ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

ধার করা ডুবুরিতে চলে শরীয়তপুরের ফায়ার সার্ভিস

বিধান মজুমদার | প্রকাশিত: ০৩:০৪ পিএম, ০৭ আগস্ট ২০২৫

পদ্মা-মেঘনা নদী বেষ্টিত জনপদ শরীয়তপুরে প্রতিবছর কোনো না কোনোভাবে ঘটছে নৌ দুর্ঘটনা। এছাড়াও জেলার মধ্যে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বেশকিছু ছোট নদী, খাল-বিল ও পুকুর-জলাশয়ে ডুবে মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। দুর্ঘটনার পর উদ্ধার কাজে ডুবুরির প্রয়োজন হলেও জেলায় কেনো ডুবুরি দল নেই। ফলে যতক্ষণে দূর থেকে ডুবুরি আসে ততক্ষণে ক্ষতি বাড়ে জানমালের।

জেলার ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশন সূত্র জানায়, ১৯৯৯ সালে ১ দশমিক ২০ একর জায়গা নিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয় জেলা ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশন। এরপর পর্যায়ক্রমে আরও ৫টি উপজেলায় ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশন গড়ে তোলা হয়। জেলায় ৬টি স্টেশনের মধ্যে সদর, জাজিরা, নড়িয়া ও ভেদরগঞ্জ স্টেশন দ্বিতীয় শ্রেণির, আর বাকি ডামুড্যা ও গোসাইরহাট তৃতীয় শ্রেণির। এর মধ্যে দ্বিতীয় শ্রেণির জেলা স্টেশনে তিনটি গাড়ি রয়েছে। তবে ফায়ার সার্ভিসে অগ্নিনির্বাপকের কিছুটা ব্যবস্থা থাকলেও পানিতে দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে তাদের কোনো ব্যবস্থা নেই।

‘মাঝেমধ্যেই এই এলাকায় পানিতে পড়ে অনেকেই মৃত্যু হয়। কিন্তু ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল না থাকায় আমরা তাদের খবর দেই না। আমরা নিজেরাই পানিতে নেমে খোঁজ করি। আগেও দেখেছি যখন নৌকাডুবে দুর্ঘটনা ঘটে, অন্য জেলা থেকে ডুবুরি দল আনতে হয়। এতে পরে ডুবুরি দল মরদেহ খুঁজে পায় না।’

জানা যায়, নৌ দুর্ঘটনায় ক্ষেত্রে জেলার ফায়ার সার্ভিসের কার্যক্রম অনেকটা শূন্য। দুর্ঘটনার পর প্রথমেই ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দলকে এগিয়ে আসার কথা থাকলেও সেটি হয় না। জেলায় ডুবুরি না থাকায় পানিতে ডুবে যাওয়ার ঘটনায় ভুক্তভোগীদের জীবিত উদ্ধারে তাৎক্ষণিক উদ্ধার অভিযান চালানো যায় না। পাশের জেলা মাদারীপুর, ফরিদপুর ও বরিশাল থেকে ডুবুরি দল ধার করতে আনতে হয়। ফলে ডুবুরি আসতে আসতে পানিতে প্রাণ যায় ভুক্তভোগীদের। এছাড়া ডুবুরির অভাবে যথাসময়ে উদ্ধার অভিযান শুরু না হওয়ায় বেগ পেতে হয় মরদেহ উদ্ধারেও। এতে সময় অপচয়ের পাশাপাশি দীর্ঘ হয় উদ্ধার কার্যক্রম।

ডুবুরি আসে অন্য জেলা থেকে, ততক্ষণে সব শেষ

স্থানীয় প্রশাসন সূত্র জানায়, শরীয়তপুর জেলাটি কীর্তিনাশা নদীর তীরে অবস্থিত। এ জেলার উল্লেখযোগ্য অসংখ্য নদীর মধ্যে রয়েছে পদ্মা, মেঘনা, দামুদিয়া, জয়ন্তী আড়িয়াল খাঁ, কীর্তিনাশা। এ সব নদীর অসংখ্য শাখা নদীও রয়েছে। পালং নদী ও নড়িয়া খাল এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য।

জানা যায়, গত বছর ২ আগস্ট গোসাইরহাট উপজেলার পুরাতন লঞ্চঘাট থেকে মাঝেরচর এলাকায় যাওয়ার সময় মেঘনা নদীতে ট্রলারডুবির ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় মা-মেয়েসহ দুজন ঘটনাস্থলেই নিহত ও ৩ জন নিখোঁজ হয়। এসময় দ্রুত খবর দেওয়া হয় ফায়ার সার্ভিসের লোকজনকে। তবে তাদের ডুবুরি না থাকায় পরবর্তীতে মাদারীপুর থেকে দুজন ডুবুরি এনে উদ্ধার কাজ শুরু করে। অন্য জেলা থেকে ডুবুরি দল নিয়ে আসায় সময়ক্ষেপণ হওয়ায় দ্রুত সময়ের মধ্যে সেদিন উদ্ধার শুরু করতে পারেনি ফায়ার সার্ভিস। এতে নিখোঁজ থাকা ওইসব ব্যক্তিদের মরদেহ পানির স্রোতে অন্যত্র ভেসে যায়। পরের দিন সেই মরদেহগুলো বিভিন্ন জায়গায় জেলেদের জালে আটকা পড়ে।

‘জেলায় এই মুহূর্তে দুজন ডুবুরির খুবই প্রয়োজন। বিভিন্ন সময় পাশের জেলাগুলো থেকে ডুবুরি এনে উদ্ধার অভিযান চালাতে হয়। অনেক সময় দেখা যায় পাশের জেলাগুলোর ডুবুরিরা তাদের জেলার কাজে ব্যস্ত থাকেন তখন আমাদের ভোগান্তি আরও বেড়ে যায়। যদি আমাদের নিজস্ব ডুবুরি থাকতো তাহলে আমাদের কার্যক্রম আরও গতিশীল হতো।’

