ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

দেবী দুর্গাকে বিসর্জন, কক্সবাজার সৈকতে মানুষের ঢল

জেলা প্রতিনিধি | কক্সবাজার | প্রকাশিত: ০৯:৫৯ পিএম, ০২ অক্টোবর ২০২৫

বৃষ্টি ও চোখের জল একাকার করে দেবী দুর্গাকে কক্সবাজার সৈকতে বিসর্জন দিলেন ভক্তরা। উৎসবমুখর পরিবেশে দেবীকে বিদায় জানাতে সম্প্রীতির মিলন বসে বেলাভূমিতে। সনাতনীদের বাৎসরিক এ ধর্মীয় উৎসবের সমাপ্তিতে প্রতিমা বিসর্জন পরিণত হয়েছিল একটি সার্বজনীন উৎসবে।

সনাতন ধর্মাবলম্বীদের পাশাপাশি অন্যান্য ধর্মের মানুষও যোগ দেন এ উৎসবে। লাখো মানুষের সমাবেশ যেন সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির মিলনমেলায় পরিণত হয়। কয়েকদিনে ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতা শেষে বৃহস্পতিবার (২ অক্টোবর) সন্ধ্যার আগেই সব প্রতিমা সমুদ্রের লোনাজলে বিসর্জন দেওয়া হয়।

বৈরী আবহাওয়ায় ভোর থেকেই বৃষ্টি হচ্ছিল। বৃষ্টির মধ্যেই দুপুর আড়াইটা থেকেই কক্সবাজার জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে প্রতিমা নিয়ে আসা শুরু হয়। যা বিকেল ৫টা পর্যন্ত অব্যাহত ছিল। প্রতিমার সঙ্গে ঢাক-ঢোলের তালে তালে, রং মেখে, নাচ-গান করতে করতে অংশ নেন হাজার হাজার সনাতন ধর্মাবলম্বী। সনাতনীদের প্রধান উৎসব দুর্গাপূজার শেষ আনুষ্ঠানিকতায় অতীতের মতো সাগরপাড়ের যেদিকে চোখ গেছে শুধু মানুষ আর মানুষ।

কক্সবাজার সদর উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি অ্যাডভোকেট বাপ্পী শর্মা বলেন, নব্বই দশক থেকে প্রতিবছর বিজয়া দশমীতে কক্সবাজার সৈকতে বিপুল মানুষের সমাবেশ ঘটে। করোনাকালীন কয়েক বছর সবকিছু স্তব্ধ ছিল। কিন্তু পুরোনো সময়ের প্রাণচাঞ্চল্য আবার ফিরে এসেছে। সৈকতের লাবণী পয়েন্ট থেকে দক্ষিণে-উত্তরে কয়েক কিলোমিটার সৈকত ছিল লোকে লোকারণ্য। উপস্থিতির মাঝে সনাতন ধর্মাবলম্বীর চেয়ে অন্য ধর্মের মানুষই ছিলেন বেশি।

কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় সৈকতের মুক্তমঞ্চে জেলা পূজা উদযাপন কমিটি বিজয়া দশমীর বিসর্জন অনুষ্ঠানের আয়োজন হয়। জেলা পূজা উদযাপন কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি উদয় শংকর পাল মিঠুর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন জেলা প্রশাসক এম এ মান্নান।

বিশেষ অতিথি ছিলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা সাবেক এমপি লুৎফর রহমান কাজল, জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট শামীম আরা স্বপ্না, সাবেক এমপি আলমগীর ফরিদ, শহর জামায়াতের আমির আবদুল্লাহ আল ফারুক, ট্যুরিস্ট পুলিশের প্রধান অতিরিক্ত ডিআইজি আপেল মাহমুদ, র‌্যাব-১৫ অধিনায়ক লেফট্যানেন্ট কর্নেল কামরুল হাসান, পুলিশ সুপার সাইফুদ্দীন শাহীন, সাবেক মেয়র সরওয়ার কামাল, পৌর প্রশাসক ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) নিজাম উদ্দিন আহমেদ, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) মো. শাহিদুল আলম, সদরের ইউএনও নীলুফার ইয়াসমিন চৌধুরী, জেলা শ্রমিকদল সভাপতি রফিকুল ইসলাম প্রমুখ।

জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সদস্য সচিব স্বপন দাশের সঞ্চালনায় স্বাগত বক্তব্য দেন অর্থ সম্পাদক স্বপন গুহ।

সেনাবাহিনী, র‌্যাব, নৌবাহিনী, কোস্টগার্ড, পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস, লাইফগার্ড, আনসারের কয়েক স্তরের নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তায় এবারের প্রতিমা বিসর্জনে নতুন মাত্রা যোগ করেছিল সাগরপাড়ে। বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে পুরোহিতের বিসর্জন মন্ত্রপাঠের মাধ্যমে সাগরপাড়ে সাজানো মঞ্চের গানের তালে তালে দেবী দুর্গাকে সাগরে বিসর্জন দেন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা।

প্রতিমা বিসর্জনে আসা জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের নেতা বুলবুল তালুকদার বলেন, ‘দেবী দুর্গা বছরে একবারই আসেন। অল্পদিনেই তাকে বিদায় দিতে হয় বলে বিসর্জনটা যন্ত্রণা হিসেবে গণ্য হয়। আমাদের দাবি, দীর্ঘ সৈকতের কোনো এক অংশে নিরিবিলি পরিবেশে একটি মন্দির স্থাপনের জন্য জমির ব্যবস্থা করা হোক।’

কক্সবাজারের বাসিন্দা সাজু বড়ুয়া বলেন, বিজয়া দশমী একটি অসাম্প্র্রদায়িক উৎসব। এখানে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের চেয়ে মুসলমান ও অন্য ধর্মালম্বীরাই যোগ দেন বেশি। তাই সাগরপাড়ের প্রতিমা বিসর্জন বাঙালির একটি সম্প্রীতির উৎসব বলেই মনে হয়।

পুলিশ সুপার মো. সাইফুদ্দিন শাহীন জানান, সমুদ্র সৈকত এলাকায় নিরাপত্তার প্রয়োজনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নারী সদস্যদের সাধারণ পোশাকে মানুষের মাঝে মিশিয়ে দেওয়া হয়। যাতে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটানোর আগেই অপচেষ্টাকারীদের ধরে ফেলা যায়।

পূজা উদযাপন কমিটির সূত্রমতে, এবছর কক্সবাজার জেলায় ৩১৭টি পূজামণ্ডপে দুর্গোৎসব পালিত হয়েছে। এরমধ্যে প্রতিমা পূজা (মূর্তি পূজা) ১৫২টি ও ঘটপূজা ছিল ১৬৬টি। এগুলোর মধ্যে শুধু কক্সবাজার শহরেই ৩১টি মণ্ডপে দুর্গোৎসব হয়েছে।

সায়ীদ আলমগীর/এসআর/জেআইএম