বগুড়া-১
বিএনপির ঘাঁটি উদ্ধারে বাধা অনৈক্য, সুযোগ নিতে চায় জামায়াত
বগুড়া-১ (সারিয়াকান্দি-সোনাতলা) আসন একসময় ছিল ধানের শীষের দুর্গ। কিন্তু অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব, অনৈক্য আর এক ডজন মনোনয়নপ্রত্যাশীর ভিড়ে সেই ঘাঁটি উদ্ধার এখন অনিশ্চয়তার মুখে। আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে একক প্রার্থী ঘোষণা করে বিএনপির সেই ঘাঁটিতে হানা দিতে চায় বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী।
নির্বাচন ঘিরে সারিয়াকান্দি ও সোনাতলা উপজেলার গ্রামীণ জনপদগুলো এখন সরগরম। খেয়াঘাট, বাঁশের সাঁকো, দুর্গম চরাঞ্চল—সবখানে এখন লিফলেট, সালাম আর সম্ভাবনার ওয়াদা। চরবাসীর রাজনীতি এখন শুধু ভোট নয়, বেঁচে থাকার লড়াইও বটে।
নৌকার পালে ধানের শীষের রাজত্ব
১৯৭৯ সালের পর থেকে বগুড়া-১ আসন (সারিয়াকান্দি-সোনাতলা) মূলত বিএনপির নিয়ন্ত্রণে ছিল। নদীভাঙনপীড়িত এই এলাকায় বিএনপির তৃণমূল শক্তি, শহর থেকে গ্রাম পর্যন্ত গভীর নেটওয়ার্ক এবং ডা. হাবিবুর রহমান ও কাজী রফিকুল ইসলামের ব্যক্তিগত জনপ্রিয়তা মিলিয়ে তিনটি নির্বাচনে (১৯৯১, ১৯৯৬ ও ২০০১) ধানের শীষ টানা জয় পায়। ওইসময় চরাঞ্চল, হাট-বাজার ও গ্রামীণ ভোটকেন্দ্রগুলোতে বিএনপির ভোটের হার ছিল প্রায় অপ্রতিদ্বন্দ্বী পর্যায়ে। অনেক কেন্দ্রেই তারা দ্বিগুণ ব্যবধানে এগিয়ে থাকতেন। কিন্তু ২০০৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চিত্র পাল্টে যায়। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলের রাজনৈতিক পরিস্থিতি, স্থানীয় সাংগঠনিক দুর্বলতা এবং আওয়ামী লীগের তৎকালীন সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুল মান্নানের সক্রিয় প্রচারণা বিএনপির শক্ত ঘাঁটিতে ধাক্কা দেয়। মান্নান সেই নির্বাচনে দলীয় নৌকা প্রতীক নিয়ে বড় ব্যবধানে জয়ী হন।
বিশেষ করে চরাঞ্চল ও নতুন ভোটারদের মধ্যে প্রভাব ফেলেন। এরপর ২০১৪ সালের নির্বাচনে বিরোধী দলের বর্জনের কারণে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সংসদ সদস্য হন মান্নান। ২০১৮ সালের নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থী কাজী রফিকুল ইসলাম মাঠে নামলেও আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক শক্তি ও সরকারে থাকার সুবিধা নিয়ে মান্নান পুনরায় জয় পান। বেশ কয়েকবার বিএনপি নেতা শোকরানাও ভোটে অংশ নিয়ে পরাজিত হন।
২০১৯ সালে আবদুল মান্নানের মৃত্যুর পর অনুষ্ঠিত উপ-নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনয়ন দেয় তার স্ত্রী সাহাদারা মান্নানকে। তিনি সহানুভূতির ভোট ও স্বামীর রাজনৈতিক প্রভাব কাজে লাগিয়ে জয় পান। এই ধারাবাহিকতায় ধানের শীষের রাজত্বে নৌকার দখল এক দশকেরও বেশি সময় ধরে স্থায়ী হয়ে আছে। যদিও তৃণমূলে বিএনপির ভোট ব্যাংক পুরোপুরি ভেঙে যায়নি।
বিএনপিতে ঐক্যের ঘাটতি
আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে বগুড়া-১ আসনে বিএনপির প্রার্থী তালিকা এতটাই দীর্ঘ হয়ে গেছে যে, এখন অন্তত ১১ জন মনোনয়নপ্রত্যাশী মাঠে সক্রিয়। কারও ফোকাস ত্রাণ বিতরণ, কারও সামাজিক সেবা, আবার কেউ কেন্দ্রীয় পর্যায়ে যোগাযোগে ব্যস্ত। কিন্তু সাধারণ মানুষের মাঝে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে—এত প্রার্থী নিয়ে বিএনপি কি শেষ মুহূর্তে ঐক্য গড়তে পারবে? নাকি বিভক্তি ভোটের হিসাব পাল্টে দেবে?