স্থানীয়রা বলছেন, সেদিন জেলায় ডুবুরি দল থাকলে তারা এই উদ্ধার কাজ দ্রুত সময়ের মধ্যে শুরু করতে পারতো। এতে মরদেহগুলো দ্রুত সময়ের মধ্যে উদ্ধার করা সম্ভব হতো।

ডুবুরি আসে অন্য জেলা থেকে, ততক্ষণে সব শেষ

গোসাইরহাট কুচাইপট্টি এলাকার নাঈম মাদবর নামের এক বাসিন্দা বলেন, আমরা মেঘনা নদীর তীরে বসবাস করি। মাঝেমধ্যেই এই এলাকায় পানিতে পড়ে অনেকেই মৃত্যু হয়। কিন্তু ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল না থাকায় আমরা তাদের খবর দেই না। আমরা নিজেরাই পানিতে নেমে খোঁজ করি। আগেও দেখেছি যখন নৌকাডুবে দুর্ঘটনা ঘটে, অন্য জেলা থেকে ডুবুরি দল আনতে হয়। এতে পরে ডুবুরি দল মরদেহ খুঁজে পায় না। আমাদের অঞ্চল যেহেতু নদী এলাকায়, তাই ডুবুরি দলের খুবই প্রয়োজন।

চলতি বছরের ১১ মার্চ রাতে নড়িয়ায় পদ্মা নদীতে নোঙর করা জিওব্যাগ বোঝাই মহসিন এক্সপ্রেস নামের একটি বাল্কহেড ডুবে ভেতরে থাকা দুই কর্মচারী নিখোঁজ হয়। পরে স্থানীয়রা ৯৯৯-এ খবর দেয়। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছায় পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস। তবে ডুবুরি দল না থাকায় পরের দিন সকালে মাদারীপুর থেকে একটি ডুবুরি দল এসে উদ্ধার কার্যক্রম শুরু করে। ডুবুরি দলের অভাবে দীর্ঘসময় পর উদ্ধার কার্যক্রম পরিচালনা করায় উদ্ধার অভিযান ব্যাহত হয়। এতে জানমাল দুটোর ক্ষয়ক্ষতিই বাড়ে।

এমন অবস্থার উত্তরণে কার্যত পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি স্থানীয় বাসিন্দাদের। সাইফুল ইসলাম নামের স্থানীয় একজন বলেন, যেদিন অতিরিক্ত লোডের কারণে জিওব্যাগ বোঝাই বাল্কহেডটির কিছু অংশ ডুবে যায়। তখন যদি দ্রুত সময়ের মধ্যে ডুবুরি দল উদ্ধার অভিযান চালাতো তাহলে হয়ত ওই লোক দুটি বেঁচে যেতেও পারতেন। ডুবুরি না থাকার কারণে মাঝেমধ্যে আমাদের জেলার লোকজনকে অনেক সমস্যায় পড়তে হয়।

এদিকে জেলার ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশনগুলোর অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থাও পর্যাপ্ত নয় বলে জানা গেছে। প্রথম শ্রেণির স্টেশনগুলোর একটিতে ১ হাজার ৮০০ লিটার ধারণক্ষমতা সম্পন্ন একটি পানি ট্যাংক বসানো আছে। বাকি দুটি গাড়ি দিয়ে শুধু পানির পাম্প ও পাইপ পরিবহন করা হয়। বাকি তিনটি দ্বিতীয় শ্রেণির স্টেশনে দুটি করে গাড়ি সংযুক্ত রয়েছে। অপরদিকে তৃতীয় শ্রেণির দুটি স্টেশনে একটি করে গাড়ি সংযুক্ত রয়েছে। জেলা পর্যায়ে ৫ হাজার ৫০০ লিটার ধারণক্ষমতা সম্পন্ন পানির ট্যাংকসহ গাড়ির ব্যবস্থা থাকার কথা থাকলেও শরীয়তপুরে সেটি নেই। এতে অগ্নিকাণ্ডের সময় আগুন নেভাতে গিয়ে দ্রুত পানি শেষ হয়ে যায়। পাশে কোনো জলাশয় না থাকলে বিপদের আশঙ্কা বেড়ে যায় বহুগুণ।

ডুবুরি আসে অন্য জেলা থেকে, ততক্ষণে সব শেষ

সার্বিক বিষয়ে জেলার ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের ওয়্যারহাউজ ইন্সপেক্টর শংকর বিশ্বাস বলেন, আমাদের জেলায় এই মুহূর্তে দুজন ডুবুরির খুবই প্রয়োজন। বিভিন্ন সময় পাশের জেলাগুলো থেকে ডুবুরি এনে উদ্ধার অভিযান চালাতে হয়। অনেক সময় দেখা যায় পাশের জেলাগুলোর ডুবুরিরা তাদের জেলার কাজে ব্যস্ত থাকেন তখন আমাদের ভোগান্তি আরও বেড়ে যায়। যদি আমাদের নিজস্ব ডুবুরি থাকতো তাহলে আমাদের কার্যক্রম আরও গতিশীল হতো।

তিনি আরও বলেন, অগ্নিনির্বাপকের ক্ষেত্রেও জেলায় ও উপজেলায় আরও বেশি ধারণক্ষমতা সম্পন্ন পানির ট্যাংকসহ গাড়ির ব্যবস্থা রাখা উচিত।

এমএন/এএসএম