দুই মাস ধরে ডুবে আছে রাঙ্গামাটির ঝুলন্ত সেতু
কাপ্তাই হ্রদের স্বচ্ছ জলরাশির বুকে দাঁড়িয়ে থাকা পর্যটন শহর রাঙ্গামাটির প্রধান আকর্ষণ ঝুলন্ত সেতু। রাঙ্গামাটি বেড়াতে আসা পর্যটকদের অন্যতম গন্তব্য সেই ঝুলন্ত সেতু দুই মাস ধরে হ্রদের পানিতে ডুবে আছে। ফলে পর্যটকরা হতাশ হয়ে ফিরে যাচ্ছেন।
রাঙ্গামাটির পর্যটন করপোরেশন সূত্রে জানা যায়, কাপ্তাই হ্রদের পানি বেড়ে যাওয়ায় ৩০ জুলাই থেকে ঝুলন্ত সেতুটি ডুবে আছে। গতকাল (৭ অক্টোবর) বিকেল পর্যন্ত সেতুটি অন্তত তিন ফুট পানিতে ডুবে ছিল। গত বছরও প্রায় ৫৬ দিন ডুবে ছিল সেতুটি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত কয়েক বছর ধরে বর্ষা মৌসুমে দুই আড়াই মাস সেতুটি পানিতে ডুবে যায়। এ অবস্থা শুরু হয়েছে ২০১৭ সালে রাঙ্গামাটির ভয়াবহ পাহাড়ধসের পর থেকে। এখন এটি নিয়মে পরিণত হয়েছে। কাপ্তাই হ্রদের পানির সর্বোচ্চ ধারণক্ষমতা ১০৯ এমএসএল (মিনস সি লেভেল)। ১০৪ এমএসএলের একটু বেশি হলে ডুবে যায় সেতুটি। প্রতি বছর জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর মাসে হ্রদের পানি বাড়লে ডুবতে শুরু করে সেতু। এ বছর সেপ্টেম্বরে হ্রদের পানি ১০৮ এমএসএলের ওপরে পৌঁছে। এতে কাপ্তাই হ্রদের পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করায় চার দফা বাঁধের ১৬টি জলকপাট খুলে দেওয়া হয়েছিল।
মহিন খান নামে ঢাকার একজন ব্যবসায়ী পরিবার নিয়ে এখানে বেড়াতে এসেছেন। ইচ্ছা ছিল সেতুর ওপর দিয়ে হেঁটে পূর্ব পাড়ে যাবেন, সেখানকার পাহাড়ি পাড়াগুলো ঘুরে দেখবেন। সেতুর ওপর দাঁড়িয়ে ছবি তুলবেন। সেতুর কাছে এসে হতাশ হলেন তারা। তিনি বলেন, রাঙ্গামাটির নাম বললে ঝুলন্ত সেতুর বিষয়টি চলে আসে। রাঙ্গামাটির পরিচয় বহন করে এ ঝুলন্ত সেতু। কিন্তু এখানে এসে শুনি সেতুটি গত দুই মাস ধরে পানিতে ডুবে আছে।

স্থানীয় পর্যটক রাকিব হাসান বন্ধুরাসহ বেড়াতে এসেছেন এখানে। তিনি জানান, গত কয়েক বছর ধরে সেতুটি দুই থেকে তিন মাসের মতো পানিতে ডুবে থাকে। ফলে রাঙ্গামাটি বেড়াতে আসা পর্যটকরা হতাশ হয়ে ফিরে যান। কর্তৃপক্ষের এ বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়া দরকার। সেতুটি সংস্কার করে ওপরে তোলা দরকার অথবা একটি নতুন ঝুলন্ত সেতু তৈরি করা দরকার। এখানে নেপালের মতো বড় ঝুলন্ত সেতু তৈরি করা হলে পর্যটকদের আকর্ষণ বাড়বে।
পর্যটন করপোরেশন সূত্র জানায়, ১৯৮৬ সালে জেলা শহরের তবলছড়ি এলাকায় বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের হলিডে কমপ্লেক্সের পেছনে ৩৩৫ ফুট দীর্ঘ সেতুটি নির্মাণ করে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড। পরে এ সেতু পর্যটন করপোরেশনের কাছে হস্তান্তর করা হয়। দুই পাহাড়ের মাঝখানে দুটি পিলারের ওপর দাঁড়িয়ে থাকা দৃষ্টিনন্দন সেতুটি পর্যটন শহর রাঙ্গামাটির প্রতীক হিসেবে দেশ-বিদেশে পরিচিত। রাঙ্গামাটিতে প্রতি বছর পাঁচ লাখ পর্যটক বেড়াতে আসেন।
রাঙ্গামাটি পর্যটন করপোরেশনের ব্যবস্থাপক অলোক বিকাশ চাকমা জাগো নিউজকে বলেন, গত কয়েক বছর ধরে বর্ষা মৌসুমে সেতুটি পানিতে ডুবে যায়। নির্মাণের পর সেতুটি রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে এখন ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে। প্রতিবছর সেতুর পাটাতনসহ কিছু অংশ মেরামত করতে হয়। সেতুটি আরও আধুনিক ও নান্দনিক করে নির্মাণের জন্য পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড একটি প্রকল্প মন্ত্রণালয়ে জমা দিয়েছে।
আরমান খান/আরএইচ/এমএস