জাতীয় নির্বাচন
‘সবুজ সংকেত’র আশায় চুয়াডাঙ্গার একঝাঁক বিএনপি নেতা-নেত্রী
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে বিএনপি মাঠপর্যায়ের প্রস্তুতি জোরদার করেছে। সমমনা রাজনৈতিক দল ও জোটের সঙ্গে আসন সমন্বয় শেষ হওয়ার পর চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করবে দলটি। সীমান্ত জেলা চুয়াডাঙ্গাও এর ব্যতিক্রম নয়। তবে দল থেকে কোনো সবুজ সংকেত না দিলেও নিজেদের প্রস্তুত করছেন জেলার একঝাঁক নেতা-নেত্রী।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি সূত্রে জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গা-১ আসনে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাবেক ছাত্রনেতা শরীফুজ্জামান শরীফ ও চুয়াডাঙ্গা-২ আসনে জেলা বিএনপির সভাপতি ও বিজিএমইএর নবনির্বাচিত সভাপতি দেশের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মাহমুদ হাসান খান বাবু সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে দলের সুনজরে আছেন। এরইমধ্যে দলের হাইকমান্ড থেকেও দলের সম্ভাব্য প্রার্থীদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে বলেও সূত্রটি জানিয়েছে।
যদিও চুয়াডাঙ্গা-১ আসনে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সাবেক ছাত্রদল নেতা শামসুজ্জামান দুদু, চুয়াডাঙ্গার সাবেক প্রয়াত এমপি সহিদুল ইসলাম বিশ্বাসের কন্যা সাবেক ছাত্রদল নেত্রী মিলিমা ইসলাম বিশ্বাস মিলি, জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা ফরিদুল ইসলাম শিপলু, জেলা যুবদলের সভাপতি শরিফ উর জামান সিজার মনোনয়ন দৌড়ে এগিয়ে আছেন।
তবে চুয়াডাঙ্গা-২ আসনে বাবু খান ছাড়া বিএনপির অন্য কোনো নেতার নাম এখনো শোনা যায়নি। যদিও মাঝেমধ্যে চুয়াডাঙ্গা-২ আসনের সাবেক এমপি ও জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি প্রয়াত শিল্পপতি হাজী মোজাম্মেল হকের কনিষ্ঠ পুত্র বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মিথুনের নাম ও আরেক ব্যবসায়ী বিএনপি নেতা ইঞ্জিনিয়ার টিপু তরফদারে নামও শোনা যায়। তবে তাদের কাউকে দলীয় কার্যক্রমে ওইভাবে থাকতে দেখা যায়নি।
চুয়াডাঙ্গা সদর ও আলমডাঙ্গা উপজেলার তৃণমূলের অনেক নেতার সঙ্গে কথা হলে তারা বলেন, ৫ আগস্টের আগে আমরা শুধু শরীফুজ্জামানকে পেয়েছি। তিনি একটা নড়বড়ে সংগঠনকে দুর্দিনে সুসংগঠিত করেছেন। তখন শরীফুজ্জামান ছাড়া কাউকে আমরা পাইনি। আর এই সুদিনে সবাই নমিনেশন চাচ্ছেন। শরীফুজ্জামান চুয়াডাঙ্গা-১ আসনে এমপি হবে এটাই আমাদের চাওয়া। আমরা তাকেই চাই।
আরও পড়ুন-
কোনো প্রার্থীকে সবুজ সংকেত দেয়নি বিএনপি: রিজভী
কিছু মহল এখনো নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে: প্রধান উপদেষ্টা
অভ্যুত্থানের পর দ্রুত নির্বাচন না হলে গৃহযুদ্ধের শঙ্কা থাকে
অন্যদিকে জীবননগর ও দামুড়হুদা উপজেলার ইউনিয়ন পর্যায়ে অনেক নেতা জানান, বাবু খান গত ১০-১৫ বছর যেভাবে দলের দুর্দিনে নেতাকর্মীদের পাশে থেকেছেন। অন্য কোনো নেতাকে সেভাবে আমরা পাইনি। আমরা আমাদের চুয়াডাঙ্গা-২ আসনে তাকেই এমপি হিসেবে চাই।
জানা গেছে, বিএনপির শীর্ষ নেতারা আগামী ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনকে দলের একটি বড় পরীক্ষা হিসেবে দেখছে। তাই মাঠ জরিপের ফলাফল, তৃণমূলের মতামত ও নীতিনির্ধারক পর্যায়ের আলোচনার ভিত্তিতে সম্ভাব্য প্রার্থীদের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে।
বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান অনলাইন প্ল্যাটফর্মে সংযুক্ত হয়ে নিয়মিত প্রার্থীদের সরাসরি নির্দেশনা দিচ্ছেন। এছাড়া বিশেষত যেসব এলাকায় অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব রয়েছে, সেখানে ঐক্য ধরে রাখার পরামর্শ দিচ্ছেন তিনি। দলীয় নির্দেশনা অমান্য করে বিভাজন সৃষ্টি করলে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও সতর্ক করেছেন তিনি।
এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্যের সঙ্গে কথা হলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি জানান, প্রার্থী চূড়ান্তে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জনাব তারেক রহমানের নেতৃত্বে কাজ চলছে। আর কাউকে কোনো সবুজ সংকেত দেওয়া হয়নি বলেও জানান তিনি।
এদিকে জামায়াতে ইসলামী এরইমধ্যে তাদের প্রার্থী তালিকা ঘোষণা ও প্রচার শুরু করেছে। বিএনপিও মৌখিকভাবে সম্ভাব্য প্রার্থীদের মাঠে সক্রিয় হতে বলছে, যাতে ভোটযুদ্ধে দ্রুত শক্তি সঞ্চয় করা যায়।
এরইমধ্যে কিছুদিন আগে চুয়াডাঙ্গার নিজ বাড়িতে নেতাকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় ও গণমাধ্যমকর্মীদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে শামসুজ্জামান দুদু চুয়াডাঙ্গা-১ আসন থেকে পুনরায় নির্বাচন করার বিষয়ে বলেছিলেন, আমি চুয়াডাঙ্গার সন্তান। ছাত্রদলের শীর্ষপদে কাজ করেছি। কৃষকদলের আহ্বায়ক হিসেবে দলকে সুসংগঠনিত করেছি। এই আসন থেকেই দু’বার এমপি ছিলাম। ভবিষ্যতে নির্বাচন করতে হলে আমি এই আসন থেকেই করবো, দেশের অন্য কোথাও না। বেগম জিয়াসহ জাতীয় নেতারা অতীতে নিজ জেলা থেকে নির্বাচন করেছেন, আমিও তার বাইরে কেউ না। তাই আমি চুয়াডাঙ্গা-১ আসন থেকেই আগামী সংসদ নির্বাচনের প্রার্থী হবো।
এ বিষয়ে শরীফুজ্জামান শরীফ বলেন, বিগত ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের আমলে বারবার গ্রেফতার, হামলা ও মামলার শিকার হয়েও রাজপথে আছি। আমি ধানের শীষের জন্য কাজ করছি। দল যাকে মনোনয়ন দিবে আমি তার হয়েই কাজ করবো। আমি তৃণমূল থেকে কাজ করেছি। বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে তারেক রহমানের নির্দেশনায় তৃণমূলে সংগঠন মজবুত করেছি।
মিলিমা ইসলাম মিলি বলেন, চুয়াডাঙ্গা-১ আসনে মনোনয়ন পাওয়ার বিষয়ে আমি আশাবাদী। লিডার (দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান) আমাকে এলাকায় গিয়ে কাজ করতে নির্দেশ দিয়েছেন। আমি এলাকায় নিয়মিত কাজও করছি। যদিও বর্তমানে অসুস্থতাজনিত কারণে হাসপাতালে আছি। সুস্থ হয়ে আবার মাঠে ফিরবো দ্রুত।
মির্জা ফরিদুল ইসলাম শিপলু বলেন, গত ৫ আগস্টের আগে যারা দলের দুর্দিনে মাঠে ছিলেন তাদের ব্যাপারে দল ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান খুব পজিটিভ। আমি ছাত্রদল ও তৃণমূল থেকে উঠে আসা নেতা। এখন জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক। গত ১৬ বছর হামলা-মামলা, জেল-জুলুম উপেক্ষা করেই বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয় রয়েছি। আর তরুণ নেতা হিসেবে আমিও আশাবাদী মনোনয়ন পাওয়ার বিষয়ে। তবে দল যাকে ধানের শীষ প্রতীক দেবে, আমি তার হয়েই কাজ করবো।
জেলা যুবদলের সভাপতি শরিফ উর জামান সিজার বলেন, ৫ আগস্টের পর অনেকে মাঠে নেমেছেন। কিন্তু আমি দলের দুর্দিন থেকেই মাঠে আছি। বার বার হামলা-মামলার শিকার হয়েছি। আমাকে ফ্যাসিস্ট হাসিনার গুন্ডাবাহিনী বার বার মেরে ফেলার চেষ্টা করেছে। আল্লাহর রহমতে এখনো বেঁচে আছি। দল যদি আমাকে ধানের শীষ প্রতীক দেয় আমি এ আসন দলকে উপহার দিতে পারবো।
এ বিষয়ে বক্তব্য নিতে মাহমুদ হাসান খান বাবুর মোবাইল নম্বরে বার বার কল করা হলেও তিনি কোনো সাড়া দেননি।
বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আতিকুল হক মিথুনেরও কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
ইঞ্জিনিয়ার টিপু তরফদার বলেন, দল কাকে মনোনয়ন দেবে সেটা দল সিদ্ধান্ত নেবে। এ বিষয়ে আপনি জেলা বিএনপির সভাপতি বাবু খানের সাথে কথা বলতে পারেন।
এফএ/জেআইএম