বগুড়া-১ আসনে আলোচিত নাম মোশাররফ হোসেন চৌধুরী। জিয়া শিশু কিশোর সংগঠনের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ও জেলা বিএনপির নির্বাহী সদস্য এই নেতা তৃণমূলে কাজ করছেন।
স্থানীয়রা জানান, ঈদ-পূজা বা যে কোনো সংকটে মোশাররফ দুস্থদের আর্থিক সহায়তা, উপহার বিতরণ ও গণমানুষের কল্যাণমূলক কর্মসূচি চালিয়ে গেছেন। ১৯৯১ ও ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে তিনি বিএনপির মূল সমন্বয়ক হিসেবে কাজ করেছেন। সেসময় এলাকার বহু উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে সরাসরি জড়িত ছিলেন তিনি।
মোশাররফ হোসেন চৌধুরী জাগো নিউজকে বলেন, সোনাতলা-সারিয়াকান্দির বিএনপি-সমর্থিত সাবেক প্রায় সব চেয়ারম্যান তাকে সমর্থন দিচ্ছেন এবং মাঠে কাজ শুরু করেছেন। দলের দুঃসময়ে মামলা-হামলায় জর্জরিত নেতাকর্মীদের পাশে দাঁড়ানো, জামিনের ব্যবস্থা করা এবং সাংগঠনিক ঐক্য ধরে রাখায় সহযোগিতা করেছেন। এখন দল মনোনয়ন দিলে হারানো আসন পুনরুদ্ধারে সর্বাত্মক চেষ্টা করবেন।
অন্য সক্রিয় প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছেন আলহাজ মহিদুল ইসলাম রিপন। তিনি শিল্পপতি ও কল্যাণ ট্রাস্ট চেয়ারম্যান। গ্রামীণ উন্নয়ন ও সামাজিক সহায়তা কর্মসূচির মাধ্যমে জনপ্রিয়তা অর্জনের চেষ্টা করছেন এই প্রার্থী। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘প্রথমবারের মতো প্রার্থী হয়েছি। দল নিশ্চয়ই যোগ্যতার মাপকাঠিতে মূল্যায়ন করবে।’
তৌহিদুল ইসলাম টিটু কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক। ত্রাণ, শিক্ষা ও সেবামূলক কাজে নিয়মিত সক্রিয় রযেছেন। তিনি বলেন, ‘আমি এই মাটি ও মানুষের জন্য রাজনীতি করি। দলও সেটা জানে। আমি আমার কাজ চালিয়ে যেতে চাই।’
সোনাতলা উপজেলা বিএনপির সভাপতি এ কে এম আহসান তৈয়ব জাকির। ২০১৯ সালের উপ-নির্বাচনে মনোনয়ন পেলেও শেষ মুহূর্তে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেননি। এবার আবার মাঠে সক্রিয়। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘দুঃসময়ে দলের নেতাকর্মীদের পাশে ছিলাম। এখনো আছি। আমি আবারও মনোনয়ন চাইবো। আগের মতো আমাকেই মূল্যায়ন করা হবে বলে মনে করছি।’
