ঘরে পদ্মার পানি, ১০ দিনেও চুলা জ্বলেনি তাজকেরার
পদ্মার ভাঙনে ভিটে হারিয়ে অন্যের জমিতে আশ্রয় নিয়েছেন তাজকেরা বেগম। সেখানেও ঢুকে পড়েছে পানি। ছবি-জাগো নিউজ
পদ্মার ভাঙনে বিলীন হয়েছে সব সম্বল। কোনো উপায় না পেয়ে এক মাস আগে থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জের ৪ নম্বর বাঁধ এলাকায় এসে বসবাস করছেন তাজকেরা বেগম। কিন্তু সেখানেও বসবাস স্থায়ী হয়নি। গত ১০ দিন আগে তার টিনের ছাউনিতে ঢুকে যায় বন্যার পানি। এতে সব হারিয়ে সর্বস্বান্ত হয়েছেন তিনি। এখনো তিনি পানিবন্দি। ঘরে হাঁটুপানি। গত ১০ দিনেও জ্বালাতে পারেননি রান্নার চুলা।
বৃহস্পতিবার (১৪ আগস্ট) সদর উপজেলার তাজকেরা বেগমের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, একটিমাত্র টিনের ছাউনি দিয়ে অন্যের জমিতে স্বামী আনসুর আলী ও মেয়ে শেফালি বেগমকে নিয়ে বসবাস করছেন তাজকেরা বেগম। বাড়িতে ১০ দিন ধরে জমে আছে বন্যার পানি। পানিতে ডুবে নষ্ট হয়ে গেছে রান্নার চুলা। ধসে নষ্ট হয়েছে ধানের গোলা। সব হারিয়ে একবেলা খাবারে জন্য তাকিয়ে আছেন জনপ্রতিনিধির দিকে।
তাজকেরা বেগম জাগো নিউজকে জানান, ১০ দিন ধরে পানিবন্দি। দেখার কেউ নেই। খাবারের আশায় দ্বারে দ্বারে ঘুরেছেন। সবশেষ আজ বিকেল ৫টার দিকে অন্যের বাড়ি থেকে চাল নিয়ে এসে রান্না চাপিয়েছেন। খাবেন সন্ধ্যায়।

প্রতিবেশী রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘তাজকেরা বেগম অত্যন্ত গরিব। পদ্মায় সব হরিয়ে এখানে এসে টিনের ছাউনি দিয়ে কোনোরকম থাকছেন। কিন্তু তার কপালে সুখ নেই। এখানেও বন্যার পানি ঢুকে গেছে। তাজকেরা বেগমের বাড়িতে ঠিকমতো তিনবেলা খাবার মিলছে না। শোবার ঘরও নেই।’
তাজকেরা বেগমের স্বামী আনসুর আলী বলেন, ‘চারদিক বন্যায় ভেসে গেছে। বাড়িতেও পানি ঢুকেছে। কোথাও কাজের সুযোগ নেই। গত ১০ দিন ধরে ঘরে বন্দি হয়ে আছি। ধানের গোলাও পানিতে ধসে নষ্ট হয়ে গেছে। বাড়িতে চাল ছিল না ১০ দিন। আজ অন্যের বাড়ি থেকে চাল এনে রান্না বসানো হয়েছে।’

স্থানীয়রা জানান, এ বছর পদ্মার ভাঙন আগের চেয়ে অনেক ভয়াবহ। ভাঙনের কবলে পড়ে অনেকে গৃহহীন হয়ে পড়েছেন। কেউ কেউ আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন। কেউবা থাকছেন খোলা আকাশের নিচে।
উজানের ঢলে চাঁপাইনবাবগঞ্জের পদ্মা নদীতে পানি বাড়ছে। ফলে প্লাবিত হয়েছে জেলার পাঁচ ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল। এতে ১৫ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। তলিয়ে গেছে রোপা, আউশ, ভুট্টাসহ প্রায় দুই হাজার হেক্টর ফসলি জমি। ৪৫টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষে ঢুকে পড়েছে বন্যার পানি। এতে ব্যাহত হচ্ছে পাঠদান। প্লাবিত এই জনপদের মধ্যে রয়েছে সদর উপজেলার নারায়ণপুর, আলাতুলী, উজিরপুর, পাকা ও দুর্লভপুর ইউনিয়ন।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী এস এম আহসান হাবীব জানান, পদ্মা নদীর পানি এখনো বিপৎসীমার ৩২ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। দু-একদিনের মধ্যে পানি কমতে শুরু করবে।
সোহান মাহমুদ/এসআর/জেআইএম