এখনো শরীরে।
চিকিৎসকদের মতে, শরীর থেকে গুলি বের করতে গেলে রয়েছে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি। তারা জানিয়েছেন, শরীরে যতগুলো গুলি রয়েছে তা একসঙ্গে বের করলে জটিল সংক্রমণের ঝুঁকি রয়েছে। তাই আপাতত সেগুলোসহই বাঁচতে হবে আলাউদ্দিনকে।

জুলাই যোদ্ধা আলাউদ্দিন বলেন, আমি তখন কুষ্টিয়ায় স্ত্রী ও দুই সন্তানকে নিয়ে ভাড়া বাসায় থাকতাম। সেখান থেকেই আন্দোলনে অংশ নিই। গুলি লাগার পর সহকর্মী রকিসহ কয়েকজন মিলে আমাকে উদ্ধার করে আদ-দ্বীন হাসপাতালে ও তারপর কুষ্টিয়া ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যায়। অবস্থা খারাপ হলে সেদিনই ঢাকায় পাঠানো হয়। ঢাকা মেডিকেলে গলায় অপারেশন করে একটি গুলি বের করা হয়।
তিনি বলেন, চিকিৎসকরা জানিয়েছেন শরীরে যেসব গুলি রয়েছে সেগুলো একবারে বের করলে রক্তক্ষরণসহ নানা জটিলতা হতে পারে। তাই এখনো আমার শরীরে ২০-২২টি গুলি রয়েছে। এসব নিয়েই কাজ করতে হয়, চলতে হয়।
মো. আলাউদ্দিন মধ্যবিত্ত একটি পরিবারের সন্তান। আগে ছিলেন কুয়েত প্রবাসী।
তিনি বলেন, আন্দোলনের আগে কুয়েত থেকে এসেছিলাম। পরে আবারো যাব বলে ট্রেনিং শেষ করি, ভিসাও আসে। কিন্তু মেডিকেল টেস্টে শরীরে গুলি থাকার কারণে আমাকে আনফিট বলা হয়। সেই ভিসাও ক্যানসেল হয়ে যায়। এটা আমার জীবনের বড় একটা ক্ষতি। তবে আন্দোলনে শরিক হতে পেরেছি, এটাই আমার গর্ব। স্বৈরাচারী সরকারের পতনে অংশ নিয়েছি, তাই কোনো আফসোস নেই।
আলাউদ্দিন জানান, আন্দোলনের সময় নিরাপত্তাহীনতায় ছিল পরিবার। আমার স্ত্রী, সন্তান, মা, ভাই সবাই ভয়ে ছিল। চারদিকে ধরপাকড়, ছাত্রলীগ ও সরকারি দলের লোকজন হুমকি দিচ্ছিল। কিন্তু আমি থামিনি। আন্দোলনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত আমি মাঠেই ছিলাম।

বর্তমানে তিনি কুষ্টিয়ায় স্ত্রী ও দুই সন্তান আলিফ (১০) ও আনিসকে (৪) নিয়ে ভাড়া বাড়িতে থাকেন। একটি বেসরকারি স্থাপনা নির্মাণ প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। প্রতিদিন গুলির যন্ত্রণা নিয়েই দায়িত্ব পালন করতে হয়।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের চুয়াডাঙ্গা জেলা কমিটির সাবেক আহ্বায়ক আসলাম হোসেন অর্ক বলেন, আন্দোলনের অন্যতম সাহসী সহযোদ্ধা আলাউদ্দিন আজও গুলি শরীরে নিয়ে জীবনযাপন করছেন। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন গুলিগুলো অপারেশন করলে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি আছে। তার শারীরিক অবস্থার নিয়মিত খোঁজখবর রাখছি।
তিনি আরও বলেন, সরকারি সহায়তা কিছু মিললেও তা যথেষ্ট নয়। আহতদের রাষ্ট্রীয়ভাবে যথাযথ সম্মান ও ক্ষতিপূরণ নিশ্চিত করা জরুরি।
আলাউদ্দিনের প্রত্যাশা যেই সরকারই আসুক, তারা যেন জনগণের কথা শোনে। গত ১৬ বছরে দেশের সাধারণ মানুষ অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আমরা চাই শহীদ ও আহতদের মর্যাদা দেওয়া হোক। বৈষম্যহীন, গণতান্ত্রিক সমাজ প্রতিষ্ঠিত হোক।
এফএ/জিকেএস