সক্রিয় প্রচারণা চালাচ্ছেন সাবেক এমপি কাজী রফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘আমি নিজের যোগ্যতা ও দলের প্রতি আনুগত্য থাকার কারণেই পূর্বে মনোনয়ন পেয়ে এমপি হয়েছিলাম। এলাকার মানুষের জন্য অনেক কাজ করেছি, এখনো করে যাচ্ছি। তাই দল আমাকে মনোনয়ন দেবে বলে মনে করছি।’
সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মাসুদুর রহমান হিরু মন্ডল। তিনি তৃণমূলে বেশ প্রভাবশালী। ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ বাংলাদেশের (ড্যাব) নেতা ডা. শাহ মো. শাহজাহান আলী। তিনিও নিয়মিত গণসংযোগ করছেন।
সক্রিয় অন্যদের মধ্যে জেলা বিএনপির নেতা অ্যাডভোকেট রবিউল হোসেন রবি আইন পেশার সঙ্গে জড়িত। দলীয় মনোনয়ন পেতে চেষ্টার কমতি রাখছেন না জেলা বিএনপির নেতা শহীদুন নবী সালাম, নারী নেতৃত্বের পরিচিত মুখ সাবেক এমপি মমতাজ বেগম, অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা কর্নেল (অব.) জগলুল আহসান।
স্থানীয়দের ধারণা, বিভক্ত অবস্থায় নির্বাচন হলে বিএনপির ভোট ভাগ হয়ে যাবে। আর সেই সুযোগ নিতে পারেন প্রতিদ্বন্দ্বীরা। তৃণমূলের ভাষ্য, একতা ছাড়া এই আসন ফেরত আনা বিএনপির জন্য কঠিন।
জামায়াতের নির্ভরতা শাহাবুদ্দিন
বগুড়া-১ আসনে আগেভাগেই নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করেছে জামায়াতে ইসলামী। একক প্রার্থী হিসেবে অধ্যক্ষ শাহাবুদ্দিনকে মনোনয়ন দিয়েছে দলটি। রাজনীতিতে তিনি নতুন নন। দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয় পর্যায়ে ধর্মভিত্তিক সংগঠন, মাদরাসা ও সামাজিক উদ্যোগের মাধ্যমে জনসংযোগ গড়ে তুলেছেন। তার মূল শক্তি চরাঞ্চল ও প্রত্যন্ত ইউনিয়নগুলোতে, যেখানে মাদরাসাভিত্তিক ভোটার নেটওয়ার্ক এবং ধর্মীয় ভাবধারার প্রভাব এখনো শক্তিশালী।
আরও পড়ুন:
বিএনপির ঘাঁটিতে জয়ের স্বপ্ন জামায়াতের
জামায়াতসহ ৫ দলে একজন করে প্রার্থী, বিএনপিতে ছড়াছড়ি
বিএনপির মনোনয়ন চান চার নেতা, একক প্রার্থীতে উজ্জীবিত জামায়াত
শাহাবুদ্দিনের প্রচারণা কৌশল সরাসরি জনগণের কাছে পৌঁছানো। প্রতিদিন তিনি ইউনিয়ন ঘুরে জনসংযোগ করছেন। কখনো গ্রামীণ মসজিদে, কখনো হাট-বাজারে, আবার কখনো বাড়ি বাড়ি গিয়ে সমর্থন চাইছেন। স্থানীয় ধর্মীয় নেতাদের সঙ্গে তার সম্পর্ক দৃঢ়, যা ভোটের সময় বড় ভূমিকা রাখতে পারে। চরাঞ্চলের নদীপথ ও দুর্গম এলাকা পেরিয়ে তিনি এমন ভোটারদের কাছেও পৌঁছাচ্ছেন, যারা জাতীয় রাজনীতির চেয়ে স্থানীয় নেতৃত্ব ও ব্যক্তিগত