ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

স্বাস্থ্যকেন্দ্রের করুণ দশা

আব্দুল্লাহ আল-মামুন | প্রকাশিত: ১০:০০ এএম, ০৬ অক্টোবর ২০২৫

ফেনীর দাগনভূঞা উপজেলার ইয়াকুবপুর ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের বেহাল দশায় দুর্ভোগে পড়েছে এলাকাবাসী। জরাজীর্ণ ভবন, ওষুধ সরবরাহ বন্ধ, জনবল সংকটসহ নানা সমস্যা নিয়ে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে স্বাস্থ্যসেবা। খসে পড়ছে ভবনের ছাদের পলেস্তারা, বেরিয়ে পড়েছে রড। এতে ভবনটি যেকোনো সময় ধসে পড়ে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা করছেন সেবাগ্রহীতা ও স্থানীয়রা।

জানা গেছে, ১৯৮০ সালে ইয়াকুবপুর ইউনিয়নের তৎকালীন চেয়ারম্যান মো. শাহাজাহান ৪১ শতক ভূমি দান করলে সেখানে স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও দুই ইউনিটের স্টাফ কোয়ার্টার নির্মাণ করা হয়। মাঝে দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হলেও ভবনটি তেমন সংস্কার করা হয়নি। বর্তমানে দরজা-জানালা ভেঙে ভবনটি ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। ভবনের ছাদের ওপর বটগাছসহ অন্যান্য পরগাছা জন্মে শেকড় ছাদের ভেতরে ঢুকে গেছে। এছাড়াও ভবনের ছাদ ও দেওয়ালে ফাটল সৃষ্টি হওয়ায় অল্প বৃষ্টি হলেই ভেতরে পানি ঢুকে নষ্ট হচ্ছে আসবাবপত্র। অনেক কক্ষে নেই দরজা-জানালা, কয়েকটিতে থাকলেও তা নড়বড়ে। ভবনটি দ্রুত সংস্কার বা নতুনভাবে নির্মাণ করে পর্যাপ্ত ওষুধ ও চিকিৎসা সেবা প্রদানের দাবি জানান এলাকাবাসী।

‘এটি অনেক পুরোনো স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র। এ ইউনিয়নের বহু রোগী এখানে সেবা নিতে আসেন। ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে, যেকোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। এছাড়া বেশ কয়েক মাস ধরে ওষুধ দেওয়া হচ্ছে না। জনবল সংকট ও ওষুধ সরবরাহ বন্ধ থাকায় রোগীর সংখ্যাও দিন দিন কমছে।’

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ইয়াকুবপুর ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার পদে ১ জন, পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা ১ জন, ফার্মাসিস্ট ১ জন, এমএলএসএস নিরাপত্তা প্রহরী ১ জন ও আয়া পদে ১ জনসহ মোট পাঁচজন জনবল কর্মরত থাকার কথা। কিন্তু বর্তমানে শুধু উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার পদে একজন কর্মরত রয়েছেন, অন্য পদগুলো শূন্য রয়েছে।

স্বাস্থ্যকেন্দ্রের করুণ দশা

স্থানীয় বাসিন্দা তোফায়েল আহমেদ বলেন, এটি অনেক পুরোনো স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র। এ ইউনিয়নের বহু রোগী এখানে সেবা নিতে আসেন। ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে, যেকোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। এছাড়া বেশ কয়েক মাস ধরে ওষুধ দেওয়া হচ্ছে না। জনবল সংকট ও ওষুধ সরবরাহ বন্ধ থাকায় রোগীর সংখ্যাও দিন দিন কমছে।

আরও পড়ুন
‘ডাক্তারও নাই ওষুধও নাই, হামরা কি বিনা চিকিৎসায় মরি যামো?’
ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোতে ওষুধ সরবরাহ নেই ৮ মাস
বিনামূল্যে চিকিৎসা নিতে এসে হয়রানির সাগরে পড়েন রোগীরা

সেবা নিতে আসা বদরেন নেছা নামে স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, যদি ওষুধ দেওয়া হতো তাহলে আগের মতো দূর-দূরান্ত থেকে রোগীরা আসতেন। ওষুধ পেলে আমরা অনেক উপকৃত হবো। সংশ্লিষ্টরা উদ্যোগ নিলে শিগগিরই এখানে নতুন ভবন করা সম্ভব।

‘ইতোমধ্যে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রটি পরিদর্শন করেছি। ভবনটি সংস্কার করা জরুরি হয়ে পড়েছে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। এজন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগে আবেদনও করা হয়েছে।’

ইয়াকুবপুর ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে দায়িত্বরত উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার আসমা ফেরদৌস বলেন, আমি সপ্তাহে ছয়দিন এ কেন্দ্রে নিয়মিত স্বাস্থ্যসেবা দিচ্ছি। ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে। বৃষ্টি হলে কক্ষগুলোতে পানি পড়ে। গত দশ মাস ধরে ওষুধ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। ওষুধ ছাড়া গর্ভবতী মায়েদের চেকআপ ও পরিবার পরিকল্পনা বিষয়ক সেবা দেওয়া হচ্ছে।

স্বাস্থ্যকেন্দ্রের করুণ দশা

তিনি আরও বলেন, এখানে পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা (এফডব্লিউভি) নেই, টয়লেটের অবস্থা ভালো নয়, বৈদ্যুতিক মোটর অকেজো, ফ্যানও নেই। সবমিলিয়ে নানা সমস্যা নিয়েই স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া হচ্ছে। আগে মাসে প্রায় ৪ শতাধিক মানুষ সেবা নিতে আসতেন, তা এখন কমে অর্ধেকে নেমেছে।

দাগনভূঞা উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) ডা. মো. নুরুল আফছার বলেন, ইতোমধ্যে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রটি পরিদর্শন করেছি। ভবনটি সংস্কার করা জরুরি হয়ে পড়েছে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। এজন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগে আবেদনও করা হয়েছে।

পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর ফেনীর উপ-পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী বলেন, বিষয়টি ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে অবহিত করা হয়েছে। বরাদ্দ পেলে কাজ করা হবে।

এমএন/জিকেএস