ময়মনসিংহে বিক্রি বেড়েছে নিষিদ্ধ সাকার ফিশের
ময়মনসিংহের স্থানীয় বাজারগুলোতে বিক্রি বেড়েছে রাক্ষুসে মাছ সাকার ফিশের
ময়মনসিংহের স্থানীয় বাজারগুলোতে হরহামেশাই পাওয়া যাচ্ছে রাক্ষুসে মাছ ‘সাকার ফিশ’। ক্রেতা চাহিদা থাকায় মাছটি বিক্রিও হচ্ছে দেদারসে। এতে বিক্রেতারা যেমন উৎসাহিত হচ্ছেন, তেমনই বাড়ছে মাছটির সরবরাহও। এই পরিস্থিতিতে মাছটির অবাধ বিক্রি এবং এর বংশবৃদ্ধি মৎস্য চাষিদের জন্য বড় দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। উদ্বেগ প্রকাশ করছেন মৎস্য বিজ্ঞানীরাও।
ময়মনসিংহের শম্ভুগঞ্জ বাজারে প্রায়ই এই ‘সাকার ফিশ’ দেখা যাচ্ছে। মাছ ব্যবসায়ীরা জানান, পাইকারি মাছের সঙ্গে অনিচ্ছাকৃতভাবে এই মাছগুলো চলে আসছে। বাজারে অনেকে এটিকে ঔষধি গুণসম্পন্ন মনে করে অথবা অ্যাকুয়ারিয়ামের জন্য ৫০ টাকা পিস দরে কিনে নিচ্ছেন। ফলে বিক্রেতারাও এটি বিক্রিতে উৎসাহ পাচ্ছেন।
স্থানীয় মাছ ব্যবসায়ী আজিজুল হক জাগো নিউজকে বলেন, সম্প্রতি মাঝে মধ্যেই পাইকাররা অন্যান্য মাছের সঙ্গে সাকার ফিশও পাচ্ছেন। পাইকারিভাবে বিভিন্ন মাছ কেনার সময় এই মাছ আমাদের কাছে চলে আসছে। মাছটি অনেকে ঔষধি গুণাগুণসম্পন্ন মনে করে কিনে নেন। আবার কেউ কেউ পুকুরে ছাড়ছেন বা অ্যাকুয়ারিয়ামে রেখে দিচ্ছেন।
তবে ২০২৩ সালের ১১ জানুয়ারি মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় গেজেট প্রকাশের মাধ্যমে আইনগতভাবে এই মাছটি আমদানি, প্রজনন, চাষ, পরিবহন, বিক্রি ও সংরক্ষণে নিষেধাজ্ঞা জারি করে।
সদর উপজেলার সফল মৎস্য চাষি ওয়াকিল মাহমুদ জানান, সম্প্রতি তিনি তার একটি পুকুর থেকে মাছ তুলতে গিয়ে দুটি সাকার ফিশ পেয়েছেন। তিনি ধারণা করছেন, গত বছর বন্যার সময় পুকুরের পাড় ভেঙে যাওয়ার কারণে মাছগুলো প্রবেশ করেছে। তবে এই মাছের বিস্তার বাড়লে মৎস্যখাত চরম ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএফআরআই) সূত্রে জানা যায়, সাকার ফিশ জলাশয়ের আগাছা, জলজ পোকামাকড় এবং বিভিন্ন ধরনের ছোট দেশীয় মাছের ডিম ও রেণু খেয়ে সাবাড় করে দেয়। এটি দেশীয় মাছের সঙ্গে অসম প্রতিযোগিতা তৈরি করে জীববৈচিত্র্য ধ্বংস করছে। ময়মনসিংহ জেলা, যা দেশের মোট মৎস্য উৎপাদনের ১২ শতাংশ জোগান দেয়, সেখানে এই মাছ ছড়িয়ে পড়া একটি বড় উদ্বেগের কারণ।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন বলেন, সাকার ফিশের শরীর অনেক খসখসে ও ধারালো। এছাড়া পিঠের ওপরে ও দুই পাশে রয়েছে তিনটি বড় কাটার মতো পাখনা, এগুলোও ধারালো এবং মুখের মধ্যে রয়েছে ধারালো দাঁত। সাকার ফিশ অন্য মাছের সঙ্গে লড়াই করলে সেগুলোর শরীরে সহজেই ক্ষত তৈরি হয় এবং অন্য মাছের ডিমসহ রেণু খেয়ে ফেলে।
বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিএফআরআই) জ্যেষ্ঠ বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মশিউর রহমান বলেন, মাছটির আসল নাম সাকার মাউথ ক্যাটফিশ। দেশীয় প্রজাতির মাছকে হুমকির মুখ থেকে বাঁচাতে সব সাকার ফিশ দ্রুত নিধন করাসহ জনগণকেও সচেতন করা প্রয়োজন।
এ বিষয়ে বিএফআরআইয়ের মহাপরিচালক ড. অনুরাধা ভদ্র বলেন, সাকার মাছের সঙ্গে স্বল্পায়ু, তৃণভোজী, খরাকাতর দেশীয় মাছের অসম প্রতিযোগিতা হয় বলে দেশীয় মাছের উৎপাদন ব্যাহত হয় এবং জীববৈচিত্র্য ধ্বংসসহ নানা ক্ষতি হয়। সবচেয়ে বেশি হুমকির মুখে পড়ে দেশীয় ছোট মাছ। কোথাও মাছটি পাওয়া গেলে তাৎক্ষণিক মেরে ফেলতে হবে।
কামরুজ্জামান মিন্টু/কেএইচকে/জেআইএম