সম্পর্ককে বেশি গুরুত্ব দেন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, বিএনপি যদি শেষ মুহূর্তে ঐক্যবদ্ধ হয়ে শক্ত প্রার্থী দাঁড় করাতে ব্যর্থ হয়, তবে জামায়াত এই পরিস্থিতি কাজে লাগিয়ে ভোট মেরুকরণে এগিয়ে যেতে পারে। বিশেষ করে তরুণ ধর্মভিত্তিক ভোটার এবং অতীতে জামায়াত সমর্থিত ভোটারদের সক্রিয় করতে শাহাবুদ্দিনের ব্যক্তিগত উদ্যোগ কার্যকর হতে পারে। বিএনপি যদি বিভক্ত থাকে, তাহলে দাঁড়িপাল্লা প্রতীক এখানে বড় চমক দেখাতে পারে।
জামায়াতের প্রার্থী অধ্যক্ষ শাহাবুদ্দিন জাগো নিউজকে বলেন, ‘এলাকার মাটি ও মানুষের জন্য কাজ করে যাচ্ছি। এই এলাকার মানুষের সমস্যা অনেক। নদীভাঙনকবলিত এলাকা হওয়ায় দরিদ্র মানুষের সংখ্যাও বেশি। তাই মানুষের ভাগ্য পরিবতন করতে হলে নির্বাচিত হয়ে সংসদে যেতে হবে। আমি সেই চেষ্টাই করে যাচ্ছি।’
প্রতিশ্রুতি বনাম বাস্তবতা
বগুড়া-১ আসনে বিএনপি ও জামায়াতের প্রার্থী ছাড়া অন্য কোনো দলের প্রার্থী এখনো মাঠে নামেননি। এ আসনে মোট ভোটার সংখ্যা তিন লাখ ৫৫ হাজার ১০৯ জন। এরমধ্যে পুরুষ ভোটার এক লাখ ৭৫ হাজার ৪৮৯ জন। নারী ভোটার এক লাখ ৭৯ হাজার ৬১৬ জন।
এখানে দলীয় প্রতীক যতটা গুরুত্বপূর্ণ, প্রার্থীর ব্যক্তিত্ব ও সম্পর্ক তার চেয়ে কম নয়। ঘনঘন নদীভাঙন, বন্যা, চর গঠন আর চর বিলীন এই চক্রে বসবাসকারী মানুষ ভোট দেন সেই নেতাকে, যিনি সংকটে হাজির থাকেন, ফোন ধরেন, ক্ষতিপূরণ আনতে দৌড়ান। কাগজে বড় প্রতিশ্রুতি নয়, চোখে দেখা কাজে তারা বিশ্বাস করেন।
প্রায় প্রতিবছরই ভাঙনে ঘরবাড়ি, ফসলি জমি হারায় মানুষ। ভোটারদের চাওয়া খুব সোজা—স্থায়ী প্রতিরক্ষা। শুধু মেরামতির টেন্ডার নয়, পরিকল্পিত রিভার ট্রেনিং, ঝুঁকিপূর্ণ পয়েন্টে শক্ত বাঁধ, ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসন এবং ক্ষতিপূরণের দ্রুততা। বর্ষার আগে জরুরি ব্লক বসানো হয় কি-না, কাজের মান কেমন—এসব তারা খেয়াল করেন।
বোরোতে সেচের খরচ, ডিজেল ও বিদ্যুতের অনিয়মিত সরবরাহ, মানসম্মত বীজ-সারের প্রাপ্যতা—এগুলো ভোটের ভাষা হয়ে দাঁড়িয়েছে। মাঠের কথা হলো, সেচে খরচ কমাতে হবে, বিদ্যুৎ ঠিক রাখতে হবে, কৃষিঋণ নিতে গেলে হয়রানি যেন না হয়।
বাঁশের সাঁকো, কাঁচা রাস্তা, ভাঙা ঘাট। স্কুল-হাট-হাসপাতালে যাওয়া কষ্টকর। ভোটারের চাহিদা নির্দিষ্ট পাকা রাস্তা, টেকসই ঘাট, বন্যার পর দ্রুত পুনর্গঠন। প্রতিশ্রুতি নয়, কাজের টাইমলাইন দেখতে চান তারা।
