অব্যবস্থাপনায় ও অবকাঠামো সংকটে ধুঁকছে ঠাকুরগাঁও বিসিক
অব্যবস্থাপনায় ও অবকাঠামো সংকটে ঠাকুরগাঁও বিসিক শিল্প নগরীর বেহাল দশা। ছবি: জাগো নিউজ
স্থানীয় শিল্পকে প্রসারিত করার লক্ষ্য নিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ঠাকুরগাঁও বিসিক শিল্প নগরী। তবে প্রতিষ্ঠার দীর্ঘ তিন দশক পেরিয়ে গেলেও মেলেনি প্রত্যাশিত কোনো সাফল্য। অব্যবস্থাপনা, ভাঙা রাস্তা, অচল ড্রেনেজ আর জমে থাকা নোংরা পানিতে বর্তমানে শিল্পাঞ্চলটি পরিণত হয়েছে মশা-মাছির আখড়ায়। এতে শ্রমিকরা যেমন অসুস্থ হচ্ছেন, তেমনি অবকাঠামোগত সংকটের কারণে মুখ থুবড়ে পড়েছে এখানকার উৎপাদন ব্যবস্থাও। শিল্প নগরীটির এমন দুরবস্থা নিয়ে চরম উদ্বেগ জানিয়েছেন শ্রমিক ও উদ্যোক্তারা।
বিসিক সূত্রে জানা যায়, ১৯৮৭ সালে ১৫ একর জায়গাজুড়ে ১০৫টি প্লট নিয়ে যাত্রা শুরু হয় গোবিন্দনগরের এই বিসিক শিল্প নগরী। বর্তমানে এর মধ্যে মাত্র ৫৩টি প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যার ৪৯টি উৎপাদনে সক্রিয়। তবে সক্রিয় প্রতিষ্ঠানগুলোর অবস্থাও নাজুক।

শিল্প মালিকেরা বলছেন, এখানকার রাস্তাঘাটগুলো ভাঙাচোরা এবং কার্যকর পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা নেই। অচল ড্রেনগুলোর কারণে জমে থাকা নোংরা পানিতে মশা-মাছির উপদ্রব বেড়েছে, যা শ্রমিকদের চরম স্বাস্থ্যঝুঁকিতে ফেলছে। অধিকাংশ প্লটই এখন পরিত্যক্ত পড়ে আছে। শিল্পাঞ্চলটি বখাটে ও মাদকসেবীদের আড্ডাখানায় পরিণত হওয়ায় চুরি-ছিনতাইয়ের ঘটনাও ঘটছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশেই তৈরি হচ্ছে বিভিন্ন বেকারির খাবার। পাশাপাশি স্তূপ করে রাখা হয়েছে পরিত্যক্ত প্লাস্টিক। সেই প্লাস্টিক পুনর্ব্যবহার করে তৈরি হচ্ছে পাই ও দড়ি। আবার রাস্তার ধারে পোড়ানো হচ্ছে বর্জ্য। এতে শ্রমিকসহ আশপাশের মানুষের স্বাস্থ্যঝুঁকি যেমন বাড়ছে, তেমনি পরিবেশও মারাত্মকভাবে দূষিত হচ্ছে।

পঞ্চগড় থেকে আসা সেখানকার সেলাই শ্রমিক অবিনাশ বলেন, এখানকার রাস্তাঘাট আর ড্রেনের অবস্থা এতটাই খারাপ যা বলার মতো নয়। একটু বৃষ্টিতেই রাস্তায় পানি জমে যায়। সেই পানিতে মশা-মাছির উপদ্রব বেড়ে যায়। এতে চলাফেরা করা কঠিন হয়ে পড়ে এবং আমরা স্বাস্থ্যঝুঁকিতে ভুগছি।
আরও পড়ুন
৩ বছরে প্লট বরাদ্দ ২৩৪, উৎপাদনে মাত্র একটি
আগ্রহ নেই উদ্যোক্তাদের, রাজশাহী বিসিক-২ যেন কাশবন
উদ্যোক্তা সংকটে ধুঁকছে লালমনিরহাটের বিসিক
খাদেমুল ইসলাম নামে আরেক শ্রমিক বলেন, এখানকার রাস্তা দিয়ে অটোরিকশাও প্রবেশ কঠিন হয়ে পড়েছে। ভাঙা রাস্তার কারণে কিছু দিন আগে একটি পাটবোঝাই ট্রাক উল্টে গিয়েছিল। প্রায়ই এমন দুর্ঘটনা ঘটে। মালিকপক্ষ থেকে বিসিক কর্মকর্তাদের বারবার বলার পরও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।
স্থানীয় বাসিন্দা সোহেল রানা বলেন, যেখানে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে খাদ্যসামগ্রী ও রাসায়নিক কারখানা পরিচালিত হয় এবং ড্রেনেজ ব্যবস্থার এমন দুরবস্থা থাকে, সেখানে কেউ বিনিয়োগ করতে আগ্রহী হবেন না। তিনি স্বাস্থ্যসম্মত ও পরিকল্পিতভাবে শিল্প নগরীকে গড়ে তোলার উপর জোর দেন।
‘অনিক ফার্নিচার’ নামের একটি প্রতিষ্ঠানের মালিক মো. আক্তার হোসেন অভিযোগ করেন, অনেক প্রতিষ্ঠান বরাদ্দ নিয়েও উৎপাদনে আসেনি এবং কেউ কেউ নিয়ম না মেনেই উৎপাদন চালাচ্ছেন। তিনি প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, সরকারি সহায়তা, আধুনিক অবকাঠামো ও উদ্যোক্তাদের জন্য সুবিধা নিশ্চিত করা গেলে ঠাকুরগাঁও বিসিক শিল্প নগরী আবারও প্রাণ ফিরে পেতে পারে। না হলে একসময় এটি পুরোপুরি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হবে।
ঠাকুরগাঁও বিসিক এর জেলা উপ-ব্যবস্থাপক মো. হাফিজুর রহমান বলেন, নীতিমালা অনুযায়ী শিল্প প্রতিষ্ঠান পরিচালনার জন্য মালিকদের বারবার সতর্ক করা হচ্ছে। এর আগে রাস্তা ও ড্রেনেজ ব্যবস্থা তেমন উন্নয়ন করা সম্ভব হয়নি। তবে বর্তমানে উন্নয়নের জন্য বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। বরাদ্দ পেলেই কাজ শুরু হবে। পাশাপাশি বর্জ্য অপসারণের জন্য পৌরসভার সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে। অচিরেই একটি সুন্দর ও উৎপাদনমুখী শিল্প নগরী গড়ে উঠবে বলে প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন তিনি।
তানভীর হাসান তানু/কেএইচকে/জিকেএস