দৌলতখান উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স
আড়াই লাখ মানুষের সেবায় চিকিৎসক দুজন
চিকিৎসাসেবা পেতে রোগীদের দীর্ঘলাইন/ছবি-জাগো নিউজ
চিকিৎসক ও নার্স সংকটে চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন ভোলার দৌলতখান উপজেলার বাসিন্দারা। হাসপাতালের বেডে ২-৩ দিন ভর্তি থাকলেও অনেক সময় মেলে না চিকিৎসা। এমনকী নেই বিশেষজ্ঞ কোনো চিকিৎসক। কয়েকটি বাদে অন্যান্য পরীক্ষাও এখানে করা হয় না। ফলে চিকিৎসা নিতে এসে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন রোগীরা।
উপজেলাবাসীর চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে ১৯৬৮ সালের দিকে স্থাপিত হয় দৌলতখান উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। বর্তমানে এর শয্যা সংখ্যা ৫০টি। প্রায় আড়াই লাখ মানুষের চিকিৎসাসেবার ভরসা দৌলতখান উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। কিন্তু বর্তমান চিকিৎসা ও নার্স সংকটে চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন রোগীরা। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে ১৯ জন চিকিৎসকের পদ থাকলেও কর্মরত মাত্র দুজন। মেডিকেল অফিসার ও উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তাসহ মোট চিকিৎসক তিনজন। এরমধ্যে একজন আসেন পার্শ্ববর্তী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে। ৩৪ জনের জায়গায় নার্স রয়েছেন মাত্র ১৩ জন। শুধু তাই নয়, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে নেই কোনো বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক।
মালা বেগম নামের একজন রোগীর স্বজন জানান, তার আট মাসের সন্তান জ্বর ও ঠান্ডায় আক্রান্ত হওয়ায় দৌলতখান উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসেন। কিন্তু এখানে কোনো শিশু বিশেষজ্ঞ নেই। মেডিকেল অফিসার আছে, তাকে দেখিয়েছেন। তিনি ওষুধ লিখে দিয়েছেন। এতে ভালো না হলে ভোলা সদর গিয়ে শিশু বিশেষজ্ঞ দেখাতে হবে।

ফাতেমা বেগম নামের আরেকজন বলেন, ‘তিন দিন আগে নাতিকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ডাক্তার দেখাইছি। শিশু ডাক্তার নাই, তাই যারা আছে তাদের দেখাইয়া ঔষধ খাওয়াছি। কিন্তু এখনো ভালো হয়নি। তাই আবারও নিয়ে আসছি। এখনো যদি ভালো না হয়, তাহলে ভোলায় গিয়ে বড় ডাক্তার দেখাবো।’
ছেলে টাইফয়েড জ্বরে আক্রান্ত হওয়ায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করিয়েছেন মিনারা বেগম। গত ছয় দিন ধরে তিনি ছেলেকে নিয়ে এখানে রয়েছেন। ছয় দিনের মধ্যে দুটি বেডে চিকিৎসক এসে দেখে গেছেন। বাকি চার দিন চিকিৎসকের দেখা পাননি।
মিনারা বেগম বলেন, ‘এখানে ডাক্তার বেডে রোগী দেখতে আসে না। জরুরি কিছু হলে নিচে গিয়ে দেখাতে হয়।’
শফিক নামের একজন রোগী জানান, তিনি দুদিন আগে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হয়েছেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো চিকিৎসক বেডে এসে তাকে দেখেননি। অথচ এখানে নাকি ২-৩ জন চিকিৎসক আছেন।
ক্ষোভ প্রকাশ করে শফিক বলেন, ‘ভর্তি হলেও রোগীরা চিকিৎসাসেবা পাচ্ছেন না। নার্সও ঠিকমতো আসেন না। যে কারণে বাড়ির মতই রোগীরা পড়ে আছেন।’

রোগী কহিনুর বেগম জানান, দৌলতখান উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এক্স-রে করানো হয় না। তাই বাধ্য হয়ে বাইরে গিয়ে বেশি টাকা দিয়ে এক্স-রে করতে হয়।
কয়েকটি রক্তের পরীক্ষা ছাড়া আর কিছু হয় না বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন রোগী জাহাঙ্গীর মাঝি। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমাদের সব বাইরে গিয়ে করতে হয়। আমরা গরিব মানুষ, আমাদের পক্ষে এত টাকা খরচ করে বাইরে পরীক্ষা করা সম্ভব হয় না। ডাক্তার আমাকে তিনটি পরীক্ষা দিয়েছে। টাকার অভাবে একটা করছি।’
কথা হয় দৌলতখান উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিতে আসা নাজমা বেগম ও ফারজানা বেগমের সঙ্গে। তারা বলেন, ‘এখানে কানের কোনো ডাক্তার নেই। ফলে ভোলা সদরে গিয়ে ডাক্তার দেখাতে হবে। এতে অনেক টাকা খরচ হবে। এখানে থাকলেতো এত টাকা খরচ হতো না।’
এ বিষয়ে ভোলা সিভিল সার্জন ডা. মো. মনিরুল ইসলাম বলেন, চিকিৎসক সংকট দূর করতে আমরা চেষ্টা করছি। আশা করি, সামনের মাসে এই সংকট কেটে যাবে। জনবল সংকটের কারণে এক্স-রেসহ অন্যান্য পরীক্ষা করানো হচ্ছে না। এই বিষয়টিও সমাধানের চেষ্টা চলছে।
এসআর/জেআইএম/এফএ