কিশোরগঞ্জ-৪
আ’লীগের ঘাঁটিতে বিএনপির কোন্দল, সুবিধা পেতে পারে জামায়াত
ছবি: বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট ফজলুর রহমান, বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রহিম মোল্লা, সৈয়দ ফাইয়াজ হাসান বাবু ও জামায়াতের প্রার্থী অ্যাডভোকেট রোকন রেজা শেখ
* আবদুল হামিদের এই আসনকে বলা হয় আওয়ামী লীগের ঘাঁটি
* অ্যাডভোকেট ফজলুর রহমানকে নিয়ে বিভক্ত বিএনপি
* জামায়াতে ইসলামীসহ চারটি দলে একজন করে প্রার্থী
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে কিশোরগঞ্জ-৪ (ইটনা-মিঠামইন-অষ্টগ্রাম) আসনে রাজনৈতিক উত্তেজনা বিরাজ করছে। শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালানোর পর থেকেই এই আসনে বিএনপি, জামায়াতসহ কয়েকটি দল মাঠে সক্রিয়। এলাকায় সভা-সমাবেশ, সামাজিক অনুষ্ঠান এবং ব্যানার-পোস্টারে নিজেদের উপস্থিতি জানান দিচ্ছেন তারা। তবে বর্তমানে এই আসনে সবচেয়ে বেশি আলোচনায় বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট ফজলুর রহমান ও জামায়াত নেতা অ্যাডভোকেট রোকন রেজা শেখ।
বিএনপিতে প্রার্থীর ছড়াছড়ি
বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে রয়েছেন- বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট মো. ফজলুর রহমান, অবসরপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রহিম মোল্লা, বিএনপিপন্থি চিকিৎসকদের সংগঠন ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-ড্যাব নেতা ও সাবেক এমপি ফরহাদ আহমেদ কাঞ্চনের ছেলে অধ্যাপক ডা. ফেরদৌস আহমেদ লাকী, হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান কল্যাণ ফ্রন্টের কেন্দ্রীয় ভাইস প্রেসিডেন্ট সুরঞ্জন ঘোষ, জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আমিনুল ইসলাম রতন, বুয়েট ছাত্রদলের সাবেক সহসভাপতি প্রকৌশলী মো. নেছার উদ্দিন, সাবেক উপসচিব জহির উদ্দিন ভূইয়া, কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সহসভাপতি মো. হাফিজুল্লাহ হিরা, অষ্টগ্রাম উপজেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক ও তিনবারের নির্বাচিত অষ্টগ্রাম সদর ইউপি চেয়ারম্যান সৈয়দ ফাইয়াজ হাসান বাবু।
জামায়াতে ইসলামীসহ চার দলের একক প্রার্থী
বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় ছাত্র কল্যাণ সম্পাদক ও জামায়াতের ঢাকা মহানগর উত্তর শাখার আইন বিভাগীয় সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট মো. রোকন রেজা শেখকে প্রার্থী ঘোষণা করেছে জামায়াতে ইসলামী।
এছাড়াও খেলাফত মজলিসের মাওলানা অলিউর রহমান, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের অ্যাডভোকেট বিল্লাল আহমেদ মজুমদার ও জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের প্রার্থী হয়েছেন শায়খ মাওলানা আনোয়ারুল ইসলাম।
আরও পড়ুন-
প্রবাসে বিএনপির ওসমান ফারুক, মাঠে সরব জামায়াতের জেহাদ খান
বিএনপির ঘাঁটিতে জয়ের স্বপ্ন জামায়াতের
জামায়াতসহ ৫ দলে একজন করে প্রার্থী, বিএনপিতে ছড়াছড়ি
বামদল ও এনসিপির কার্যক্রম এখনো দৃশ্যমান নয়। এই আসন থেকে এনসিপি দক্ষিণাঞ্চলের সংগঠক আকরাম হোসেন রাজ মনোনয়ন চাইতে পারেন।
