গাইবান্ধা
একমাসেই ব্রহ্মপুত্রে বিলীন বসতবাড়িসহ ৫০ বিঘা জমি
ব্রহ্মপুত্র নদের তীব্র ভাঙনে ঘরবাড়ি হারিয়ে নিঃস্ব আমিরন বিবি
ব্রহ্মপুত্র নদের তীব্র ভাঙনে গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার উড়িয়া ইউনিয়নের রতনপুর গ্রাম এখন চরম ঝুঁকিতে। শুকনো মৌসুম শুরু হওয়ায় দ্রুত পানি নেমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নদের তীর ভেঙে যাচ্ছে। গত এক মাসে প্রায় ৫০ বিঘা আমন ধানের জমি এবং অন্তত ২০টি ঘরবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। হুমকির মুখে রয়েছে অর্ধ শতাধিক পরিবার, সরকারি-বেসরকারি স্থাপনা ও মসজিদ।
নদী ভাঙনের শিকার বৃদ্ধ আমিরন বিবি (৬০) ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে বসে দীর্ঘশ্বাস ফেলে সাংবাদিকদের কাছে আকুতি করে বলেন, ‘জমিজমা, ঘরবাড়ি নদিত গ্যাচে, হামরা তার খতিপুরণ চাইনে, নদী ভাঙন থাকি হামারঘরোক বাঁচাও বাবা।’ আমিরনের মতো অন্তত ১২ জন স্থানীয় বাসিন্দা একই মন্তব্য করেছেন।
সরেজমিনে রতনপুর গ্রাম ঘুরে নদীভাঙা মানুষের দুর্ভোগের চিত্র দেখা গেছে। কেউ ঘরবাড়ি ও আসবাবপত্র সরিয়ে নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন, কেউবা গাছ কেটে নিচ্ছেন। নদী ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্তরা এখন অন্যের বাড়িতে আশ্রয় নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
উপজেলার উড়িয়া ইউনিয়নের মধ্য রতনপুর গ্রামের কৃষক আবদুস সাত্তার (৭০) বললেন, গত একমাসে আমার আমনের দুই বিঘা আবাদি জমি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। ঘরবাড়ি হুমকির মুখে পড়েছে। যেভাবে প্রতিদিন ভাঙছে, এভাবে ভাঙতে থাকলে অল্পদিনের মধ্যে গোটা গ্রাম নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। কিন্তু ভাঙনরোধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।
একই গ্রামের কৃষক জামাত আলী (৩৫) বলেন, একমাসের ব্যবধানে আমার তিনবিঘা জমির আমন ধানগাছসহ নদীতে চলে গেছে। একদিকে প্রচণ্ড রোদ ও গরম, অন্যদিকে নদী ভাঙনের ভয়। আমরা খুব বিপদে আছি।
ওই গ্রামের গৃহিণী রুপালি বেগম (৪৮) নিজের ভাষায় বলেন, ‘নদী হামারঘরে সবকিছু কারি নিচে। এ্যাক বিগে জমি আচিলো, তাও ২৫ দিন আগোত নদীত চলি গেচে।’
এলাকাবাসী জানায়, বর্তমানে প্রতিদিন চার থেকে পাঁচ ফুট পরিমাণ এলাকা ভেঙে যাচ্ছে। ভাঙনরোধে ব্যবস্থা নিতে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে বারবার বলা হলেও তেমন কোনো উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না।
এ বিষয়ে গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী হাফিজুল হক বলেন, নদীতে পানি বৃদ্ধি ও কমে যাওয়ার সময় ভাঙন দেখা দেয়। স্থায়ী সমাধনের জন্য একটি প্রকল্পের সমীক্ষা করা হয়েছে। বরাদ্দ আসলে কাজ করা হবে। তবে এই মুহূর্তে রতনপুর গ্রামে ভাঙনরোধে হাতে কোনো কর্মসূচি নেই।
আনোয়ার আল শামীম/কেএইচকে/জিকেএস