চরে স্কুল সরতে সরতে দূরে চলে যায়, শিক্ষকদের পদ থাকে শূন্য। কমিউনিটি ক্লিনিকে ওষুধ মেলে কি-না, প্রসূতি সেবা কেমন, নৌকা-অ্যাম্বুলেন্স আছে কি-না—এসব সরাসরি ভোটের ইস্যু। লোক দেখানো পরিদর্শন নয়, স্থায়ী সমাধান চান অভিভাবকরা।
বয়স্ক, বিধবা, ভিজিএফ-ভিজিডি কার্ড বণ্টনে দলীয় তালিকা না হয়ে ন্যায্যতা চান তারা। ত্রাণ এলে তথ্য আগে, ছবি পরে—এটাই মাঠের ভাষা। কার্ড করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি নয়, প্রক্রিয়া স্বচ্ছ রাখার অঙ্গীকার খোঁজেন মানুষ।
সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মোবারক আলী জাগো নিউজকে বলেন, ‘এমপি হওয়া নয়, ভোটারের সঙ্গে সম্পর্ক রাখা বড় কথা। ভোটাররা তাকেই ভোট দেবেন, যিনি তাদের স্বার্থ রক্ষা করবেন।’
চরের কৃষক মইন উদ্দিনের ভাষ্য, ‘সেচের খরচ আর বাঁধের কাজ ঠিক হলে আমরা দলের দিকে না তাকিয়ে সেই মানুষকেই ভোট দেবো, যে কাজটা করাতে পারে।’
শিক্ষিকা আফোরোজা বেগম বলেন, ‘স্কুলে শিক্ষক সমস্যা আর রাস্তায় ব্রিজ—এই দুইটার সমাধান কে দেবেন, আমরা তাকেই খুঁজছি।’
জটিল সমীকরণ
বগুড়া-১ আসনের রাজনীতির চালচিত্র এখন জটিল এক সমীকরণের মধ্যে আটকে আছে। স্থানীয় রাজনীতিবিদ ও বিশ্লেষকদের মতে, বিএনপি যদি ভেতরের বিভাজন কাটিয়ে একক ও শক্তিশালী প্রার্থী দিতে পারে, তবে জামায়াতের প্রার্থীর অবস্থান নড়বড়ে হয়ে যেতে পারে। কিন্তু বিএনপির ভেতরে সমন্বয়হীনতা ও দ্বিধা থেকে গেলে ভোট মেরুকরণে বড় চমক দেখাতে পারে দাঁড়িপাল্লা প্রতীক।
এই সমীকরণে আরেকটি অদৃশ্য উপাদান আওয়ামী লীগ। কার্যক্রম নিষিদ্ধ হওয়ায় দলটি সরাসরি প্রার্থী দিচ্ছে না, তবে তাদের সমর্থক ভোট কোন দিকে যাবে—এ নিয়ে এলাকায় চলছে নীরব গুঞ্জন ও দর-কষাকষির রাজনীতি। কেউ বলছেন, তারা নির্দিষ্ট এক প্রার্থীকে পরোক্ষ সমর্থন দেবেন। আবার কেউ মনে করছেন, এই ভোট শেষ মুহূর্তে ভাগ হয়ে যাবে।
মাঠে কাজ করা রাজনৈতিক কর্মীরা বলছেন, বগুড়া-১ এখন কেবল বিএনপি বনাম আওয়ামী লীগের ঐতিহাসিক লড়াইয়ের মঞ্চ নয়; এটি হয়ে উঠেছে ‘ঐক্য বনাম কৌশল’ পরীক্ষার কেন্দ্র। এখানে শুধু দলীয় শক্তি নয়, মাঠের বাস্তবতা, ভোটারের মনস্তত্ত্ব ও প্রার্থী বাছাইয়ের সূক্ষ্ম হিসাব-নিকাশই নির্ধারণ করবে চূড়ান্ত ফলাফল।
এলবি/এসআর/এমএমএআর/এমএস