অন্য আরেকটি সূত্র বলছে, ১৯৭০-এর দশকে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন অ্যাডভোকেট ফজলুর রহমান। ২০০৫ সালে তিনি বিএনপিতে যোগ দেন। তবে মনোনয়ন দৌড়ে এগিয়ে থাকা ফজলুর রহমানকে কেন্দ্র করে বিএনপিতে অভ্যন্তরীণ কোন্দল দেখা দিয়েছে। সম্প্রতি তার ‘মুজিবপ্রীতি’ এবং ধর্মনির্ভর রাজনৈতিক বিষয়ে আক্রমণাত্মক মন্তব্যের কারণে ধর্মভিত্তিক দল ও সাধারণ মানুষের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। বিএনপির সাধারণ নেতাকর্মীর মধ্যেও বিরূপ প্রভাব পড়েছে। ফজলুর রহমান বিএনপির মনোনয়ন পেলে কয়েকজন মনোনয়ন প্রত্যাশী বিদ্রোহ করে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করতে পারেন।
এ নিয়ে একটি গোপন সভাও হয়, যেখানে জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আমিনুল ইসলাম রতন বলেছিলেন, ফজলুর রহমানকে মনোনয়ন দিলে কেন্দ্রীয় বিএনপির অফিস ঘেরাও করা হবে।
তবে পরবর্তীতে ফজলুর রহমান ও আমিনুল ইসলাম রতন একই জনসভায় উপস্থিত ছিলেন। এই পরিস্থিতিতে মনে করা হচ্ছে, ফজলুর রহমান বিএনপির মনোনয়ন পেলে ওই আসন থেকে সুবিধা পেতে পারেন জামায়াতের প্রার্থী অ্যাডভোকেট রোকন রেজা শেখ। এছাড়াও এই আসনটিতে আওয়ামী লীগের প্রচুর ভোট রয়েছে। সেই ভোটের কারণে অনেক প্রার্থীর হিসাব-নিকাশ উলট-পালট হয়ে যেতে পারে।
পূর্বের নির্বাচনী ইতিহাস
১৯৭৩ সালে আওয়ামী লীগের আবদুল হামিদ, ১৯৭৯ সালে বিএনপির ফরহাদ আহমেদ কাঞ্চন, ১৯৮৬ সালে আওয়ামী লীগের আবদুল হামিদ, ১৯৮৮ সালে জাতীয় পার্টির আবদুল লতিফ ভূঁইয়া নির্বাচিত হন। এছাড়া ১৯৯১, ১৯৯৬, ২০০১ ও ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের আবদুল হামিদ, ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালে সাবেক এই রাষ্ট্রপতির ছেলে রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক জয়ী হয়েছিলেন।
ভোটার সংখ্যা
কিশোরগঞ্জ জেলার হাওরের তিন উপজেলা ইটনা-মিঠামইন-অষ্টগ্রামের ২৪টি ইউনিয়ন নিয়ে কিশোরগঞ্জ-৪ আসন গঠিত। এই আসনে মোট ভোটার ৩ লাখ ৮২ হাজার ২৫২। এরমধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৯৬ হাজার ৮৪৩, নারী ভোটার ১ লাখ ৮৫ হাজার ৪০৮ এবং তৃতীয় লিঙ্গ ১ জন।
মনোনয়ন প্রত্যাশীদের বক্তব্য
বিএনপির অ্যাডভোকেট ফজলুর রহমান বলেন, ‘গত নির্বাচনে ষড়যন্ত্র ও জুলুমের শিকার হয়েছি। এবার আশা করছি দল থেকে মনোনয়ন পেলে ধানের শীষে জয়ী হবো।’
ডা. ফেরদৌস আহমেদ লাকী বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় গণসংযোগ করেছি। পরিবার এবং আমার অবদানের ভিত্তিতেই মনোনয়ন চাই। তবে অন্য কাউকে দিলে তার পক্ষেও কাজ করব।’
সৈয়দ ফাইয়াজ হাসান বাবু বলেন, ‘১৯৯৫ সালে ছাত্রদলে রাজনীতি শুরু করি। বিভিন্ন প্রলোভন উপেক্ষা করে বিএনপিতে থেকেছি। ২০১৬ সালে উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচনে ফ্যাসিবাদের হস্তক্ষেপে ভোট বয়কট করতে হয়েছিল। আশা করি, দল তরুণদের সুযোগ দেবে।’
অপরদিকে জামায়াতের প্রার্থী রোকন রেজা শেখ বলেন, ‘জামায়াতে ইসলামী সবসময়ই মানুষের কল্যাণে কাজ করছে। নির্বাচন সামনে রেখে আমরা ওয়ার্ড, ইউনিয়ন ও উপজেলা পর্যায়ে সক্রিয়ভাবে প্রচারণা চালাচ্ছি। আশা করি জনগণ আমাদের সমর্থন করবে।’
এফএ/এমএমএআর/জেআইএম